অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু বলেছেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব দৃঢ় করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশও তার হাত সম্প্রসারণ করেছে।’ দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে একই বার্তা দিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ও পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনও।
রবিবার (১৫ জানুয়ারি) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠকের পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হোন দুই কর্মকর্তা। তাদের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রীও যোগ দেন। এ সময় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসও উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আমাদের মধ্যে গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র আমাদের পুরোনো বন্ধু। আমরা সামনের ৫০ বছর কীভাবে সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি, সেটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘গত বছরের মতো এবারও আমাদের মধ্যে ঐকমত্য হয়েছে, আমরা একটি সময়সূচি ধরে চলমান মেকানিজমের মাধ্যমে লক্ষ্য অর্জনের জন্য সম্পর্ককে পরের ধাপে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করবো।’
ডোনাল্ড লু বলেন, ‘আমি এখানে এসেছি দুই দেশের বন্ধুত্বকে শক্তিশালী করতে; যখন বর্তমান বিশ্ব শান্তি ও ন্যায়বিচারের জন্য সংগ্রাম করে চলেছে।’
ডোনাল্ড লু গতকাল শনিবার (১৪ জানুয়ারি) ভারত থেকে ঢাকায় আসেন। গত বছরের মার্চে আন্ডার-সেক্রেটারি নুল্যান্ডের সফরসঙ্গী হিসেবে প্রথমবার ঢাকায় এসেছিলেন তিনি। এর আগে এই অঞ্চলে একাধিক দেশ সফর করলেও ঢাকায় এটিই তার প্রথম একক সফর।
নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আলোচনা
২০২১-এর ডিসেম্বরে এলিট ফোর্স র্যাব ও সংস্থাটির ছয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়ে ডোনাল্ড লু বলেন, ‘র্যাবের বিষয়ে ভালো আলোচনা হয়েছে। আপনারা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিবৃতি লক্ষ করলে দেখবেন বিচারবহির্ভূত হত্যার সংখ্যা কমানোর ক্ষেত্রে র্যাবের অসাধারণ অগ্রগতির কথা স্বীকার করা হয়েছে। আমরাও এই অগ্রগতির বিষয়টি স্বীকার করি। এটি একটি অসাধারণ কাজ। এতে প্রমাণ হয় যে মানবাধিকার সমুন্নত রেখে র্যাব আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও সন্ত্রাসবাদ দমনে ভালো কাজ করছে। ‘
জিএসপি নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি : যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পণ্য প্রবেশাধিকারের ক্ষেত্রে সুবিধা পাওয়ার বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়ে ডোনাল্ড লু বলেন, ‘জিএসপি পুনর্বহালে কংগ্রেস যদি কোনও সিদ্ধান্ত নেয়, তবে প্রথম তালিকায় বাংলাদেশ থাকবে।’
উল্লেখ্য, বর্তমানে কোনও দেশই যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপির অধীনে বাজার সুবিধা পায় না।
গঠনমূলক পরামর্শ নেবে বাংলাদেশ : যুক্তরাষ্ট্র যদি গঠনমূলক পরামর্শ দেয় তবে সেটি গ্রহণ করবে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মধ্যে যদি কোনও কিছু নিয়ে প্রশ্ন থাকে, তবে আমরা আলোচনা করে সমাধান করবো। যদি গঠনমূলক পরামর্শ আসে, আমরা অবশ্যই সেটি গ্রহণ করবো। এর নমুনা আমরা দেখিয়েছি। আমাদের যদি কোনও দুর্বলতা থাকে, সেটি আমরা দূর করবো।’
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরাও অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই। আমার দল আওয়ামী লীগ সবসময় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতায় এসেছে। ব্যালটের মাধ্যমে সরকারে এসেছে, বুলেটের মাধ্যমে নয়।’
‘আমাদের মধ্যে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে’, যোগ করেন মন্ত্রী।
ডোনাল্ড লু বলেছেন, ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে আমাদের মধ্যে সৎ আলোচনা হয়েছে। আমরা গণতন্ত্র ও মানবাধিকারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা যদি কোনও সমস্যা দেখি, তখন আমরা বিষয়টি উত্থাপন করি এবং আমরা পরামর্শ দিতে পারি। আমরা মত প্রকাশের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখায় বিশ্বাস করি এবং বাংলাদেশের মতো অংশীদারদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করি।‘
আইপিএস প্রসঙ্গ : ঢাকা ও ওয়াশিংটনের মধ্যে আইপিএস নিয়েও আলোচনা হয়েছে। পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে আমাদের চিন্তাভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
এ বিষয়ে ডোনাল্ড লু বলেন, ‘আইপিএস নিয়ে আমাদের চমৎকার আলোচনা হয়েছে। এটি কোনও ক্লাব নয়, বরং একটি কৌশল।’
Leave a Reply