অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রত্যাশা অনুযায়ী জয়ের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছেন ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীরা। গত শনিবার ওই রাজ্যের ২২ জেলার মধ্যে দার্জিলিং এবং কালিম্পং জেলায় দ্বিস্তরীয় ভোট (গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি) এবং বাকি ২০টি জেলায় ত্রিস্তরীয় (গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদ) ভোট গ্রহণ হয়।
ভোট নেওয়া হয় ৩৩১৭ টি গ্রাম পঞ্চায়েত (৬৩,২২৯ আসন), ৩৪১ টি পঞ্চায়েত সমিতি (৯৭৩০ আসন) এবং ২০ জেলা পরিষদে (৯২৮ আসন)। মঙ্গলবার ছিল ভোট গণনা। কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে সকাল ৮টা থেকে শুরু হয় গণনা। প্রথমে গ্রাম পঞ্চায়েতের আসনগুলোতে ভোট গণনা শুরু হয়, এরপর যথাক্রমে পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের আসনগুলোতে ভোট গণনা শুরু হয়।
পুরো রাজ্যে গ্রাম পঞ্চায়েতের ৬৩ হাজার ২২৯ আসনের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস ৪১ হাজার ৭১, বিজেপি ৮ হাজার ৮৬৬, বামফ্রন্ট ২ হাজার ৮৯৫, কংগ্রেস ২ হাজার ৪৪৫ এবং আইএসএফ ও অন্যরা ২ হাজার ২২২ আসনে জয় পেয়েছে।
রাজ্যের পঞ্চায়েত সমিতির ৯ হাজান ৭৩০ আসনের মধ্যে তৃণমূল ৪ হাজার ৯৩৮টিতে, বিজেপি ৫১১, বামফ্রন্ট ১২৫, কংগ্রেস ১০৫ এবং আইএসএফ ও অন্যরা ৪৬ আসনে জয় পেয়েছে।
অন্যদিকে ২০ জেলা পরিষদের ৯২৮ আসনের ৩৪৩টিতে তৃণমূল, ১৪টিতে বিজেপি, সিপিএম একটিতে, কংগ্রেস ২ এবং অন্যান্যরা একটিতে জয় পেয়েছে।
তবে মঙ্গলবার ফল ঘোষণা হওয়ার অনেক আগে থেকেই জেলায় জেলায় জয়ের আনন্দে মেতে ওঠে তৃণমূলের কর্মী ও সমর্থকরা। আতশবাজি ফাটানো থেকে শুরু করে কোথাও আবির খেলা, কোথাও মিষ্টি খাওয়ানো হয়। কোথাও আবার ফুটবল খেলতে দেখা গেছে দলের সমর্থকদের। সেই সঙ্গে চলে ‘খেলা হবে’ স্লোগান। জয়ের উৎসব পালনের দিক থেকে পিছিয়ে ছিল না বিরোধী দলের প্রার্থীরাও। তবে মঙ্গলবার ভোট গণনার দিনও রাজ্যের একাধিক জেলায় বিক্ষিপ্ত কিছু সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।
মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়া থানার রুকুনপুর হাই স্কুল মোড় সংলগ্ন এলাকায় ভোট গণনা কেন্দ্রে আসার পথে তৃণমূলের নারী প্রার্থী ও তার স্বামীকে রাস্তায় আটকে মারধর ও এজেন্ট কার্ড কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে সিপিআইএমের বিরুদ্ধে। তাদের গাড়িও ভাঙচুর করা হয়।
হুগলির জাঙ্গিপাড়া ভোট গণনা কেন্দ্রে ভোট লুটের প্রতিবাদে ফুরফুরা শরীফ তালতলা হাটে রাস্তা অবরোধ করে আইএসএফ। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কেশপুর কলেজের গণনা কেন্দ্রে বিরোধী বিজেপি কর্মী সমর্থকদের ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। গণনা কেন্দ্রে প্রবেশের আগেই তাদের মারধর করে জামা-কাপড় ছিড়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
উত্তর ২৪ পরগণা জেলার অশোকনগর বয়েজ সেকেন্ডারি স্কুলের গণনা কেন্দ্রে পরাজয়ের খবর মেনে নিতে না পেরে তৃণমূল প্রার্থীর এজেন্ট ব্যালট পেপার পুকুরের পানির মধ্যে ফেলে দেন। ওই জেলার বারাসাত ব্লক-২ নবীনচন্দ্র হাই স্কুলে ভোট গণনা কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীর সাথে আইএসএফ প্রার্থীর বচসা হয়। দীনবন্ধু মহাবিদ্যালয়ে বিজেপি এবং তৃণমূলের সংঘর্ষ বাঁধে। এতে তৃণমূল প্রার্থী জখম হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
তবে সব কিছুকে ছাপিয়ে সংবাদের শিরোনামে এসেছেন এক তৃণমুল কংগ্রেস প্রার্থী। সিপিআইএম প্রার্থীকে হারাতে ব্যালট পেপার চিবিয়ে খাওয়ার অভিযোগ ওঠেছে তৃণমূল প্রার্থী মহাদেব মাটির বিরুদ্ধে। এই ঘটনা ঘটেছে উত্তর ২৪ পরগণা জেলার হাবরা-২ নম্বর ব্লকের গণনা কেন্দ্রে। ভুরকুন্ডা পঞ্চায়েতের ৩১ নম্বর বুথের তৃণমূল প্রার্থী মহাদেব মাটি মাত্র ৪ ভোটে ওই বুথের সিপিআইএম প্রার্থী রবীন্দ্রনাথ মজুমদারের কাছে পরাজিত হন। কিন্তু সেই ফলাফল মেনে না নিতে পেরে গণনা চলাকালীন গণনা কেন্দ্রের ভেতর ঢুকে ওই তৃণমূল প্রার্থী বেশ কিছু ব্যালট পেপার ছিড়ে ফেলেন এবং কিছু চিবিয়ে খেয়ে ফেলেন বলে অভিযোগ ওঠে। যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি। তার দাবি তিনি ৫৬ ভোটে জয়লাভ করেছেন।
পুরো রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনে যখন তৃণমূল কংগ্রেসের জয়জয়কার ঠিক তখনই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর মামার বাড়ি এলাকায় দুটি বুথে ধরাশায়ী শাসক দল। বীরভূমের রামপুরহাট-১ নম্বর ব্লকের কুশুম্বা গ্রামের তিনটি আসনের মধ্যে দুটি আসনে জয়লাভ করেন বিজেপির দুই প্রার্থী। একটি আসনে জয়লাভ করেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী। এই পঞ্চায়েতের ৩১ নম্বর বুথে ভোট দেন মমতা ব্যানার্জির মামা অনিল মুখোপাধ্যায়ের পরিবার।
গ্রাম সংসদে জয়ী হয়েছেন বিজেপি প্রার্থী অর্চনা হাজরা। তার কাছে হেরে গেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী সাথী লেট। অপর দিকে এই গ্রামে ৩২ নম্বর বুথেও জয়ী হয়েছেন বিজেপির প্রার্থী গঙ্গাধর হাজরা। এই গ্রাম সংসদেও হেরে যান তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী গৌতম লেট। তবে ২৯ নম্বর গ্রাম সংসদে জয়ী হয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী আদিত্য দত্ত।
Leave a Reply