অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ভারত থেকে প্রত্যেক বছর প্রায় ১.৮০ লাখ ভারতীয় তাদের নাগরিকত্ব ছেড়ে বিদেশী হচ্ছেন। ২০২১-২০২২ সালে গতি খুব বৃদ্ধি পাওয়ায় দৈনিক গড়ে তা প্রায় ৫০০ জনে দাঁড়িয়েছে।
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার যখন প্রবাসী ভারতীয়দের সাথে সংযোগ স্থাপনের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছে, তখন এধরণের খবর প্রকাশ্যে এলো। এদের মধ্যে ৭ হাজার লোক রয়েছে যাদের মোট সম্পদের মূল্য ৮ কোটি টাকার বেশি। বাকিদের বেশিরভাগই ভাল বেতনভোগী পেশাদার। ২০১৮ সালে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৫৬১ জন, ২০১৯ সালে ১ লাখ ৪৪ হাজার ১৭ জন, ২০২০ সালে ৮৫ হাজার ২৫৬ জন, ২০২১ সালে ১ লাখ ৬৩ হাজার ৩৭০ জন এবং ২০২২ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ১ লাখ ৮৩ হাজার ৭৪১ জন ভারতীয় নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন। গত ১১ বছরে ১৬ লাখের বেশি মানুষ নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন। ২০২১-২০২২ সালে গতি খুব বৃদ্ধি পাওয়ায় দৈনিক তা প্রায় ৫০০ জনে দাঁড়িয়েছে।
ভারত ছেড়ে যাওয়া নাগরিকদের প্রথম পছন্দের দেশ হল আমেরিকা, এর পর কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার স্থান। প্রত্যেক বছর গড়ে ৫৫ হাজার ভারতীয় নাগরিকত্ব ত্যাগ করে আমেরিকার নাগরিক হচ্ছেন।
২০২০ সালের গ্লোবাল ওয়েলথ মাইগ্রেশন রিভিউ রিপোর্ট অনুসারে, বিশ্বজুড়ে উচ্চ সম্পদের ব্যক্তিদের নাগরিকত্ব ছেড়ে দেওয়ার প্রধান কারণ হল ক্রমবর্ধমান অপরাধের হার বা বাড়িতে ব্যবসার সুযোগের অভাব। বিদেশ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ এবং ‘জেএনইউ’-এর অধ্যাপক রাজন কুমার বলেন, ২০২২ সালে, ৪ লাখেরও বেশি লোক পড়াশোনা করতে বিদেশে গিয়েছিল। এ সময়ে তার পড়াশোনার খরচ ছিল প্রায় ২৭ মিলিয়ন ডলার। এত খরচ করে পড়াশুনা করা ছেলেমেয়েরা ভালো রিটার্নও আশা করবে যা তারা ভারতে পায় না। এমন পরিস্থিতিতে তারা বিদেশে থিতু হন। এতে ভারতের দুই ধরনের ক্ষতি হচ্ছে- প্রথমত, এত বড় অঙ্কের অর্থ পড়াশোনার নামে বিদেশে চলে যাচ্ছে এবং দ্বিতীয়ত, আমাদের ব্রেন ড্রেন আর ফেরত আসে না।
আর্থার ডব্লিউ হেলওয়েগ, যিনি আমেরিকায় বসতি স্থাপন করা ভারতীয়দের নিয়ে গভীরভাবে গবেষণা করেছেন, তার মতে, ভারত ছেড়ে যাওয়ার পেছনে অর্থই সবচেয়ে বড় কারণ। হেলওয়েগের মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা, চাকরি, বাচ্চাদের ক্যারিয়ার এবং অবসরের মতো বিষয়গুলো বিবেচনা করেই লোকেরা ভারত ছেড়ে যায়। ভারতে গড় শ্রম খরচ প্রতি ঘণ্টায় ১৭০ টাকা, ব্রিটেনে ৯৪৫ টাকা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৫৯৬ টাকা। এর পাশাপাশি এসব দেশে শ্রম আইন কঠোরভাবে অনুসরণ করা হয়। এ কারণে মানুষ এসব দেশে কাজ করতে বেশি পছন্দ করছে।
ভারতে কর্মসংস্থানের হার এমনিতেই খারাপ। এমতাবস্থায় ধনীদের ব্যবসা অন্যত্র চলে গেলে এখানে বেকারত্বের হার বাড়বে। এতে ভারতে ধনী-গরিবের ব্যবধান বাড়বে। ধনীরা ভারী কর এড়াতে দেশ ছেড়ে চলে যায়। এতে কর আদায় কমে যায় এবং দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অন্যদিকে সিঙ্গাপুর, হংকং, যুক্তরাজ্য, কোরিয়ায় কর ব্যবস্থা খুবই সহজ। এ কারণে মানুষ তাদের দেশ ছেড়ে এসব দেশে ব্যবসা করতে যায়।
গ্লোবাল পাসপোর্ট সূচক অনুসারে, ভারত বর্তমানে ১৯৯টি দেশের মধ্যে পাসপোর্ট র্যা ঙ্কিংয়ে ৭১ নম্বরে রয়েছে। ভারতীয় পাসপোর্ট দিয়ে, ভিসা ছাড়াই ৭১টি দেশে ভ্রমণ করা যায়। অন্যদিকে, আমেরিকা, ব্রিটেনের পাসপোর্টে ভিসা ছাড়াই ১৭৩টি দেশে ভ্রমণ করা যায়। একইভাবে কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার পাসপোর্টে ১৭২টি দেশ সফর করা যায়। এটা একটা বড় কারণ যে ভারতের নাগরিকত্ব ছেড়ে দিয়ে মানুষ আমেরিকা, কানাডার মতো দেশের নাগরিকত্ব নিচ্ছে।
নাগরিকত্ব ত্যাগকারী মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল ভারতে নাগরিকত্ব সংক্রান্ত নিয়ম। সংবিধান সংশোধনী নাগরিকত্ব আইন ১৯৫৫ অনুযায়ী, ভারতে দ্বৈত নাগরিকত্ব নেই। অর্থাৎ, যে ব্যক্তির ভারতের নাগরিকত্ব রয়েছে তিনি অন্য কোনো দেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার যোগ্য নন। এমতাবস্থায় যারা বিদেশে গেছেন, সেখানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং সেখানকার নাগরিকত্ব পেয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে ভারতে তার নাগরিকত্ব স্বয়ংক্রিয়ভাবে শেষ হয়ে যায়।
Leave a Reply