23 Nov 2024, 08:47 pm

যে দেশে ঘুষ নেয়ার শাস্তি চামড়া ছাড়িয়ে চেয়ার বানানো

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমাান্তবাণী ডেস্ক :  অপরাধ করলে তার জন্য শাস্তির বিষয়টি সেই রাজাদের শাসনকাল থেকেই চলে আসছে। কখনও অপরাধীদের দেশছাড়া হতে হত। কখনও বা রাজা মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দিতেন। কিন্তু প্রাচীন পারস্যের (বর্তমান ইরান) রাজারা মৃত্যুদণ্ডের নামে ভয়ংকর পন্থা অবলম্বন করতেন।

প্রাচীন পারস্যে তখন সাইরাস দ্য গ্রেটের রাজত্ব। তার শাসনকালে ছিল অদ্ভুত নিয়ম। কেউ অপরাধ করলে একবার নয়, তাকে তিনবার শাস্তি দেওয়া হত তখন। ইতিহাস বলছে, সাইরাসের প্রথম অথবা দ্বিতীয় স্ত্রী এক নপুংসককে ‘ট্রিপল ডেথ’ অর্থাৎ তিনবার মৃত্যুসম শাস্তির নির্দেশ দিয়েছিলেন।

রানির নির্দেশে প্রথমে ওই ব্যক্তির চোখ উপড়ে নেওয়া হয়। তারপর তার চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ করে তোলা হয়। সুস্থ করে তোলার পর তার শরীরের চামড়া পুরোপুরি তুলে ফেলা হয়। কিন্তু রানির নির্দেশ অনুযায়ী তিনবার শাস্তি দিতে হবে। তাই তৃতীয় বার তাকে শাস্তি দিতে ক্রুশবিদ্ধ করে মারা হয়।

দারিয়াসের সভায় সিসামনেস নামে এক বিচারক ছিলেন। কোনো কারণে ঘুষ নিয়েছিলেন সিসামনেস। খবর পাওয়ার পর বিচারকের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে যান দারিয়াস। পরবর্তী বিচারক হিসাবে যিনি নিযুক্ত হবেন তিনিও যেন একই ভুল না করেন তার জন্য সিসামনেসকে মর্মান্তিক শাস্তি দেন দারিয়াস।

গলা কেটে খুন করা হয় সিসামনেসকে। তারপর মৃতদেহের চামড়া ছাড়িয়ে তা দিয়ে একটি চেয়ার তৈরি করা হয়। মানুষের চামড়ার তৈরি সেই চেয়ারে দারিয়াস পরবর্তী বিচারককে বসার নির্দেশ দেন।

বিষয়টি আরও ভয়ংকর হয়ে ওঠে, যখন সিসামনেসের পুত্রকেই পরবর্তী বিচারক হিসাবে বেছে নেন রাজা। সিসামনেসের পুত্রকে প্রতিদিন ওই চেয়ারে বসেই কাজ করতে হত। শোনা যায়, পরবর্তী বিচারকেরা আর কোনো দিন ঘুষ নেননি।

আরও এক ভয়ংকর শাস্তি ছিল প্রাচীন পারস্যে। শাস্তি দেওয়ার জন্য অপরাধীদের ৭৫ ফুট গভীর একটি টাওয়ারের ভেতর ফেলে দেওয়া হত। সেই টাওয়ার ছাই দিয়ে ভরা থাকত। টাওয়ারের বাইরের দিকে লাগানো থাকত চাকা। চাকা ঘোরালে টাওয়ারের ভেতর ছাই উড়তে শুরু করত।

টাওয়ারের ভেতর অপরাধীকে ফেলে বাইরে থেকে চাকা ঘোরানো হত। ছাই উড়তে শুরু করলে তা অপরাধীর নাক এবং মুখের ভেতর ঢুকে যেত। ফলে শ্বাসরোধ হয়ে মারা যেতেন অপরাধী।

পারস্যের সম্রাট প্রথম শাপুরের ক্রীতদাস ছিলেন ভ্যালেরিয়ান। তিনি সবসময়ই ভ্যালেরিয়ানের হাত-পা চেন দিয়ে বেঁধে রাখতেন। ঘোড়ায় চড়ার সময় ভ্যালেরিয়ানের হাত এবং হাঁটুর উপর ভর দিয়ে উঠতেন রাজা। হঠাৎ শাপুরের মনবদল হলো। ভ্যালেরিয়ানকে প্রাণে মেরে ফেলতে চাইলেন তিনি।

যেমন ইচ্ছা তেমন কাজ। ভ্যালেরিয়ানের গলায় ফুটন্ত সোনা ঢেলে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন শোপার। তারপর মৃতদেহের ভেতর থেকে যাবতীয় প্রত্যঙ্গ বের করে তার বদলে খড় দিয়ে ভরাট করে দেওয়া হলো। রাজার নির্দেশে পারস্যের এক মন্দিরের সামনে বহুদিন ভ্যালেরিয়ানের দেহ ঝুলিয়ে রাখা ছিল।

পারস্যে চুরি বা ডাকাতি করলেও রেহাই মিলত না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অপরাধীর দেহ দুই টুকরো করে শাস্তি দিতেন রাজা। তবে তার পদ্ধতি ছিল ভিন্ন। দুই গাছের উপরের ডাল দড়ি দিয়ে বেঁধে দেওয়া হত। অপরাধীর পা-ও দুই দিকে বেঁধে দেওয়া হত ডালের সঙ্গে। গাছ দুটির ডাল যেখানে দড়ি দিয়ে বাঁধা।

এরপর সেই দড়ি কেটে দেওয়া হত। ফলে গাছের ডাল দুটি দুই দিকে সরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অপরাধীর দেহও দুই টুকরো হয়ে যেত। মৃত্যুর পরে অপরাধীর দেহের টুকরো দুটি রাস্তার মাঝখানে, যেখানে অপরাধ করা হয়েছিল, সেই জায়গায় ফেলে রাখা হত। রাজা ভাবতেন, রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় ওই টুকরোগুলো চোখে পড়লে আর কেউ মৃত্যুভয়ে চুরি করবে না।

কখনও আবার অপরাধীকে প্রাণে না মেরে তাদের নাক, কান এবং জিভ কেটে ফেলা হত। একটা চোখও উপড়ে নেওয়া হত কখনও। কিন্তু অপরাধীদের প্রাণে মারা হত না। অর্ধমৃত অবস্থায় প্রাসাদের সদর দরজার বাইরে তাদের চেন দিয়ে বেঁধে রাখা হত।

শাস্তি দেওয়ার জন্য কায়দা করে কাটা হত মোটা গাছের ডাল। তা অপরাধীদের নগ্ন শরীরে এমন ভাবে পরিয়ে দেওয়া হত যেন তার হাত, পা এবং মুখের অংশটুকু দেখা যায়। দেহের বাকি অংশটুকু থাকত গাছের ডালের ভেতরে। অপরাধীকে দিনের পর দিন বলপূর্বক খাওয়ানো হত মধু এবং দুধ।

এমনকি, দেহের অনাবৃত অংশে মধু মাখানো হত। মধুর আকর্ষণে মৌমাছি ঘিরে ফেলত অপরাধীর দেহের অনাবৃত অংশ। অপরাধীকেও সেই অসহ্য যন্ত্রণা দিনের পর দিন সহ্য করতে হত। প্রতিদিন অনবরত মধু এবং দুধ খাওয়ার ফলে ডায়রিয়া হয়ে যেত অপরাধীর। এভাবেই তিলে তিলে একদিন মারা যেত অপরাধী।

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 10400
  • Total Visits: 1281539
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1668

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ শনিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)
  • ২১শে জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, রাত ৮:৪৭

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
    123
252627282930 
       
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018