অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইন ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ইরানে রাসায়নিক অস্ত্রের দ্বারা হামলার শিকার ব্যক্তিরা এখনো ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহের ওপর পশ্চিমা দেশগুলোর আরোপিত অবৈধ নিষেধাজ্ঞার কারণে চরমভাবে ভুগছে।
কাজেম গরিবাবাদি গত (বুধবার) হেগে অনুষ্ঠিত রাসায়নিক অস্ত্র কনভেনশনের (সিএসপি-২৯) সম্মেলনের ২৯তম অধিবেশনে বক্তৃতা দিতে গিয়ে এ মন্তব্য করেন।
সম্মেলনে তিনি বলেন যে ইরানে রাসায়নিক অস্ত্রের দ্বারা হামলার শিকার ভুক্তভোগীরা এখনও ওষুধ এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহের ক্ষেত্রে পশ্চিমা দেশগুলোর অবৈধ নিষেধাজ্ঞার কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। তাই ক্ষতিগ্রস্থ এসব ব্যক্তিদের সমর্থন করার জন্য রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে তিনি এই সংস্থার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বৈঠকে গরিবাবাদী বলেন, কিছু দেশ বিশেষ করে জার্মানি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরাকের বাথ সরকারকে রাসায়নিকের প্রধান সরবরাহকারী হিসাবে ইরানের জনগণের বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অপরাধের সাথে জড়িত এবং তাদের বেআইনি কাজের জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তাদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত। একইসঙ্গে ইরানের রাসায়নিক ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
পশ্চিমা মদদে ইসলামী ইরানের ওপর ইরাকের সাদ্দাম সরকারের চাপিয়ে দেয়া ৮ বছরের যুদ্ধে মার্কিন ও পশ্চিমা সরকারগুলোর সহায়তা নিয়ে সাদ্দাম-বাহিনী ইরানের বিভিন্ন অঞ্চলে রাসায়নিক অস্ত্র ও বোমা ব্যবহার করেছে এ জাতীয় অস্ত্র ব্যবহার নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও। বাথিস্টরা ১৯৮০ সালের ১৯ অক্টোবর থেকে ২৫ আগস্ট ১৯৮৮ সালে সীমিত, পরীক্ষামূলক ও ব্যাপক পরিসরের রাসায়নিক হামলা চালায়। এইসব হামলায় দশ হাজারেরও বেশি ইরানি শহীদ, প্রায় এক লাখ ব্যক্তি আহত ও অবিরাম চিকিৎসার মুখাপেক্ষী হন এবং আড়াই লাখ ইরানি অ-গুরুতর পর্যায়ে আহত হন।
ইরাকের বাথিস্ট সরকার ১৯৮৭ সালের ২৮ ও ২৯ জুন ইরানের জনবহুল সীমান্ত-শহর সারদাশত-এর চারটি এলাকায় রাসায়নিক বোমা হামলা চালায়। এতে ১১০ জন বেসামরিক ইরানি শহীদ ও ৮ হাজার ব্যক্তি বিষাক্ত গ্যাসের সংস্পর্শে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হন।
সারদাশত শহরে যে রাসায়নিক হামলা চালানো হয়েছে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর এমন তীব্র মাত্রার রাসায়নিক হামলার ঘটনা আর কখনও ঘটেনি। ইরানের ওপর ইরাকের সাদ্দাম সরকারের চাপিয়ে দেয়ার যুদ্ধের সময় ৩২ টি বিদেশী কোম্পানি রাসায়নিক বোমা ও গ্যাস তৈরি করতে ইরাকের কাছে রাসায়নিক সামগ্রী বিক্রি করেছে। ইরাক এইসব রাসায়নিক বোমা ও গ্যাস ব্যবহার করেছে ইরানের যোদ্ধা ও বেসামরিক জনগণের ওপর।
তিনি বলেন, কিছু পশ্চিমা দেশ, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিঃশর্ত সমর্থন নিয়ে ইহুদিবাদী ইসরাইল দুর্ভাগ্যবশত দায়মুক্তি ভোগ করে ফিলিস্তিন ও লেবাননে তার অপরাধযজ্ঞ চালিয়েছে।
গরিবাবাদি বলেন, ইহুদিবাদী ইসরাইলের বিরুদ্ধে কার্যকর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে অবশ্যই জাতিসংঘ সনদের সাত নম্বর অধ্যায়ের অধীনে পদক্ষেপ নিতে হবে এবং বিশ্বের সকল দেশকে তেল আবিবের সঙ্গে অর্থনৈতিক, সামরিক বা অস্ত্র সহযোগিতা থেকে বিরত থাকতে হবে।
দখলদার ইসরাইল চলমান যুদ্ধে লেবানন ও অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার জনগণের বিরুদ্ধে বহুবার নিষিদ্ধ ঘোষিত হোয়াইট ফসফরাস এবং স্বল্প-মাত্রার ইউরেনিয়ামযুক্ত নিষিদ্ধ বোমা ব্যবহার করেছে।
ইরানের এই সিনিয়র কূটনীতিক বলেন “আমরা ফিলিস্তিন ও লেবাননের নিরীহ জনগণের বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর রাসায়নিক অস্ত্র, হোয়াইট ফসফরাস এবং স্বল্প-মাত্রার ইউরেনিয়ামসহ অন্যান্য বিপজ্জনক উপাদান ব্যবহারের তীব্র নিন্দা জানাই।”
গত মাসে লেবাননের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা জানিয়েছিল, ইহুদিবাদী সেনারা লেবাননের কাফার শুবা এলাকার উপকণ্ঠে ফসফরাস শেল ব্যবহার করে ব্যাপকভাবে গোলাবর্ষণ করেছে। এছাড়া, ২৭ সেপ্টেম্বর দখলদার ইসরাইলি বাহিনী বাঙ্কার-বাস্টার বোমা ব্যবহার করে বৈরুতের দক্ষিণ শহরতলীতে ৮০ টন অস্ত্র নিক্ষেপ করেছিল যাতে স্বল্প-মাত্রার ইউরেনিয়াম ব্যবহৃত হয়। ওই দিনের বোমা হামলায় হিজবুল্লাহর সাবেক মহাসচিব সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ শাহাদাতবরণ করেন।
Leave a Reply