অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে ইউরোপ জোর দিয়ে বলেছিল, তারা ২০২৭ সালের মধ্যেই রুশ জ্বালানি কেনা পুরোপুরি বন্ধ করে দেবে। কিন্তু তাদের এই পরিকল্পনায় যে বড় ধরনের ত্রুটি রয়েছে, তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কারণ, মুখে নিন্দা জানালেও ২৭ দেশের এই জোট নিজেরাই এ বছর রাশিয়া থেকে রেকর্ড পরিমাণ এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানি করতে চলেছে।
বেসরকারি সংস্থা গ্লোবাল উইটনেসের বিশ্লেষণ বলছে, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু এবং তার জেরে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার বন্যা বইয়ে দেওয়ার আগে ২০২১ সালের প্রথম সাত মাসের তুলনায় চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাইয়ের মধ্যে ৪০ শতাংশ বেশি রুশ এলএনজি আমদানি করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।
এই বিশ্লেষণে কমোডোটিজ ডেটা ফার্ম কেপলারের তথ্য ব্যবহার করেছে গ্লোবাল উইটনেস। গত বুধবার (৩০ আগস্ট) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানিয়েছে, রাশিয়া এ বছরে এখন পর্যন্ত যতটা এলএনজি রপ্তানি করেছে তার অর্ধেকের বেশি, আরও স্পষ্ট করে বললে প্রায় ৫২ শতাংশেরই ক্রেতা ছিল ইউরোপীয় দেশগুলো।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে রুশ এলএনজির বড় ক্রেতাদের মধ্যে রয়েছে চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া।
২০২১ সালে রাশিয়া থেকে ইউরোপের এলএনজি আমদানির পরিমাণ ছিল ৩৯ শতাংশ। যুদ্ধ শুরু সত্ত্বেও ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৯ শতাংশে। এ বছর সেই রেকর্ডও ভেঙে দিয়েছে তারা।
গ্লোবাল উইটনেসের ধারণা, ২০২৩ সালে রাশিয়া থেকে ইউরোপের মোট এলএনজি আমদানির পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ৫৩০ কোটি ইউরো বা ৫৭৫ কোটি ডলারের।
অতীতে নিজেদের জ্বালানি চাহিদা মেটাতে রাশিয়া থেকে এক-তৃতীয়াংশ পাইপলাইনের গ্যাস নিতো ইইউ। কিন্তু বড় বিস্ফোরণের পর পাইপলাইন দিয়ে রাশিয়া থেকে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ বর্তমানে প্রায় বন্ধ। রাশিয়া থেকে ইইউর এলএনজি আমদানি বাড়ার এটিও অন্যতম কারণ।
কেপলারের বিশ্লেষক অ্যাডাম বেনেট ইনসাইডারকে বলেছেন, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ শুরুর অনেক আগে স্বাক্ষরিত দীর্ঘমেয়াদী চুক্তিগুলোর কারণে রুশ এলএনজির চালান ইউরোপে যাওয়া অব্যাহত রয়েছে।
রাশিয়া থেকে ইউরোপের আমদানি করা এলএনজির ৯০ শতাংশই গেছে বেলজিয়াম, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস ও স্পেনে। তাদের সবারই আগামী দশক পর্যন্ত চুক্তি রয়েছে।
তা সত্ত্বেও রাশিয়ার এলএনজি আমদানি পুরোপুরি বন্ধ করতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে গ্লোবাল উইটনেস। সংস্থাটির জ্যেষ্ঠ জীবাশ্ম জ্বালানি প্রচারক জনাথন নরোনহা-গ্যান্ট বলেছেন, রাশিয়া থেকে তেল কেনা আর গ্যাস কেনা একই কথা। উভয়ই ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অর্থায়ন করে। ইউরোপীয় দেশগুলো যুদ্ধের নিন্দা করছে ঠিকই, কিন্তু তারা পুতিনের পকেটেই টাকা ঢালছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন যে বিষয়টি জানে না, তা-ও নয়। গত মার্চে ইইউর জ্বালানি কমিশনার কাদরি সিমসন রাশিয়া থেকে এলএনজি কেনা ইউরোপের ‘সম্মানের জন্য হুমকি’ উল্লেখ করে সদস্য দেশগুলোকে এটি বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। একই মাসে স্প্যানিশ জ্বালানি মন্ত্রী তেরেসা রিবেরাও পরিস্থিতিটিকে ‘অযৌক্তিক’ বলে অভিহিত করেছিলেন।
এ বিষয়ে মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি ইউরোপীয় কমিশন।