অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ঘূর্ণিঝড় হামুনের তাণ্ডবে কক্সবাজারে অর্ধলক্ষাধিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একইসঙ্গে লক্ষাধিক গাছপালা ভেঙে পড়েছে। কয়েক কিলোমিটার বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গেছে, উপড়ে পড়েছে বিদ্যুতের অসংখ্য খুঁটি। এ পর্যন্ত তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন শতাধিক।
মঙ্গলবার রাত ৭টার পরই ঘূর্ণিঝড় হামুন আঘাত হানে। এতে উপড়ে যায় গাছপালা ও ঘরবাড়ি। শহরের হলিডে মোড়, সদর হাসপাতাল সড়কে উপড়ে পড়েছে ১৫টির বেশি গাছ। একইসঙ্গে বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে এলোমেলো অবস্থায় পড়ে আছে তার। বন্ধ আছে যানবাহন চলাচল, নেই বিদ্যুৎ।
জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণকক্ষের তথ্য অনুযায়ী, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া দ্বীপে ২০ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি ও গাছপালা ভেঙে পড়েছে। গাছপালা উপড়ে মহেশখালী থেকে শাপলাপুর পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটারের জনতা সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ আছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে উপজেলাগুলো বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গাছপালা ও ঘরবাড়ি।
পৌরসভার দেওয়া তথ্যমতে, হামুনের তাণ্ডবে পৌরসভার অন্তত ৩০ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গাছপালা ভেঙেছে এক লাখের বেশি। আহত হয়েছেন অনেকে।
ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, ‘হামুনের তাণ্ডবে পুরো জেলায় কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা এখনও জানা সম্ভব হয়নি। কারণ মোবাইলের নেটওয়ার্ক ও বিদ্যুৎ না থাকায় উপজেলাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। তবে গাছপালা ও ঘরবাড়ি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শুধুমাত্র শহরে কয়েক হাজার গাছ ভেঙে রাস্তায় পড়ে আছে। বিচ্ছিন্ন হওয়া বিদ্যুতের লাইন ঠিক করে সরবরাহ নিশ্চিত করতে আরও এক-দুই দিন সময় লাগতে পারে।’
জেলা প্রশাসক বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় হামুন গতকাল মধ্যরাতের দিকে আঘাত হানবে বলে বলা হয়েছিল। কিন্তু রাত সাড়ে ৭টার দিকে প্রবল গতিবেগে ঘূর্ণিঝড়টি শহরে আঘাত হানতে শুরু করে। মাত্র দুই ঘণ্টার তাণ্ডবে পুরো শহর লন্ডভন্ড হয়ে যায়। এ পর্যন্ত তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। গাছপালা ও বাতাসে উড়ে আসা ঘরের টিনের আঘাতে শতাধিক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। অধিকাংশ ঘরের টিনের চাল উড়ে গেছে।’
ক্ষতিগ্রস্তরা প্রাথমিকভাবে ঢেউটিন ও নগদ টাকা অনুদান পাবেন জানিয়ে জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ‘আমরা খুব দ্রত ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছানোর ব্যবস্থা করছি।’
পৌরসভার মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘পুরো শহর লন্ডভন্ড হবে—এটি কারও মাথায় ছিল না। রাত সাড়ে ৭টা থেকে তীব্রগতির ঘূর্ণিঝড় শহরে আঘাত হানতে থাকে। তখনও প্রচার করা হচ্ছিল ৬ নম্বর বিপদসংকেত। কিন্তু বাতাসের গতি ছিল তীব্র। রাত ১০টার আগেই পুরো শহরের বিদ্যুৎ, মোবাইল ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়ে যায়। সড়কের ওপর গাছপালা পড়ে যান চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়। এখন ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের চেষ্টা চলছে।’