October 23, 2025, 12:33 pm
এইমাত্রপাওয়াঃ

অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত নড়াইলের কালিয়ার অরুনিমা রিসোর্ট

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : শীতের আগমনে নড়াইলের কালিয়া উপজেলার নড়াগাতি থানার পানিপাড়া গ্রামে প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়া উঠা অরুনিমা রিসোর্ট গলফ ক্লাব এখন অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত। সারা বছর এখানে বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনা দেখা গেলেও শীতের সময় রিসোর্টের মধ্যে দিঘি আকৃতির পুকুরের পাড়ে অবস্থিত গাছগাছালি পাখি দ্বারা আচ্ছাদিত থাকে।প্রতিদিন বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঝাঁকে ঝাঁকে পাখিরা আসতে থাকে।

পাখিদের গাছের ডালে বসার নয়নাভিরাম দৃশ্য, ডানা ঝাপটানি ও কিচিরমিচির শব্দে বিমোহিত হন আগত দর্শনার্থীসহ গোটা পানিপাড়া গ্রামের মানুষ। দূর-দূরান্ত থেকে ভীষণ আগ্রহ নিয়ে প্রতিনিয়ত বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাখিদের এ দৃশ্য দেখতে আসে নারী-পুরুষ ও শিশুরা। কেউ এলাকার, কেউ আসেন অনেক পথ পাড়ি দিয়ে। অরুনিমা রিসোর্টটি এখন পাখিদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। এখানে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা নানা রঙের পাখি দেখে মুগ্ধ হন।

রোববার সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, অরুনিমা রিসোর্টে বিভিন্ন গাছের ডালে ডালে গড়ে উঠেছে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন প্রজাতির কয়েক হাজার পাখির বাসস্থান। অতিথি ও দেশী পাখির মধ্যে রয়েছে সাদা বক, হাঁসপাখি, পানকৌড়ি, শামুকখোলা, শালিখ, টিয়া, দোয়েল, ময়না, মাছরাঙা, ঘুঘু, শ্যামা, কোকিল, টুনটুনি, চড়ুইসহ নাম না জানা বিভিন্ন প্রজাতির পাখি।

ঢাকা থেকে আসা দর্শনার্থী এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র আলিফ আল নাইম বলেন, ‘শুনেছি এ রিসোর্টে সারা বছরই বিভিন্ন জাতের পাখি থাকে। বিশেষ করে শীতের মধ্যে রিসোর্টটি পাখির রাজ্যে পরিণত হয়। তাই আজ দেখতে এলাম। পাখিদের ডাক শুনতে ও আকাশে দল বেঁধে উড়তে দেখতে বেশ ভালো লাগছে।’ খুলনার ফুলতলা থেকে আসা দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ছাজিম জানায়, প্রাকৃতিক পরিবেশে অরুনিমা রিসোর্টে পাখিদের কলরব মনোমুগ্ধকর পরিবেশ সৃষ্টি করছে।পাখি পড়ার দৃশ্য স্মৃতি হিসেবে ক্যামেরায় বন্দি করে রাখছি।

শরিয়তপুর থেকে আসা গৃহবধু তানিয়া বেগম জানান, পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পাখি দৃশ্য দেখতে এসেছি। ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি পড়ার দৃশ্য দেখে খুব আনন্দ পেলাম। পাখির কিচিরমিচির আওয়াজে মুগ্ধ হয়েছি। সুযোগ পেলে নয়নাভিরাম পাখির এ অভয়ারণ্য দেখতে আবারও আসবো বলে তিনি জানান।

পাখি ও প্রকৃতি প্রেমিক অরুনিমা রিসোর্ট গলফ ক্লাবের চেয়ারম্যান খবির উদ্দিন আহমেদ বাসসকে জানান, পর্যটকদের মনের খোরাক মেটাতে ও নির্মল আনন্দদানে প্রায় ৫০ একর জমি নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে এ রিসোর্ট ও গলফ ক্লাবটি। শহরের অধিবাসী তথা কর্মব্যস্ত মানুষ বিশেষ করে মহিলা ও শিশুরা এখানে ঘুরতে এসে প্রাকৃতিক পরিবেশের সবটুকু আনন্দ পেয়ে থাকেন। রিসোর্টে অবস্থিত সবুজ গাছ-গাছালিতে সারা বছরই বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখি বসতে দেখা যায়। তবে শীতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অতিথি পাখির সংখ্যা অন্য সময়ের তুলনায় কয়েকগুন বেড়ে যায়। এখানে বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখি আপন মনে ঘুরাঘুরি করে থাকে।

আমাদের দেশের মানুষের মতো পাখিরাও অতিথিপরায়ণ। শীতের শুরুতে বিদেশী অতিথি পাখিরা রিসোর্টে আসতে শুরু করলে দেশী প্রজাতির পাখিরা তাদেরকে জায়গা ছেড়ে দেয়। রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের বিশেষ নজরদারির কারণে পাখি শিকার বা পাখিদের প্রতি বিরুপ আচরণ বন্ধ থাকায় এ রিসোর্টের গাছপালা এখন পাখিদের দখলে। খাদ্যের সন্ধানে সকালে বেরিয়ে পড়া পাখিগুলো সন্ধ্যা লাগার ঘন্টা দু’য়েক আগে থেকে ডানা মেলে এখানে আসতে শুরু করে।আকাশে ডানা মেলে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ছুটে এসে রিসোর্টের ভিতরকার গাছপালার ডালে বসার দৃশ্য অপরুপ।

শীত মওসুমের বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ রিসোর্টের গাছে পাখি পড়ার দৃশ্য ও পাখির কিচিরমিচির শব্দ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত দর্শকদের মোহিত করে। সন্ধ্যা লাগার আগ মূহুর্তে গাছের ডালে পাখি ছাড়া আর কিছুই দেখা যায় না। ভোর হলেই পাখির কলতানে মুখরিত হয় গোটা এলাকা। আবার বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই বেশির ভাগ পাখি অন্যত্র ছুটে যায় খাবারের সন্ধানে। আবার বিকাল হলে এখানে চলে আসে। দূর-দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকরা অরুনিমা রিসোর্ট গলফ ক্লাবকে এখন পাখির মেলাস্থল হিসেবে অভিহিত করেছেন।

এ রিসোর্টে রয়েছে বড়-বড় কয়েকটি পুকুর। পুকুর ভরা রয়েছে দেশীয় প্রজাতির মাছ। পুকুর বা জলাশয়ে ভেসে থাকা বিশাল আকৃতির মাছগুলোও পর্যটকদের আকর্ষণ করে। পরিবারের সদস্য কিংবা স্বজনদের নিয়ে দীঘি আকৃতির পুকুরের এ প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ঘুরে বেড়ানোর জন্য রয়েছে সাম্পানের মতো তৈরি নৌকা। রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে মৎস্য শিকারীরা মাঝে-মধ্যে মাছ শিকার করে থাকেন এখানকার পুকুরে। রয়েছে সুইমিং পুল ও ঝুলন্ত সেতু।

পর্যটকদের ক্লান্তি দূর করতে নৈসর্গিক রিসোর্টের বিভিন্ন স্থানে লাগানো হয়েছে মনোমুগ্ধকর ফুলের গাছ ও ফলদ বৃক্ষ। গোলাপ, বেলিসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের এবং বিভিন্ন প্রজাতির ফলের সুরভিত ঘ্রাণ রিসোর্টের পরিমন্ডল ছাড়িয়ে আশপাশের গ্রামে প্রত্যহ প্রবেশ করছে। দূর-দূরান্তের পর্যটকদের জন্য রয়েছে রিসোর্ট অভ্যন্তরে খাওয়া ও রাতে আবাসনের ব্যবস্থা। দিনরাত সার্বক্ষণিক রয়েছে জোরদার নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সরকারি দপ্তরের অবসরপ্রাপ্ত একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও সব শ্রেণী পেশার মানুষকে আনন্দ-বিনোদন দিতে শহুরে জীবন ছেড়ে বেশিরভাগ সময় এখানে কাটান তিনি। তার রিসোর্ট ও গলফ ক্লাবে এসে মানুষ আনন্দ পেলে তিনিও আনন্দ পান বলে জানান অরুনিমা রিসোর্ট গলফ ক্লাবের কর্ণধার খবির উদ্দিন আহমেদ।

অরুনিমা রিসোর্ট গলফ ক্লাবের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইরফান আহমেদ জানান, পাখির অভয়াশ্রম গড়ে পাখি সুরক্ষায় অরুনিমা রিসোর্ট গলফ ক্লাব কর্তৃপক্ষের ভূয়শী প্রশংসা করে থাকেন এখানে আগতরা। এখানকার এসএম সুলতান লাউন্স রুম ও চিত্রা কনভেনশন হল রুমে মনোমুগ্ধকর পরিবেশে বিভিন্ন ধরনের সভা, সেমিনার ও পার্টি আয়োজনের ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া অরুনিমা রিসোর্ট গলফ ক্লাবে গলফ খেলারও সুব্যবস্থা রয়েছে বলে তিনি জানান।

আজকের বাংলা তারিখ

October ২০২৫
Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
« Sep    
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  


Our Like Page