অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : যাদের বয়স ১৬ বছরের নিচে তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার নিষিদ্ধ করার লক্ষ্য অস্ট্রেলিয়ায় একটি আইনের প্রস্তাব আনা হয়েছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ এই উদ্যোগকে “বিশ্বের জন্য উদাহরণ’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, এটি শিশুদের সামাজিক মাধ্যমের ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে এবং তাদের শৈশবকে পুনরুদ্ধার করতে সহায়তা করবে। তবে এই উদ্যোগকে ঘিরে পক্ষে-বিপক্ষে চলছে তীব্র বিতর্ক।
বিবিসি জানিয়েছে, এই প্রস্তাবিত আইনটি স্ন্যাপচ্যাট, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, এক্সের মত প্ল্যাটফর্মগুলোতে ১৬ বছরের কম বয়সীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করবে। প্ল্যাটফর্মগুলো যদি এই আইন মেনে না চলে তবে তাদেরকে ৫০ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার পর্যন্ত জরিমানা গুণতে হতে পারে। মেসেজিং পরিষেবা এবং গেমিং সাইটগুলো অবশ্য এই আইনের বাইরে থাকবে।
সামাজিক মাধ্যমে শিশুদের সাইবার বুলিং, ভয় দেখানো এবং মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির বিষয়টি এই নিষেধাজ্ঞার প্রধান কারণ। সম্প্রতি ১২ বছর বয়সী জেমসের অভিজ্ঞতা এই উদ্যোগের যৌক্তিকতা সামনে নিয়ে এসেছে, যেখানে তাকে স্ন্যাপচ্যাটে হুমকি দেয়া হয়। জেমসের মা এমা বলেছেন, বাচ্চাদের বাঁচানোর জন্য এটি একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।
তাছাড়া অনেক পিতামাতা এই পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানিয়ে বলছেন, এটি শিশুদের সামাজিক ও মানসিক বিকাশে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। প্রধানমন্ত্রী আলবানিজ বলেছেন, আমরা জানি প্রযুক্তি এই আইনকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে। কিন্তু আমাদের চেষ্টা চালিয়ে যেতেই হবে।
তবে এই উদ্যোগ প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো এবং বিশেষজ্ঞদের সমালোচনার মুখে পড়ায় এর ভবিষ্যৎ নিয়ে রয়েছে অনেক প্রশ্ন। বিশেষজ্ঞদের মতে এই নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করা খুব একটা সহজ হবে না। ডিজিটাল ইন্ডাস্ট্রি গ্রুপ ইনকর্পোরেটেড বলছে, এটি শিশুদের বিপজ্জনক, অনিয়ন্ত্রিত ইন্টারনেট ব্যবহারের দিকে ঠেলে দিতে পারে। ই-সেফটি কমিশনার জুলি ইনম্যান গ্রান্ট জানিয়েছেন, সামাজিক মাধ্যম ও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে এখনও যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
গবেষক জোয়ান অরল্যান্ডো বলেন, নিষেধাজ্ঞা একটি কৌশলের অংশ হতে পারে তবে এটি সম্পূর্ণ কৌশল হতে পারে না।১৫ বছর বয়সী লুকাস লেন বলেছেন, এটি আমার ব্যবসা ও সামাজিক বন্ধনের ওপর প্রভাব ফেলবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শুধুমাত্র নিষেধাজ্ঞার চেয়ে ডিজিটাল সাক্ষরতা ও নিরাপত্তা শিক্ষা আরও কার্যকর হতে পারে। বাচ্চাদের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করার জন্য প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ওপর আরও কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপের সুপারিশ করেছেন তারা।
এর আগে, সাউথ কোরিয়া ও ফ্রান্সের মতো দেশগুলোতে একই ধরনের আইন কার্যকর করার চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু তা ব্যর্থ হয়। ফ্রান্সে ভিপিএন ব্যবহার করে সোশ্যাল মিডিয়া নিষিদ্ধের আইন এড়িয়ে গেছেন অনেক ব্যবহারকারী। যুক্তরাষ্ট্রের উটাহ রাজ্যে এই ধরণের একটি আইন অসাংবিধানিক হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
Leave a Reply