অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ইউক্রেন থেকে সম্প্রতি মুক্তি পাওয়ার রাশিয়ার সেনারা রুশ টেলিভিশন আরটি’র কাছে বিভীষিকাময় নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন ইউক্রেনের কারাগারে তিন মাস বন্দি থাকার সময় তাদের ওপর চরম নির্যাতন চলেছে, জিজ্ঞাসাবাদের সময় মারধর করা হয়েছে এমনকি রাশিয়ার কয়েকজন সেনাকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। এছাড়া তাদেরকে বন্দী দশায় নানা ধরনের হুমকি দেয়া হতো বলে জানিয়েছেন।
ইউক্রেন থেকে মুক্তি পাওয়ার পর বিমানে করে এসব সেনাকে রাজধানী মস্কোয় আনা হয়েছে চিকিৎসা এবং মানসিকভাবে সুস্থ করে তোলার জন্য। তাদের মধ্যে এক সেনা আরটিকে বলেছেন, “বন্দিত্বের তিন মাস আমরা জীবন্ত দোযখে ছিলাম। আমি আশা করব আর কারো জীবনে এরকম সময় না আসুক।”
অন্য আরেক সেনা জানান, “আমাদেরকে প্রচণ্ড ঠাণ্ডার মধ্যে ১৬ ঘন্টা হাঁটানো হতো, সে সময় গায়ে শুধু টি-শার্ট এবং হালকা ট্রাউজার থাকতো।” আরেক সেনা জানিয়েছেন, “ইউক্রেনের হাতে বন্দী হওয়া সেনাদেরকে জাতীয় সংগীত শেখানো হতো। আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত ইউক্রেনের জাতীয় সংগীত গাইতে রাজি না হতাম ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের কোনো খাদ্য দেয়া হতো না।”
দোনেস্ক অঞ্চলের একজন সেনা জানিয়েছেন, “খারকিভ অঞ্চল থেকে তার সেনা ইউনিট আটক হওয়ার পর তাদেরকে হ্যাংগারে রাখা হয়। তারা তাদেরকে একেবারে উলঙ্গ করে ফেলে এবং প্রচণ্ড ঠাণ্ডার মধ্যে দাঁড় করিয়ে রাখে। এরপর বন্দি সেনাদেরকে এক মাসের বেশি সময় কিয়েভের একটি বেইজমেন্টে রাখা হয়।”
আরেক সেনা জানিয়েছেন, তাকেও খারকিভের হ্যাঙ্গারে রাখা হয়েছিল এবং তাদেরকে ইউক্রেনের সেনা কমান্ডার না আসা পর্যন্ত লাগাতার পেটানো হয়েছিল। এ সেনা বলেন, “যুদ্ধের বুট দিয়ে তারা আমার পায়ের উপর পাড়িয়েছিল।”
কোনো কোনো মুক্ত সেনা তাদেরকে কিভাবে মিথ্যা বলতে বাধ্য করা হয়েছিল সে বর্ণনা দিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর জন্য তারা এই মিথ্যা বলতে বাধ্য করতো। এসব সেনা জানিয়েছেন, ইউক্রেনের সেনারা তাদেরকে এই কথা বলতে বাধ্য করত যে, “তারা তরুণ-কিশোর ছাত্র এবং তাদেরকে জোর করে যুদ্ধে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।”
আরেক সেনা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রেড ক্রসের টিমের পরিদর্শনের সময় তাদের ওপর নির্যাতনের কথা প্রকাশ না করার জন্য হুমকি দেয়া হয়েছিল। যদি নির্যাতনের কথা তারা প্রকাশ করে তাহলে তাদের ওপর পরে আরো বেশি নির্যাতন করা হবে বলে জানিয়েছিল ইউক্রেনের সেনারা।
একজন সেনা জানা, “নিজেদের মধ্যে গোপন কোনো কথা বলাও ছিল অসম্ভব ব্যাপার। কারণ দেয়ালের পাশেই ইউক্রেনের সেনারা বসে থাকতো এবং তারা সবকিছু শুনতে পারতো। এমনকি তাদেরকে বেশি কথা না বলার জন্য বলা হয়েছিল, বেশি কথা বললে সেজন্য মূল্য দেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছিল।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে রাশিয়া দুটি বড় রকমের বন্দী বিনিময় সম্পন্ন করেছে। গত শনিবার মস্কো ৫০ জন সেনাকে বন্দী বিনিময়ের আওতায় দেশে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। এরপর বৃহস্পতিবারে ১০৭ জনকে ফিরিয়েছে। বন্দী বিনিময় চুক্তির আওতায় ইউক্রেনকে ৫২ জন এবং ১০৭ জন সেনা ফেরত দেয়া হয়েছে।
Leave a Reply