অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : প্রথমবারের মতো কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম বড় ঘাগটিয়ার আকাশে দেখা গেল হেলিকপ্টার। আর সেই হেলিকপ্টারে করে এসেছেন একজন সৌদি নাগরিক মদিনার বাসিন্দা ফাহাদ নাকাস আলমুতাইরী। যিনি এই গ্রামেরই এক সন্তান সৌদি প্রবাসী মো. সানির বন্ধু।
তাদের সম্পর্কের শুরুটা হয় মালিক আর কর্মীর কাজের মধ্য দিয়ে। তারপর দীর্ঘ বছরে সম্পর্কের সূতোয় তৈরি হয় বন্ধুত্বের গল্পগাঁথা। আর সে ভালোবাসা মানুষকে কত দূর নিয়ে যেতে পেরে এক জীবন্ত উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন বাংলাদেশি যুবক।
হাজার মাইল দূর থেকে শুধু বন্ধুর বিয়েতে অংশ নিতে ছুটে এসেছেন সৌদি নাগরিক। বাংলাদেশের এমন দৃশ্য বিরল।
হেলিকপ্টার নামতে গ্রামের মাঠে তৈরি করা হয় ছোট্ট একটি হ্যালিপেড। হেলিকপ্টার চড়ে গ্রামে আসবেন একজন সৌদি নাগরিক। এমন খবরে সকাল থেকেই শতশত নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ-বনীতাসহ শিশুরা ভীড় করতে থাকেন হ্যালিপেডের সামনে।
এমন দৃশ্য দেখে গ্রামের সকলেই খুব খুশি ও আনন্দিত। গ্রামবাসীরা অবাক হয়েছেন এই ভেবে, একজন কর্মীর বিয়েতে মালিকের (কফিল) আগমণ দেখে। তাইতো ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে ছিলেন তাকে একনজর দেখার জন্য। আর হেলিকপ্টার নামতেই শুরু হয় হৈ হুল্লুড়-বাধ ভাঙা উল্লাস।
প্রবাসী যুবক সানির বাবা ফেরদৌস মিয়া বাজিতপুর উপজেলার বড় ঘাগটিয়া গাজিরচর গ্রামের একজন সাধারণ কৃষক। সংসারে স্ত্রী, ৫ ছেলে ও দুই মেয়ে। সংসারের হাল ধরতে কৃষি কাজ করে ৮ বছর আগে বড় ছেলে সানিকে পাঠান মরুর দেশে। এরপর আর তাকে পেছনে তাকাতে হয়নি। সানি বিদেশ যাওয়ার পর ধীরে ধীরে তার ছোট তিন ভাই জনি, মনির ও রনিকেও সৌদি নিয়ে যান। এখন তাদের সুখের সংসার।

বিয়েতে খুব কাছের বন্ধুকে পেয়ে অনেক আবেগাপ্লত সানি। তিনি জানান, বাংলাদেশ সম্পর্কে ওর ধারণা ছিল অন্যরকম। তার ইচ্ছে ছিল একবার বাংলাদেশ ঘুরে দেখার।
বন্ধুত্ব, ভালোবাসা, আর আবেগ—এই তিনে গড়ে ওঠে মানুষের সম্পর্ক। আজ সেই সম্পর্কের জয়গান। বাংলাদেশে এসে অনেক আনন্দিত এই সৌদি নাগরিক। তার ইচ্ছে কয়েকটি দিন এখানে থাকবেন, বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখবেন।
আগামীকাল ৩ নভেম্বর কুলিয়ারচর উপজেলার উসমানপুর গ্রামে বিয়ে হবে সানির। আর সেই বিয়ে উপলক্ষ্যেই সৌদি নাগরিকের আসা। একটি হেলিকপ্টার শুধু আকাশে উড়ে আসেনি—সে নিয়ে এসেছে ভালোবাসার বার্তা, বন্ধুত্বের শক্তি, আর গ্রামের মানুষের হৃদয়ে এক নতুন গল্প।