December 5, 2025, 12:29 pm
শিরোনামঃ
নিঃস্বার্থ সেবার মাধ্যমে জনগণের বন্ধু হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে ফায়ার সার্ভিস : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আইএলও’র ৩টি কনভেনশন একসঙ্গে অনুসমর্থন ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত : শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা সরকারি কর্মচারীদের পে-স্কেল নিয়ে নতুন ঘোষণা বেগম খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রা পিছিয়ে যাচ্ছে নোয়াখালীতে ২৪৩ স্কুলের পরীক্ষা বন্ধ ; কর্মবিরতিতে থাকা সব শিক্ষককে শোকজ হবিগঞ্জে সেতু ভেঙে আটকা পড়লো ট্রাক ; যান চলাচল বন্ধ ফরিদপুরের সালথায় মাছ ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা নিউজিল্যান্ডে ২৪ লাখ টাকার ডিম গিলে কারাগারে যুবক শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য ওয়ার্ক পারমিটের মেয়াদ কমালো যুক্তরাষ্ট্র মের্জের ইসরায়েল সফর আন্তর্জাতিক আইনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা ; জার্মানিতে তীব্র ক্ষোভ
এইমাত্রপাওয়াঃ

কোরিয়া যুদ্ধে মার্কিন নৃশংসতা ; আজও উত্তেজনা ও আশঙ্কা  দ্বীপটির পিছু ছাড়েনি

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : কোরিয়া যুদ্ধ ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ব্লকের সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতার এক ভয়াবহ অধ্যায়। এই লড়াই কেবল কয়েক মিলিয়ন প্রাণই কেড়ে নেয়নি, বরং পূর্ব ও পশ্চিমের দীর্ঘস্থায়ী বিভাজনকে স্থায়ী রূপ দেয়। আজও কোরীয় উপদ্বীপ উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তার কেন্দ্রবিন্দু, আর কোরিয়া যুদ্ধ সমকালীন ইতিহাসের অন্যতম রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হিসেবে স্মরণীয় হয়ে আছে। এই প্রতিবেদনে কোরীয় উপদ্বীপে দুই শক্তির রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পেছনের কারণগুলো তুলে ধরা হলো।

কোরিয়া যুদ্ধে দুই পরাশক্তির মুখোমুখি অবস্থান : ১৯০৫ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত জাপানের দখলে থাকার পর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে কোরিয়া উত্তর ও দক্ষিণে ভাগ হয়। উত্তরের নিয়ন্ত্রণ নেয় সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং দক্ষিণে প্রতিষ্ঠিত হয় মার্কিন প্রভাব। এভাবেই জন্ম নেয় দুই বিপরীত মতাদর্শের রাষ্ট্র—দক্ষিণে আমেরিকা-সমর্থিত “কোরিয়া প্রজাতন্ত্র” এবং উত্তরে সোভিয়েত-সমর্থিত কিম ইল সুং-এর নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট সরকার।

যুদ্ধের সূচনা: দক্ষিণে উত্তরের আকস্মিক হামলা : ১৯৫০ সালের ২৫ জুন, কিম ইল সুং সোভিয়েত ইউনিয়নের সহায়তায় দক্ষিণ কোরিয়ায় হঠাৎ আক্রমণ চালান। দ্রুতই প্রায় পুরো উপদ্বীপ উত্তর কোরিয়ার দখলে চলে যায়, কেবল বুসান অঞ্চল দক্ষিণের হাতে থাকে। এই প্রাথমিক সাফল্য যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘকে উদ্বিগ্ন করে তোলে এবং উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে জরুরি প্রস্তাব গৃহীত হয়।

যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ: ঘুরে যায় যুদ্ধের মোড় : মার্কিন সেনা এবং জাতিসংঘ বাহিনী দক্ষিণ কোরিয়ার সহায়তায় যুদ্ধে প্রবেশ করে। তারা উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে প্রায় তিন লাখ সেনা পাঠায়। উত্তর কোরিয়া পিছু হটতে বাধ্য হয়। যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য ছিল পূর্ব এশিয়ায় কমিউনিজমের বিস্তার ঠেকানো এবং কোরীয় উপদ্বীপকে পুরোপুরি পূর্ব ব্লকের হাতে চলে যেতে না দেওয়া। এর ফলে বড় ধরণের যুদ্ধ ও সংঘাতের সূচনা হয়।

যুদ্ধে চীনের প্রবেশ : ১৯৫০ সালের নভেম্বর মাসে যখন মার্কিন সেনারা ইয়ালু নদীর কাছাকাছি পৌঁছে যায়, তখন প্রায় ৯ লাখ চীনা স্বেচ্ছাসেবী আকস্মিকভাবে যুদ্ধে যোগ দেয়। এই বিশাল শক্তি জাতিসংঘ বাহিনীকে পিছু হটতে বাধ্য করে এবং যুদ্ধ নতুন রূপ নেয়।

দীর্ঘ ভয়াবহ সংঘর্ষ : চীনের প্রবেশের পর যুদ্ধ আরও তীব্র ও ব্যয়বহুল হয়ে ওঠে। উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া বারবার পরস্পরের অঞ্চল দখল ও হারানোর মধ্যে দিয়ে যায়। সোভিয়েত ইউনিয়নও ২৫ হাজার দক্ষ সেনা পাঠিয়ে যুদ্ধে সরাসরি অংশ নেয়। দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউল বারবার উত্তর কোরিয়ার দখলে যায় এবং আবার উদ্ধার হয়, যা যুদ্ধের ভয়াবহতার প্রমাণ বহন করে।

যুদ্ধের সমাপ্তি এবং অস্ত্রবিরতি : তিন বছরের নির্মম যুদ্ধের পর আলোচনা শুরু হয় এবং ১৯৫৩ সালের ২৭ জুলাই যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়। নতুনভাবে সীমান্ত নির্ধারণ করা হয়, যা উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়াকে আলাদা করে রেখেছে। এই অবস্থা আজও বহাল আছে এবং উপদ্বীপকে বিশ্বের সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ অঞ্চলের একটি হিসেবে জিইয়ে রেখেছে।

প্রাণহানি প্রভাব : এই যুদ্ধে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ প্রাণ হারায়, যাদের বেশিরভাগই কোরিয়ান ও চীনা নাগরিক। যুক্তরাষ্ট্রেরও প্রায় ৩৬ হাজার ব্যক্তি হতাহত হয়। যুদ্ধের ফলে চীন বৈশ্বিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয় এবং যুক্তরাষ্ট্র পূর্ব এশিয়ার কৌশলগত গুরুত্বকে আরও গভীরভাবে উপলব্ধি করে।

কোরীয় যুদ্ধের কৌশলগত শিক্ষা : এই যুদ্ধের মধ্যদিয়ে চীন বিশ্বের কাছে নিজের শক্তি প্রমাণ করতে সক্ষম হয়। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র চীন ইস্যুতে তাদের নীতি পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হয়েছিল। এই যুদ্ধ থেকে এটাও স্পষ্ট হয় যে, সোভিয়েত ইউনিয়ন সরাসরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে ইচ্ছুক না হলেও মিত্রদের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখতে প্রস্তুত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও দক্ষিণ কোরিয়ায় সামরিক উপস্থিতি বজায় রেখে কমিউনিজম ঠেকাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিল, বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি মেনে নিয়েও তারা এটা করেছে।

বর্তমান পরিস্থিতি : শীতল যুদ্ধ শেষ হলেও কোরীয় উপদ্বীপ আজও বিশ্বের সবচেয়ে সংবেদনশীল ও অস্থির অঞ্চলের একটি হিসেবে রয়ে গেছে। এখানকার উত্তেজনা ও রাজনৈতিক-সামরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা আজও অব্যাহত রয়েছে। কোরীয় উপদ্বীপ আজও অত্যন্ত সংবেদনশীল ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সাক্ষী হয়ে আছে, যে যুদ্ধের ছায়া আজও মিলিয়ে যায়নি।

 

আজকের বাংলা তারিখ

December ২০২৫
Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
« Nov    
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০৩১  


Our Like Page