অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : গাইবান্ধায় যৌতুকের টাকা না পেয়ে মরিয়ম বেগম (২২) নামে এক গৃহবধূকে ইস্ত্রি দিয়ে ছ্যাঁকা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্বামী ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে। আহত ওই গৃহবধূ বর্তমানে গাইবান্ধা সদর হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
বুধবার (৭ জুন) বিকেলে গাইবান্ধা সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, সার্জারি ওয়ার্ডের ৩০ নম্বর বেডে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন ওই গৃহবধূ। এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার রাতে ভুক্তভোগীর পরিবারের পক্ষ থেকে গাইবান্ধা সদর থানায় এজাহার দায়ের করা হয়েছে।
এর আগে গত ৪ জুন বিকেলে সদর উপজেলার বাদিয়খালী ইউনিয়নের তালুক রিফায়েতপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্তরা হলেন- মরিয়মের স্বামী রাশেদ সরকার (৩০), শ্বশুর ফারুক সরকার (৫৫) ও শাশুড়ি রাশেদা বেগম (৫০)।
এজাহারে বলা হয়, আড়াই বছর আগে রাশেদ-মরিয়মের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় মরিয়মের পরিবারের পক্ষ থেকে ২ লাখ ২০ হাজার টাকাসহ প্রায় ৩ লাখ টাকার প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র উপহার হিসেবে দেওয়া হয়। পরে তাদের ঘরে একটি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। পরবর্তীতে পরিবারের কুমন্ত্রণায় স্বামী রাশেদ ৫ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। দিতে না পারায় রাশেদ বিভিন্ন সময়ে মরিয়মের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায়। এর একপর্যায়ে গত ২ মাস আগে আবারো যৌতুকের টাকা আনতে বললে তাতে মরিয়ম অস্বীকৃতি জানালে তাকে মারপিট করে এক কাপড়ে কোলের শিশু সন্তানসহ বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। তখন থেকেই স্ত্রী মরিয়ম তার বাবার বাড়িতেই অবস্থান করছিল।
এমতাবস্থায় গত ৪ জুন সকাল ১০টার দিকে হঠাৎ রাশেদ মোবাইল ফোনে মরিয়মক বাড়িতে আসতে বললে তিনি শিশু সন্তানসহ বাড়িতে এসে পূর্বের মতো সাংসারিক কাজকর্ম করতে থাকেন। কিন্তু একই দিন বিকেল ৪টার দিকে রাশেদ তার বাবা ও মায়ের প্ররোচনায় আবারো পূর্বের দাবিকৃত যৌতুকের ৫ লাখ টাকা মরিয়মের বাবার বাড়ি থেকে আনতে বলেন। এতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে মারপিট শুরু করেন রাশেদ। একপর্যায়ে ইস্ত্রি দিয়ে মরিয়মের পিঠের বিভিন্ন স্থানে, হাতে ও পায়ে ছ্যাঁকা দেন। এ সময় মরিয়ম গুরুতর আহত হয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। পরে স্থানীয়রা মরিয়মের বাবার পরিবারকে খবর দিলে তারা গিয়ে গুরতর আহত মরিয়মকে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে।
চিকিৎসাধীন মরিয়ম বেগম বলেন, আমার স্বামী দীর্ঘদিন থেকেই যৌতুকের দাবিতে আমাকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করছিল। বিভিন্ন সময়ে অন্যত্র বিয়ে করে আমাকে তালাক দেওয়ার হুমকি-ধমকিও দিত। সংসারের চিন্তা করে চাপা কষ্টে সব মেনে চলছিলাম। কিন্তু সেদিন আমি মারাও যেতে পারতাম। পোড়া জায়গাগুলোতে অনেক যন্ত্রণা করে।
গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) তানভীর রহমান কল্লোল জানান, ওই গৃহবধূ এখন আশঙ্কামুক্ত, তার চিকিৎসা চলছে।
গাইবান্ধা সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) ওয়াহেদুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ হাতে পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।
Leave a Reply