অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : গাইবান্ধা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মামুনকে নৃশংসভাবে হত্যার পর দুর্বৃত্তরা ক্ষান্ত থাকেনি। এরপর তার বাড়িতে এসে হামলা করে ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছে। তারা মামলা না করার জন্য ভয়ভীতি দেখিয়েছে। মামলা করলে মেরে ফেলা হবে এই হুমকি দিয়ে চলে গেছে।
নিহত সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আবদুল্যা আল মামুন মণ্ডলের মা রনজিনা বেগম এসব কথা জানান। এ সময় তার পাশে বসে কান্না করছিলেন নিহত আল মামুনের স্ত্রী দিনা খাতুন। তাদের দুইজনের মাঝে বসে ছিলেন তাঁর এক মাত্র কন্যা ৫ বছরের শিশু আয়াত খাতুন। এছাড়া বাড়িতে ছিল আত্মীয়-স্বজনর ও প্রতিবেশীদের ভিড়। সবাই মামুনের স্মৃতি হাতড়ে কান্নাকাটি করছিলেন।
তিনি আরও বলেন, মামুনকে খুব কষ্ট দিয়ে মেরেছে দুর্বৃত্তরা। তারা মামুনের পায়ের রগ কেটেছে, পায়ের তালুর গোস্ত কেটেছে, হাটুর মালায় কেটে ফেলেছে, হাতের কব্জি ও রগ কেটেছে। মাথাতেও আঘাত করেছে। তারপর মৃত্যু নিশ্চিত করে আমাদের বাড়িতে এসে হামলা করেছে।
তিনি বলেন, “আমি এই হত্যার বিচার চাই, হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।”
মামুনের স্ত্রী দিনা খাতুন বলেন, “বৃহস্পতিবার আমি ও মা (মামুনের মা) রোজা রেখেছিলাম। মামুন বাড়িতে ছিল। বিকেল সোয়া তিনটার দিকে মামুনের একটি ফোন আসে। ফোন পেয়ে সে ধাপেরহাট বাজারে যায়। এ সময় তাকে আমি আমাদের জন্য ইফতারি পাঠানো কথা বলি। সে বলে যায়, তোমাদের ইফতারি যথাসময়ে পাঠিয়ে দিবো। কিন্তু বিকেল পাঁচটার পর খবর পাই, ওকে মেরে ফেলা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে।” তিনি হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানান।
সবার আহাজারি দেখে এদিক-সেদিক তাকাচ্ছিল মামুন ও দিনার পাঁচ বছর বয়সী কন্যা শিশু আয়াত খাতুন। সে কী করবে কিছুই বুঝতে পারছিল না। এ সময় বিছানায় আহাজারি করছিলেন মামুনের বড় ভাই রকি মণ্ডল।
মামুনের বড় ভাই রকি মণ্ডল জানান, গত ৩-৪ বছর থেকে আল মামুন দলের সাথে সক্রিয় ছিলো না। দীর্ঘদিন থেকে মামুন ক্রিকেট খেলা নিয়ে ব্যস্ত ছিলো। সে বর্তমানে বিপিএলের সিলেট দলের নেট ফাস্ট বোলার ছিলো। আমি ভাই হত্যার বিচার চাই।
এদিকে আজ শুক্রবার দুপুরে মামুন মণ্ডলের বাবা অব্দুল মান্নান মণ্ডল বাদী হয়ে সাদুল্লাপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এ মামলায় ২৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া আরও ২০ থেকে ২২ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। তবে শুক্রবার রাত ৮টা পর্যন্ত এই ঘটনায় কেউ গ্রেপ্তার হয়নি বলে জানান পুলিশ।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন সাদুল্লাপুর থানার ওসি তাজ উদ্দিন খন্দকার জানান, ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ইতোমধ্যে পুলিশ দুর্বৃত্তদের চিহ্নিত ও আটক করতে অভিযান শুরু করেছে।
অপরদিকে ময়নাতদন্ত শেষে শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর গাইবান্ধা থেকে গ্রামের বাড়িতে মামুনের লাশ নিয়ে আসার পর এক হৃদয় বিদারক ঘটনার অবতারণা হয়। আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের কান্নায় এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে। পরে বাদ আসর বিকাল সাড়ে ৪ টায় স্থানীয় পীরেরহাট ঈদগাঁ মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
প্রসঙ্গত বৃহস্পতিবার বিকাল পৌনে ৪ টার দিকে এক দল দুর্বৃত্ত দেশীয় ধারালো অস্ত্র নিয়ে ধাপরেহাট জামদানি সড়ক মোড় এলাকায় মামুনের ওপর হামলা করে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে জখম করে। খবর পেয়ে তার স্বজনরা ঘটনাস্থলে এসে তাকে উদ্ধার করে পার্শ্ববর্তী রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার নিয়ে যায়। কিন্তু পথিমধ্যে তার মৃত্যু হয়। পরে তার লাশ নিয়ে এলাকাবাসী ধাপেরহাট বন্দরে অবস্থান নিয়ে ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক দুইঘন্টা অবরোধ করে রাখে।
Leave a Reply