বশির আল-মামুন, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাটে ১২ বছর পূর্বে ফ্লাইওভার নির্মাণের সময় তিনটি গার্ডারধসে ১৩ জন নিহতের ঘটনায় করা মামলায় ৮ আসামিকে দুটি পৃথক ধারায় সাত বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। বুধবার (১০ জুলাই) অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ শরীফুল আলম ভূঁঞার আদালত এ রায় প্রদান করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের বেঞ্চ সহকারী ওমর ফুয়াদ।
রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন দণ্ডিত আট আসামি। পরে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়।
মামলায় দণ্ডিত আট আসামিরা হলেন মীর আক্তার অ্যান্ড পারিশা ট্রেড সিস্টেমস (জেভি) বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের প্রজেক্ট ম্যানেজার মো. গিয়াস উদ্দীন, সুপারভিশন ইঞ্জিনিয়ার মো. মনজুরুল ইসলাম, কোয়ালিটি কন্ট্রোল ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল হাই, মো. মোশরাফ হোসেন রিয়াজ, ডিরেক্টর (অ্যাডমিন) প্রকৌশলী মো. শাহজাহান আলী, আব্দুল জলিল, আমিনুর রহমান ও রফিকুল ইসলাম।
আদালতের বেঞ্চ সহকারী ওমর ফুয়াদ বলেন, ‘বহদ্দারহাটে নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের গার্ডার ভেঙে ১৩ জন নিহত এবং ২৭ জন আহত হওয়ার ঘটনায় করা মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। এ মামলায় ২৮ সাক্ষীর মধ্যে ২২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। আসামিপক্ষের সাত জন এ মামলায় সাফাই সাক্ষ্য দিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘রায়ে দুটি পৃথক ধারায় প্রত্যেক আসামিকে সাত বছর কারাদণ্ড এবং তিন লাখ টাকা অর্থদণ্ড এবং অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। এর মধ্যে আদালত ৩০৪ ধারায় আসামিদের ৫ বছর কারাদণ্ড, তিন লাখ টাকা অর্থদণ্ড এবং অনাদায়ে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া ৩৩৮ ধারায় প্রত্যেক আসামিকে ২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। রায় একটির পর একটি কার্যকর হবে।’
চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আব্দুর রশিদ বলেন, ‘বহদ্দারহাটের নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের তিনটি গার্ডারধসের ঘটনা ছিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অবহেলা। এ কারণে এতগুলো হতাহতের ঘটনা ঘঠেছে। এত বড় অবহেলায় জড়িত আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ আমরা আদালতে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। আদালত আট আসামিকে দুটি ধারায় সাত বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড, তিন লাখ টাকা অর্থদণ্ড এবং অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন।’
আসামিপক্ষের আইনজীবী এস ইউ এম নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এ রায়ে সংক্ষুব্ধ। উচ্চ আদালতে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবো।’
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় হঠাৎ বিকট শব্দে ধসে পড়ে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটের নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের তিনটি গার্ডার। এতে চাপা পড়ে ১৩ জন প্রাণ হারান। আহত হন অর্ধশত লোক। এ ঘটনায় ২০১২ সালের ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মীর আখতার অ্যান্ড পারিসা ট্রেড ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠানসহ ২৫ জনকে আসামি করে নগরীর চান্দগাঁও থানায় মামলা করে পুলিশ। চান্দগাঁও থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) আবুল কালাম আজাদ মামলটি দায়ের করেন।
এরপর ২০১৩ সালের ২৪ অক্টোবর এজাহারবর্হিভূত একজনসহ আট জনকে অভিযুক্ত করে প্রতিবেদন জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা চান্দগাঁও থানার তৎকালীন পরিদর্শক (তদন্ত) এস এম শহীদুল ইসলাম।
অভিযোগ আমলে নিয়ে ২০১৪ সালের ১৮ জুন আট জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ এস এম মজিবুর রহমান। অভিযুক্ত সবাই মীর আখতার অ্যান্ড পারিসার (জেবি) ওই সময়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী।
Leave a Reply