ঝিনাইদহ প্রতিনিধি : ঝিনাইদহের হরিনাকুন্ডুতে নিয়ম নীতির কোন প্রকারের তোয়াক্কা না করেই একের পর এক সরকারি গাছ কাটার অভিযোগ উঠেছে। ওপেন টেন্ডার, বিজ্ঞপ্তি-প্রচারণা ছাড়াই চলছে এসব গাছকাটার উৎসব। আর এসব গাছ কেটে কখনো সরাসরি বিক্রি করা হচ্ছে আবার কখনো নিয়ে যাওয়া হচ্ছে স্থানীয় স’মিলে। অভিযোগ উঠেছে, উপজেলাজুড়ে এইসব সরকারী গাছ কাটার পৃষ্ঠপোষকতা করছেন হরিনাকুন্ডু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসাইন।
জানা যায়, হরিনাকুণ্ডুতে ভালো গাছকে ‘ঝুকিপূর্ণ গাছে’র তকমা লাগিয়ে দফায় দফায় অসংখ্য সরকারী গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসাইনের ছত্রছায়ায় তার অনুসারীরা দিনে দুপুরে কেটে চলেছেন এইসব সরকারী গাছ। জানা যায়, উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসাইন ইউএনও’র কাছে তদ্বির করে এবং ক্ষেত্র বিশেষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উপর অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে ভালো গাছকে ‘ঝুকিপূর্ন’ আখ্যা দিয়ে তা কাটার মৌখিক অনুমতি পাইয়ে দেন। অনেকক্ষেত্রে ইউএনও’কে কিছু না জানিয়েই ইউএনও’র নাম ভাঙিয়ে সরকারী গাছ কর্তন করা হয় বলে জানা যায়।
উপজেলা চেয়ারম্যানের প্রকাশ্য পৃষ্ঠপোষকতা থাকায় এইসব চক্রের বিরুদ্ধে পুলিশ প্রশাসনও কোন পদক্ষেপ নিতে পারছেন না।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে রাস্তার পাশের সরকারী ফলদ ও বনজ গাছ কেটে ফেলার সত্যতা পাওয়া যায়।
জোড়াদাহ ইউনিয়নের জটারখাল বাজারসহ হরিশপুর গ্রামের নায়েব বিডিআর এর বাড়ির সামনের রাস্তার পাশের ১টি সরকারী গাছ, জটারখাল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের ৩ টি বাবলা গাছ, লালনশাহ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে রাস্তার পাশের ২ টি বাবলা গাছ, তাহেরহুদা গ্রামের মান্নান আলীর বাড়ির সামনে রাস্তার পাশের একটি জামগাছসহ উপজেলার প্রায় শতাধিক ভালো গাছকে ‘ঝুঁকিপূর্ন গাছে’র তকমা দিয়ে সেগুলো তার অনুসারীদেরককে দিয়ে কাটিয়ে বিক্রি করান বলে জানা যায়।
সর্বশেষ হরিনাকুন্ডুর পৌর এলাকার ওয়াপদা সংলগ্ন রাস্তার পাশের ২ টি সতেজ শিশু গাছকে ‘ঝুকিপূর্ণ গাছে’র ভূয়া তকমা লাগিয়ে কোন প্রকার টেন্ডার ও বিজ্ঞপ্তি প্রচারণা ছাড়াই কেটে ফেলা হয়েছে। জাহাঙ্গীর হোসাইন ইউএনও’র এর নিকট জোর তদ্বির চালিয়ে পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাজা মন্ডলকে দিয়ে গাছ দুইটি কাটান বলে জানা যায়। গাছ দুইটি উপজেলার একটি স’মিলে বিক্রির উদ্দেশ্য আনা হলে
বিষয়টি জানাজানি হয় এবং এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ঐ দুইটি গাছ একিম উদ্দীনের স’মিলে পড়ে থাকতে দেখা যায়। কাউন্সিলর রাজা মন্ডল সরকারী ঐ দু’টি গাছ অবৈধভাবে কর্তনের বিষয়ে এই প্রতিবেদকের নিকট স্বীকার করে বলেন, মেয়র ফারুক হোসেনের নির্দেশে গাছ দু’টি আমি কেটেছি। উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনও এর মৌখিক অনুমতি দিয়েছেন।
মেয়র ফারুক হোসেন বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যানের মাধ্যমে ইউএনও’র নিকট থেকে মৌখিক অনুমতি নেওয়া হয়েছে।
বুধবার ( ২০ সেপ্টেম্বর ) দুপুরে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে ঐ দুইটি গাছ কাটার বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনও কোন মৌখিক অনুমতি দিয়েছেন কিনা সে বিষয়ে হরিনাকুন্ডু প্রেসক্লাবের সভাপতি সুদিপ্ত সালাম জানতে চেয়ে তদন্তপূর্বক দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসাইন গাছ কাটার বিষয়ে জানতেন বলে স্বীকার করেন। কোন প্রক্রিয়ায় এবং কিভাবে অনুমতি দেওয়া হলো এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
এভাবে ভুয়া অজুহাতে একের পর এক সরকারী গাছ কর্তনে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন উপজেলার সচেতন মহল। তারা সকল সরকারী গাছ কাটার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্হা নেওয়ার আহবান জানিয়েছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুস্মিত সাহা সরকারী গাছ কর্তনের বিষয়ে বলেন, আমি কোন সরকারী গাছ কাটার বিষয়ে কখনোই কাউকে মৌখিক অনুমতি দেয়নি। আর জেলা পরিষদের আওতাধীন ২ টা গাছ কর্তনের বিষয়ে ব্যবস্হদ নিতে আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলব।
জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম হারুন অর রশিদ বলেন,
জেলা পরিষদের আওতাধীন ২ টি গাছ কর্তনের বিষয়ে আমাদের নিকট অভিযোগ এসেছে। আমরা তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেব।
এ বিষয়ে ইয়ারুল ইসলাম (উপ-পরিচালক স্হানীয় সরকার) বলেন, মৌখিক অনুমতি বলে কোন অনুমতি নেই। মৌখিক অনুমতির ভিত্তিতে সরকারী গাছ কাটার কোন সুযোগও নেই। আর সর্বশেষ ২ টি গাছ কর্তনের বিষয়ে জেলা পরিষদের গাছ হলে জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ এটার সুরাহা করবেন।
Leave a Reply