অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : আগ্রার তাজ মহলকে ঘিরে ইতিহাস খতিয়ে দেখার আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। ভারতের সর্বোচ্চ আদালত পর্যবেক্ষণে বলেছেন, তাজ মহল যেমন আছে, থাকতে দিন, ৪০০ বছরের ইতিহাস বদলানো যায় না। সোমবার (৫ ডিসেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এমআর শাহ ও বিচারপতি সি টি রবিকুমারের ডিভিশন বেঞ্চে সেই আবেদন খারিজ হয়ে গেলো।
তাজ মহল সম্পর্কে শিশুতোষ বইয়ে যে ইতিহাস ছাপা হয়েছে, তা আদৌ সঠিক নয় বলে দাবি করে আদালতের কাছে আবেদন করে জনস্বার্থে মামলা করেছিলেন এক ব্যক্তি। নতুন করে সেই ইতিহাস খতিয়ে দেখে পাঠ্য বইতে ‘বস্তুনিষ্ঠ’ ইতিহাসের অবতারণা করা প্রয়োজন বলেও দাবি জানিয়েছিলেন তিনি।
তাজ মহল নিয়ে জনস্বার্থ মামল করেন সচ্চিদানন্দ পাণ্ডে। তার পক্ষে মামলা লড়েন আইনজীবী বরুণ কুমার সিনহা। তার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি বলেন, ‘ছোটখাটো অনুসন্ধানে জনস্বার্থবিষয়ক মামলা করা যায় না। তাজ মহল ৪০০ বছর ধরে রয়েছে। ওটা যেমন আছে থাকতে দিন। আপনি এ বিষয়ে সিদ্ধান্তের ভার এএসআই-এর উপরেই ছেড়ে দিন। সব কিছুতে আদালতকে টেনে আনবেন না। ৪০০ বছর পর ইতিহাসের পাতা নতুন করে খোলা যায় না। প্রত্নতত্ত্বের বিষয়ে আদালতের কোনও পারদর্শিতাও নেই।’
সম্প্রতি তাজ মহল নিয়ে এক ধরনের বিতর্ক শুরু হয় দেশটিতে। একাংশের অভিযোগ, আগরার এই স্থাপত্যের বয়স অনেক পুরোনো। মুঘল আমলে নয়, তার আগে থেকেই তাজ মহলের অস্তিত্ব রয়েছে। মুঘল সম্রাট শাহজাহান তার মৃত স্ত্রী মমতাজের স্মৃতির উদ্দেশে তাজ মহল তৈরি করেছিলেন বলে যে ইতিহাস প্রচলিত রয়েছে, তা মানতে নারাজ তারা। এ প্রসঙ্গে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া (এএসআই)-র নতুন করে গবেষণা প্রয়োজন বলেও দাবি করা হয়।
সোমবার মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি মামলাকারীর উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি আবেদনে জানিয়েছেন, ভুল ইতিহাস পরিবর্তন করতে হবে। তার মানে আপনি নিজেই ধরে নিয়েছেন, তাজ মহলের ইতিহাস ভুল?’
তাজ মহল নিয়ে দেশটির সুপ্রিম কোর্টে মামলা এবারই প্রথম নয়। গত অক্টোবরে তাজ মহলের নির্দিষ্ট কয়েকটি ঘর খুলে দেখার আবেদন জানিয়ে মামলা হয়েছিল শীর্ষ আদালতে। সেখানে দাবি করা হয়, তাজ মহলের স্থানে আগে একটি শিব মন্দির ছিল, যার নাম তেজো মহালয়। যথাযথ বিশ্লেষণের মাধ্যমে সেই ইতিহাস পুনরুদ্ধার সম্ভব। সুপ্রিম কোর্টের একই বেঞ্চ সেই আবেদনও খারিজ করে দেয়।
তাজমহল ভারতের উত্তর প্রদেশে আগ্রায় অবস্থিত একটি রাজকীয় সমাধি। মুঘল সম্রাট শাহজাহান তার স্ত্রী আরজুমান্দ বানু বেগম যিনি মুমতাজ মহল নামে পরিচিত, তার স্মৃতিতে এই অপূর্ব সৌধটি নির্মাণ করেছিলেন।
তাজমহলকে মুঘল স্থাপত্যশৈলীর একটি আকর্ষণীয় নিদর্শন হিসেবে ধরা হয়, যার নির্মাণশৈলীতে পারস্য, তুরস্ক, ভারতীয় ও ইসলামী স্থাপত্যশিল্পের সম্মিলন ঘটানো হয়েছে। ১৯৮৩ সালে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে তাজ মহলকে তালিকাভুক্ত করে। বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের অন্যতম তাজমহল। সূত্র: এনডিটিভি, আনন্দবাজার
Leave a Reply