অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : দিনাজপুরের বীরগঞ্জে অনুষ্ঠিত হয়েছে একদিনের ‘বউ’ মেলা। এটিকে কেউ কেউ অধিবাসী মেলাও বলে থাকেন। বুধবার (২৫ অক্টোবর) উপজেলার গোলাপগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এ মেলা বসে। প্রায় ২০০ বছর ধরে এখানে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। মেলা থেকে তরুণ-তরুণীরা জীবন সঙ্গী বেছে নেন।
দিনাজপুর ছাড়াও ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নীলফামারীর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির লোকজন মেলায় আসেন। প্রতি বছর দশমীর পরদিন কোনো ধরনের প্রচার-প্রচারণা ছাড়াই হাজার হাজার মানুষ মেলায় উপস্থিত হন। মেলায় আশপাশের জেলার বিভিন্ন গ্রামের বউ, শাশুড়ি, ননদ, জা ও ঝিরা একত্রিত হন। মেলা থেকে আদিবাসী যুবকরা জীবন সঙ্গী বেছে নেন। পরে পরিবারিকভাবে দুই পরিবারের মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে বিয়ে হয়। পরের বছর তাদের পরিচয় তুলে ধরা হতো।
সরেজমিনে দেখা যায়, মেলায় সব বয়সী নারী-পুরুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। বাহারি সব কাচের চুড়ি, রঙিনফিতা, লিপস্টিক, কানের দুল, ঝিনুকের, মাটির তৈরি তৈজসপত্র খেলনা, গৃহস্থালিকাজে ব্যবহারিক দা কুড়াল বাশিঁলাসহ বিভিন্ন খাবারের দোকানে পসরা সাজিয়ে রেখেছেন বিক্রেতারা। এসব অলঙ্কার কিনতে দরদাম করছেন বাড়ির বউ-ঝিরা। বউ মেলায় পুরুষের চেয়ে নারীদের উপস্থিতি ছিল বেশি।
স্থানীয়রা জানায়, প্রায় ২০০ বছর ধরে চলে আসছে মেলাটি। মেলাটি শুরু হয়েছিল মূলত নৃতাত্ত্বিক আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ছেলে মেয়েরা এ মেলায় এসে তাদের জীবন সঙ্গী খুঁজে নেয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মেলাটি পরিণত হয় নৃতাত্ত্বিক আদিবাসীর মিলন মেলায়।
মেলায় কথা হয় বীরগঞ্জ উপজেলার অটল টিটিস মুর্মু ও পিংকি টুডু দম্পতির সঙ্গে। তারা জানায় তিন বছর আগে এ মেলায় তাদের প্রথম দেখা হয়। একে অপরকে পছন্দ করার পর পরিণয়। তারপর পরিবারকে জানায়। দুই পরিবার আয়োজন করে তাদের বিয়ে দেয়। সেই থেকে তারা প্রতিবছর এ মিলন মেলায় ঘুরতে আসেন।
কথা হয় তরুণী জেসমিন টুডু সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি ও আমার বোন মেলায় এসেছি। আমরা সিঙ্গেল। নানি-দাদিদের কাছে শুনেছি এ মেলায় নাকি আদিবাসীরা জীবন সঙ্গী খুঁজে পান। আমরাও খুঁজছি। যদি পছন্দ হয় তাহলে বাড়িতে জানাবো।
সামকে টুডু নামের এক তরুণ জানান, সেজেগুজে মেলায় এসেছি। দেখি কারও নজরে আসতে পারি কিনা। যদি কাউকে পছন্দ হয় তাহলে মনের কথা জানাবো। রাজি হলে পারিবারিকভাবে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাব।
বীরগঞ্জ থানা আদিবাসী সমাজ উন্নয়ন সমিতির সভাপতি শীতল মার্ডী জানান, এক এ মেলার নাম ছিল বউ মেলা। এখন এ মেলা আদিবাসী মিলন মেলা হিসেবে পরিচিত। এখনো অনেকে এ মেলা থেকে জীবন সঙ্গী খুঁজে নেয়।
Leave a Reply