অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : পরনে পায়জামা আর হলদে টি-শার্ট, মাথায় হলুদ রঙের ক্যাপ। নিজের তৈরি দ্বিতল (দোতলা) বাইসাইকেল নিয়ে ঘুরছেন। মাঝেমধ্যে ‘জয়বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগতম জানাচ্ছেন। তার নজরকাড়া বাইসাইকেলের আকর্ষণ নৌকা। যেখানে লেখা রয়েছে- মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর রংপুরে আগমন উপলক্ষ্যে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আর ওই বাইসাইকেল চালককে ঘিরে ফোনে ছবি তুলছেন আগত লোকজন।
এই ব্যক্তির নাম ছাবেদ আলী (৪২)। বুধবার (২ আগস্ট) সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মহাসমাবেশ ঘিরে রংপুর জিলা স্কুলের সামনে দেখা হয় তার সঙ্গে। কথা বলে জানা যায়, রংপুরের পীরগাছা উপজেলার তাম্বুলপুর ইউনিয়নের নেকমামুদ থেকে বাইসাইকেল চালিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মহাসমাবেশে এসেছেন তিনি।
ছাবেদ আলী জানান, নেকমামুদ থেকে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাইসাইকেলে চালিয়ে রংপুর শহরে এসেছেন। রাতে জিলা স্কুলের পাশের ফুটপাতেই সবার সঙ্গে বসে গালগল্প করে সময় কাটিয়েছেন। ভোর হতেই নৌকার পক্ষে স্লোগান দিয়ে সমাবেশস্থলের আশপাশে বাইসাইকেল নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রংপুর আগমনের সংবাদ জানতে পেরে আমি এই ব্যতিক্রম বাইসাইকেলটি তৈরি করেছি।
এই বাইসাইকেল নিয়ে গ্রামের হাটবাজারে গণসংযোগ করেছি। আমি টিপু মুনশি স্যারকে ভালোবাসি। আমি শেখ হাসিনার ভক্ত। নৌকার কর্মী, আওয়ামী লীগের সমর্থক। একারণে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় এসেছি, ভাষণ শুনে তারপর বাড়ি যাব।
কথা বলে জানা গেছে, একটা সাধারণ বাইসাইকেলের সাথে আর একটা বাইসাইকেলের বডি যুক্ত করে দ্বিতল বাইসাইকেল তৈরি করেছেন ছাবেদ আলী। তার ওই বাইসাইকেলে ৪টা খুঁটির সাহায্যে মাথার ওপরে বাংলাদেশের পতাকার রঙে একটি নৌকা বসিয়েছেন। নৌকার বৈঠার দুইপ্রান্তে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত নাড়ানো ছবি।
ছাবেদ আলী বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীকে আমার এই দোতলা বাইসাইকেল নৌকা দেখাতে চান। দলের লোকজন আমাকে খুব সাধুবাদ জানাচ্ছেন। তারা আমার সঙ্গে ছবিও তুলছে। এটাই আমার আনন্দ। আমার কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই।
তিনি আরও বলেন, উন্নয়নের জন্য শেখ হাসিনার সরকারের দরকার আছে। আমরা রংপুরের মানুষ অনেক কিছু পেয়েছি। বিভাগ, বিশ্ববিদ্যালয়, সিটি করপোরেশন, মেট্রোপলিটন পুলিশ, গ্যাস, ছয়লেনের মহাসড়কসহ অনেক উন্নয়ন করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবার আমরা চাই শেখ হাসিনা আমাদের তিস্তা নদীর ভাঙন রোধসহ বিজ্ঞানসম্মত ভাবে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ঘোষণা দেবেন। এই তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ শুরু হলে রংপুরের মানুষের ভাগ্য বদলে যাবে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর মহাসমাবেশকে ঘিরে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয় রংপুর মহানগরী। গুরুত্বপূর্ণ সড়কের মোড়ে মোড়ে নিরাপত্তা চৌকি বসানো হয়। নগরীর ২১টি পয়েন্টে করা হয়েছে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। এক হাজারের বেশি সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়।সড়কের প্রবেশ পথগুলোতে সন্দেহভাজন যানবাহন ও ব্যক্তিদের তল্লাশি করা হয়। সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে সমাবেশে আসা-যাওয়া নির্বিঘ্ন করতে কাজ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
এদিকে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রংপুর বিভাগের ৫৮ উপজেলার নেতাকর্মীরা রংপুর জিলা স্কুল অভিমুখে আসতে শুরু করে। বেলা ১২টায় বিভাগীয় এই মহাসমাবেশ শুরু হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন রংপুরের বধূমাতা, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়কপরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সভাপতিত্ব করেন মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ডা. দেলোয়ার হোসেন।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বশেষ রংপুরে এসেছিলেন ২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর। এ সময় তিনি রংপুরের পীরগঞ্জ ও তারাগঞ্জে দুটি নির্বাচনী জনসভা করেন। সাড়ে ৪ বছরের বেশি সময় পর তিনি আবার রংপুরে আসছেন। এর আগে ২০১১ সালের ৮ জানুয়ারি রংপুর জিলা স্কুল মাঠে মহাজোটের জনসভায় উন্নয়নের দায়িত্ব কাঁধে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
Leave a Reply