অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : নওগাঁয় গ্রাম্য সালিশে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ এনে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের এক গৃহবধূর মাথা ন্যাড়া করে ঘোল ঢেলে শুদ্ধ করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মাতব্বরদের বিরুদ্ধে। সোমবার (২৮ আগস্ট) সকাল ৯টার দিকে জেলার বদলগাছী উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের গয়েশপুর বাঁশপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
সেখানে স্থানীয়দের উপস্থিতিতেই পুরোহিত ডেকে ওই নারীর মাথা ন্যাড়া করার পর ঘোল ঢেলে দেওয়া হয়।
জানা যায়, ওই গৃহবধূ দুই সন্তানের জননী। পার্শ্ববর্তী সোনারপাড়া গ্রামের কমল হোসেন নামে বিবাহিত মুসলিম এক যুবকের সঙ্গে তার পরকীয়া সম্পর্ক ছিল। ১০-১২ দিন আগে নিজ বাড়িতে অনৈতিক সর্ম্পক করার সময় গৃহবধূকে তার স্বামী হাতেনাতে ধরে ফেলার অভিযোগ তোলেন। ওই ঘটনার পর গৃহবধূ তার বাবার বাড়িতে চলে যান। শনিবার (২৬ আগস্ট) গৃহবধূ তার বাবার বাড়ি থেকে আবারও স্বামীর বাড়িতে ফিরে আসেন। এরপর গ্রামের মাতব্বরদের সিদ্ধান্তে সোমবার তাকে এভাবে নির্যাতন করে স্বামীর ঘরে তোলা হয়।
এদিকে গ্রাম্য মাতব্বরদের প্রকাশ্য এই নির্যাতনেরর পর ওই গৃহবধূকে দেখতে দুপুরের পর থেকেই তার বাড়িতে ভিড় জমান আশপাশের কয়েকটি গ্রামের শত শত মানুষ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই গ্রামের একাধিক বাসিন্দা বলেন, ভিন্ন ধর্মের হয়েও ওই নারী মুসলিম এক যুবকের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে ছিল। বিষয়টি গ্রামের মুরুব্বিদের নজরে এলে তারা সালিশ ডাকেন। সালিশে গ্রামের মাতব্বরদের রায়ে ওই গৃহবধূর মাথা ন্যাড়া করে ঘোল ঢেলে শুদ্ধ করা হয়। এই কাজে গৃহবধূর স্বামীরও সম্মতি ছিল।
নিজের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেন ভুক্তভোগী ওই গৃহবধূ। তিনি বলেন, আমি কারোর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক করিনি। গ্রামের মাতব্বরদের সিদ্ধান্তে আমার মাথা ন্যাড়া করে ঘোল ঢেলে দেওয়া হয়েছে। স্বামীর যেহেতু সম্মতি ছিল তাই চাইলেও কারোর বিরুদ্ধে অভিযোগ করার সুযোগ আমার নেই।
ওই গ্রামের বাসিন্দা গোবিন্দ সাহা বলেন, আমার কাছে মনে হচ্ছে ওই গৃহবধূ প্রতিহিংসার শিকার হয়েছে। শুদ্ধ করার এই বিষয়টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নেতা বিমল চন্দ্রের কারণেই হয়েছে। গ্রামের কয়েকজন মাতব্বররা জোটবদ্ধ হয়ে এই সিদ্ধান্ত তাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছেন। এর আগে এই গ্রামে মাথা ন্যাড়া করে ঘোল ঢেলে শুদ্ধ করার ঘটনা কখনো শুনিনি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় মাতব্বর বিমল চন্দ্র বলেন, জোর করে কারো মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া হয়নি। ওই গৃহবধূর সম্মতিতেই মাথা ন্যাড়া করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম বাবু বলেন, কিছুদিন আগে ওই পরিবারে একটা ঝামেলা হয়েছিল। আমি মীমাংসা করে দিয়েছিলাম। তবে মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার ব্যাপারে আমি কিছু জানতাম না। পরে শুনেছি।
বদলগাছী উপজেলা আদিবাসী পরিষদের সভাপতি বৌদ্দ নাথ বলেন, বিষয়টি খুবই অমানবিক। এরকম নিয়ম আছে বলে আগে কখনো শুনিনি।
মথুরাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদ রানা বলেন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর গৃহবধূকে মাথা ন্যাড়া করে মাথায় ঘোল ঢেলে দেওয়ার ঘটনা আমার জানা নেই।
এবিষয়ে বদলগাছী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিয়ার রহমান বলেন, ঘটনা জানার পরই সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply