অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : অপ্রত্যাশিতভাবে ঈদে নতুন পোশাক পেয়ে আত্মহারা নাটোর জেলার হতদরিদ্র শিশুরা। ওদের চোখে মুখে আনন্দ ধারা, অনেকে বাকরুদ্ধ। জেলা প্রশাসক আসমা শাহিন হ্যাপি ড্রিমস্ ফাউন্ডেশন পরিচালিত স্বপ্নকলি স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য আয়োজিত ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে তাদের হাতে এই ঈদের পোশাক তুলে দেন।
স্বপ্নকলি স্কুলের প্রথম শ্রেণীর শিক্ষার্থী রাজু। শহরের রেল ষ্টেশনের পাশে বিদ্যুৎবিহীন একটা খুপরী ঘরে মা আর বড় ভাইয়ের সাথে ওর বাস। বাবা নেই, ষ্টেশনের প্লাটফর্মে মানুষের কাছে হাত পেতে মা যা সাহায্য পান, তাই দিয়ে চলে খাওয়ার বন্দোবস্ত। বড়ভাই একটা পুকুরে রাতের পাহারাদার। নতুন পোষাক পেয়ে রাজুর চোখে তাই আনন্দাশ্রু।
চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী সোনিয়ার অবস্থানও রেল ষ্টেশনের খুপরী ঘরে। মানসিক ভারসাম্যহীন নিখোঁজ বাবাকে তিন মাস পর সবে খুঁজে পাওয়া গেছে। মা একটা রেষ্টুরেন্টে রান্নার কাজ করেন। মায়ের অল্প আয়ের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরনো অবস্থা।
ঈদের পোশাক পাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় সোনিয়া বলেন, অনেক দিন পরে নতুন পোষাক পেলাম। খুব ভালো লাগছে। তবে আমার মায়ের শাড়িও তো অনেক মলিন। জানিনা, কোথাও থেকে নতুন শাড়ি মা পাবে কি না!
শহরের চকবৈদ্যনাথ এলাকায় অবস্থিত বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হ্যাপি ড্রিমস্ ফাউন্ডেশন এক দশকের বেশি সময় ধরে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের স্কুল ‘স্বপ্নকলি’ পরিচালনা করছে। এই স্কুলে বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৪৬ জন। হ্যাপি ড্রিমস্ ফাউন্ডেশন এসব শিক্ষার্থীদের জন্যে গতকাল সন্ধ্যায় স্থানীয় রাণী ভবানী রাজবাড়ি চত্বরে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে। এতে স্বপ্নকলির ৬৬জন শিক্ষার্থী অংশ নেয় । ইফতার মাহফিলে উপস্থিত জেলা প্রশাসক শিক্ষার্থীদের সাথে মতবিনিময় শেষে শুভেচ্ছা উপহার হিসেবে শিশুদের ঈদের পোষাক প্রদান করেন। নাটোর জেলা প্রশাসন ও সদর উপজেলা প্রশাসন কর্তৃপক্ষের সৌজন্যে শিশুদের এই ঈদের পোশাক উপহার দেয়া হয়। ইফতার পূর্ব দোয়া পরিচালনা করেন স্বপ্নকলি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী রিদোয়ান।
হ্যাপি ড্রিমস্ ফাউন্ডেশনের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান সৈকত জানান, স্কুলের প্রায় সকল শিক্ষার্থীই হত-দরিদ্র পরিবারের সন্তান। পড়াশুনার পাশাপাশি ছবি আঁকা, কুটির শিল্পপণ্য তৈরীসহ সৃজনশীল কাজে শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার কাজ শ্রেণিকক্ষেই সম্পন্ন করে দেওয়া হয়। তাই রোজার মধ্যেও স্কুল খোলা আছে। সাতজন শিক্ষক তাদের সুনাগরিক হিসেবে তৈরী করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
হ্যাপি ড্রিমস্ ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সুষ্ময় দাস জানান, নয়জন নির্বাহী সদস্য ছাড়াও ফাউন্ডেশনের মোট সদস্য ৬০জন, আছেন আড়াইশ’ স্বেচ্ছাসেবক। অসংখ্য মানুষের ভালোবাসা আর সহযোগিতাই আমাদের পথ চলার শক্তি।
জেলা প্রশাসক আসমা শাহীন বলেন, স্বপ্নকলি স্কুলটি যেন বাতিঘর। আলো ছড়াচ্ছে। শিক্ষার্থীদের ঈদের আনন্দে অংশীদার হতে পারা অনেক প্রশান্তির। সমাজের সকল বিত্তবান ব্যক্তিরা হ্যাপি ড্রিমস্ ফাউন্ডেশনের কাজের মত জনকল্যাণমূলক কাজে এগিয়ে আসলে সমাজ উপকৃত হবে।