অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : আইনশৃঙ্খলার উন্নয়ন ও ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষায় নিজেদের ক্ষমতা বাড়াতে চান জেলা প্রশাসকরা (ডিসি)। সে কারণে চলমান ডিসি সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের কাছে এক গুচ্ছ প্রস্তাব দিয়েছেন ডিসিরা। এ প্রস্তাবগুলোর মধ্যে বাছাইকৃত ১১টি প্রস্তাবসহ এ সম্মেলনে মোট ৩৫৪টি প্রস্তাব উত্থাপন হবে বলে জানা গেছে। গতকাল রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) থেকে শুরু হওয়া ডিসি সম্মেলন শেষ হবে মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি)।
ডিসি সম্মেলনের প্রস্তাব থেকে জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা উন্নয়নে নিজেদের ক্ষমতা বাড়াতে বেশ কয়েকটি প্রস্তাব দিয়েছেন ডিসিরা। মাগুরা জেলা প্রশাসক প্রস্তাব দিয়েছেন সব জেলায় ‘স্পেশাল ডেডিকেটেড রেসপন্স ফোর্স’ গঠনের জন্য। এ ফোর্স জেলা প্রশাসকের অধীনে মোবাইল কোর্ট ও উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা, ত্রাণ বিতরণ, দুর্যোগকালীন সেবা দেওয়াসহ জরুরি কার্যক্রমে অংশ নেবে। প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেছেন, এ ধরনের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা পর্যায়ে অবস্থিত বাহিনীগুলোর কার্যালয়ের দূরত্ব, প্রস্তুতিমূলক কারণে সময় ক্ষেপণ হয়। ফলে অনেক ক্ষেত্রে সরকারি ও জনস্বার্থ বিঘ্নিত হয়।
জানা যায়, তার এ প্রস্তাবকে ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ মনে করছে, জেলা প্রশাসকের অধীনে ১৫ জনের এ ধরনের একটি ফোর্স থাকতে পারে।
মাগুরা জেলা প্রশাসক মো. অহিদুল ইসলাম উত্থাপিত প্রস্তাবে বলেছেন, জেলা ম্যাজিস্ট্রেটরা নিজে বা তার এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটরা বিভিন্ন সময়ে মোবাইল কোর্ট, উচ্ছেদ অভিযান, বিভিন্ন জরুরি পরিস্থিতিতে ত্রাণ বিতরণ ও দুর্যোগে তাৎক্ষণিক সেবা দেওয়ার কাজ করেন। এসব কাজ প্রায়ই অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে থাকে। নিজস্ব সুরক্ষা ও এ ধরনের জরুরি সেবা কার্যক্রম দ্রুত করার জন্য জেলা প্রশাসকের অধীনে একটি ‘স্পেশাল ডেডিকেটেড রেসপন্স ফোর্স’ গঠন করা যেতে পারে।
এছাড়া অপরাধ ডেটাবেজ ও ন্যাশনাল আইডি ডেটাবেজে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) প্রবেশাধিকার চেয়েছেন ডিসিরা। বর্তমানে এসব ডেটাবেজে শুধু জেলা ও উপজেলার পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রবেশাধিকার রয়েছে।
এ প্রস্তাবে বলা হয়েছে, জেলা পর্যায়ে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটরা এবং উপজেলা পর্যায়ে ইউএনওরা তাদের নিজ নিজ অধিক্ষেত্রে জেলা বা উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। জেলা ও উপজেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে উল্লিখিত ডেটাবেজে প্রবেশাধিকার দেওয়া হলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে।
এছাড়া ডিসিরা ভ্রাম্যমাণ আদালত আইন, ২০০৯-এর বিধিমালা তৈরির প্রস্তাব দিয়েছেন।
এতে বলা হয়েছে, সাধারণ আইন প্রণয়নের পর ওই আইন কার্যকরভাবে প্রয়োগের স্বার্থে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে বিধিমালা প্রণীত হয়। কিন্তু ভ্রাম্যমাণ আদালত আইন, ২০০৯ প্রণীত হলেও এখন পর্যন্ত কোনো বিধিমালা তৈরি করা হয়নি। আইনটির যথার্থ কার্যকারিতার স্বার্থে ভ্রাম্যমাণ আদালত বিধিমালা প্রণয়ন করা প্রয়োজন। মোবাইল কোর্ট আইনের কিছু ধারার অর্থদন্ড যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন চাঁদপুরের ডিসি।
গাইবান্ধা ও সাতক্ষীরা জেলার ডিসিরা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) ওপর নিয়ন্ত্রণ আনতে তাদের বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন (এসিআর) নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনার প্রস্তাব দিয়েছেন।
এতে বলা হয়েছে, বর্তমানে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ডিসি ও ইউএনওরা আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কমিটির প্রধান হলেও এসপি ও ওসিদের বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন (এসিআর) তাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ১৯৭৭ সালের আগ পর্যন্ত এ ক্ষমতা ডিসিদের হাতে ছিল।
সাতক্ষীরার ডিসি প্রস্তাবে বলেছেন, জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কমিটির প্রধান হলেও প্রকৃতপক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর কোনো দাপ্তরিক নিয়ন্ত্রণ না থাকায় অনেক ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে পড়ে। এ কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ক্ষেত্রে বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রয়োজন। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য তিনি দায়িত্বশীল ও তাকে জবাবদিহি করতে হয়। ফলে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক পুলিশের কার্যক্রমের মূল্যায়ন প্রয়োজন। জেলা পুলিশের কার্যক্রমকে আরও স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করতে এবং জনকল্যাণমূলক পুলিশ বাহিনী বাস্তবায়নে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক মূল্যায়নের প্রয়োজনীয়তার কথা প্রস্তাবে বলা হয়েছে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক পুলিশের মারণাস্ত্র ব্যবহার বন্ধ এবং ডিউটিকালীন পুলিশের শরীরে বডি ক্যামেরা ব্যবহার করার প্রস্তাব করেছেন। জুলাই-আগস্ট সময়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি এ প্রস্তাব করেন।
এতে বলা হয়, পুলিশের মারণাস্ত্র ব্যবহার নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন। ছররা গুলি মানবদেহে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এছাড়াও সার্কিট হাউস জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা কেপিআই নিরাপত্তায় অন্তর্ভুক্তকরণের প্রস্তাব দিয়েছেন ডিসিরা।
Leave a Reply