অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ইরান যদি আবার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বা পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি পুনর্গঠনে অগ্রসর হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র আরেকটি বড় ধরনের হামলায় সমর্থন দিতে পারে—এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একই সঙ্গে হামাস নিরস্ত্র না হলে ‘গুরুতর পরিণতি’র সতর্কবার্তাও দিয়েছেন তিনি।
সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) ফ্লোরিডার মার-এ-লাগোতে নিজের বাসভবনে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প এসব কথা বলেন। তিনি ইঙ্গিত দেন, জুনে যুক্তরাষ্ট্রের বড় ধরনের হামলার পরও তেহরান হয়তো ভিন্ন স্থানে অস্ত্র কর্মসূচি পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করছে।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমি পড়েছি যে তারা আবার অস্ত্র ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে এগোচ্ছে। যদি তা সত্য হয়, তাহলে তারা সেই জায়গাগুলো ব্যবহার করছে না যেগুলো আমরা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করেছি—সম্ভবত অন্য জায়গা ব্যবহার করছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ঠিক জানি তারা কোথায় যাচ্ছে, কী করছে। আমি আশা করি তারা এটা করছে না, কারণ আমরা আবার বি–২ বোমারু বিমানে জ্বালানি নষ্ট করতে চাই না। যাওয়া–আসা মিলিয়ে ৩৭ ঘণ্টার পথ—এত জ্বালানি নষ্ট করার ইচ্ছে নেই।’
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তেহরানের সঙ্গে সম্ভাব্য পারমাণবিক চুক্তির কথা তুললেও ট্রাম্প জানান, নেতানিয়াহুর সঙ্গে তার আলোচনার মূল বিষয় ছিল গাজায় তার মধ্যস্থতায় হওয়া ভঙ্গুর শান্তিচুক্তিকে এগিয়ে নেওয়া এবং ইরান ও লেবাননের হিজবুল্লাহ নিয়ে ইসরায়েলের উদ্বেগ।
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে জুনে ১২ দিনের যুদ্ধের পর গত সপ্তাহে তেহরান জানিয়েছে, তারা এ মাসে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষেপণাস্ত্র মহড়া চালিয়েছে। এদিকে নেতানিয়াহু বলেন, ইসরায়েল ইরানের সঙ্গে সংঘাতে যেতে চায় না, তবে প্রতিবেদনের বিষয়ে তিনি অবগত এবং এ বিষয়টি ট্রাম্পের সঙ্গে তুলবেন।
ট্রাম্প জানান, অক্টোবর মাসে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে হওয়া যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপে যেতে চান তিনি। এ ধাপে গাজায় আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েনের বিষয়টি রয়েছে। তবে ইসরায়েল ও হামাস একে অপরের বিরুদ্ধে চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ তুলছে, ফলে পরবর্তী ধাপের কঠিন শর্তগুলোতে অগ্রগতি নেই। হামাস নিরস্ত্র হতে অস্বীকৃতি জানিয়ে নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে, আর ইসরায়েলি সেনারা এখনো প্রায় অর্ধেক এলাকায় অবস্থান করছে।
ইসরায়েল স্পষ্ট করেছে, হামাস শান্তিপূর্ণভাবে নিরস্ত্র না হলে সামরিক অভিযান আবার শুরু করা হবে। এ প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, হামাস দ্রুত নিরস্ত্র না হওয়ায় দায় তাদেরই। তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘অস্ত্র না নামালে ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতে হবে।’ এর আগেও তিনি এ ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন।
নেতানিয়াহু জানান, ওয়াশিংটনের উদ্যোগে গাজায় অন্তর্বর্তী শাসনব্যবস্থা গঠনের চাপ থাকলেও ইসরায়েলের কিছু আপত্তি রয়েছে। উল্লেখ্য, ১৭ নভেম্বর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক প্রস্তাবে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েনের ম্যান্ডেট দেওয়া হয়।
বৈঠকের আগে ট্রাম্প নেতানিয়াহুকে উষ্ণভাবে স্বাগত জানান। এ সময় তিনি দাবি করেন, ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজোগ তাকে বলেছেন যে, দুর্নীতির মামলায় নেতানিয়াহুকে ক্ষমা করা হতে পারে—যা হারজোগের দপ্তর তাৎক্ষণিকভাবে অস্বীকার করে। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় নেতানিয়াহু জানান, তিনি ট্রাম্পকে ‘ইসরায়েল প্রাইজ’ উপহার দিচ্ছেন, যা ঐতিহাসিকভাবে কেবল ইসরায়েলিদের দেওয়া হতো।
ট্রাম্পের পরিকল্পনায় শেষ পর্যন্ত ইসরায়েলের গাজা থেকে প্রত্যাহার, হামাসের অস্ত্র ত্যাগ ও শাসন ভূমিকা পরিত্যাগের কথা রয়েছে। প্রথম ধাপে আংশিক প্রত্যাহার, ত্রাণ বাড়ানো এবং জিম্মি–বন্দি বিনিময় হয়। নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা জানান, পরবর্তী ধাপে যাওয়ার আগে হামাসকে গাজায় থাকা শেষ ইসরায়েলি জিম্মির মরদেহ ফেরত দিতে হবে। ওই জিম্মির পরিবারও নেতানিয়াহুর সফরসঙ্গী দলে ছিল।
এদিকে মিসরের সঙ্গে রাফাহ সীমান্ত খোলার বিষয়টি এখনো হয়নি। ইসরায়েল বলছে, মরদেহ ফেরত না পাওয়া পর্যন্ত সীমান্ত খোলা হবে না। পশ্চিম তীর নিয়ে ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর মধ্যে মতপার্থক্য থাকলেও ট্রাম্প তা বিস্তারিত বলেননি।
বৈঠকের আগে ট্রাম্প জানান, গাজায় তুর্কি শান্তিরক্ষী মোতায়েনের সম্ভাবনাও আলোচনায় আনবেন—যা সংবেদনশীল বিষয়। গাজায় সহিংসতা পুরোপুরি বন্ধ না হলেও কমেছে। অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলায় ৪০০–এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে; পাল্টা হামলায় তিন ইসরায়েলি সেনা নিহত হন।
নেতানিয়াহু বলেন, সিরিয়ার সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সীমান্ত নিশ্চিত করতে আগ্রহী ইসরায়েল। ট্রাম্পও বলেন, তিনি নিশ্চিত যে ইসরায়েল নতুন সিরীয় প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল–শারার সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছাতে পারবে। তবে ইসরায়েল নতুন নেতৃত্ব নিয়ে সতর্ক; চলতি জুলাইয়ে দামেস্কে সরকারি ভবনে হামলাও চালানো হয়েছে।