অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ‘পটুয়াখালীয গলাচিপা উপজেলার ডাকুয়া ইউনিয়নের বাংলাবাজার এলাকায় পান চুরির মিথ্যা অপবাদ চাপিয়ে কথিত সালিশে দুই স্কুলছাত্রকে বেধড়ক মারধর ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জামাল মোল্লার নেতৃত্বে শনিবার বিকেলে নির্যাতন ও মারধরের ঘটনা ঘটলেও সোমবার এ ঘটনা ফাঁস হয়। এর পরই এলাকার লোকজন এ ঘটনার প্রতিবাদে ফুসে উঠেছে।
তারা অবিলম্বে স্কুল শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনকারীদের গ্রেফতার ও বিচার দাবি করেছে। এদিকে, নির্যাতনের শিকার গুরুতর আহত দুই স্কুলছাত্রকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছে স্থানীয়রা।
মারধর ও নির্যাতনের শিকার বাংলাবাজার এলাকার মো. রফিকুলের ছেলে তরিকুল (১৬) গলাচিপা সরকারি টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটের দশম শ্রেণির ও একই এলাকার মো. রাজ্জাক হাওলাদারের ছেলে রুমান (১৪) গলাচিপার পূর্ব আটখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র।
ভুক্তভোগী ছাত্র ও তাদের পরিবারসহ এলাকার লোকজন জানায়, কথিত সালিশের অন্যতম নায়ক জামাল মোল্লা নিজে যেমন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা। তেমনি তার বাবা কামাল মোল্লা একই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সভাপতি। যে কারণে জামাল মোল্লা (৪৫) এলাকায় কাউকে তোয়াক্কা না করে যখন তখন সালিশ বসিয়ে লোকজনদের হয়রানি করে চলেছে। তার দাপটে এলাকায় কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না।
এরই ধারাবাহিকতায় ননীবালা নামের স্থানীয় এক পানচাষির বরজ থেকে পান চুরি হয়েছে মর্মে অভিযোগ তুলে ঘটনার দিন শনিবার বিকেলে ওই দুই স্কুলছাত্রকে বাংলাবাজারে ডেকে এনে মারধর করা হয়। অথচ পানচাষি ননীবালা এ ধরনের চুরির কোনো অভিযোগ কারও কাছে করেননি। সালিশে ওই দুই স্কুলছাত্রের অভিভাবকদেরও ডাকা হয়নি।
তাদের অনুপস্থিতিতে জামাল মোল্লার সাঙ্গপাঙ্গো হিসেবে পরিচিত আলমাস মোল্লা, জহিরুল মোল্লা, রহমান মোল্লা, কামাল মোল্লা ও সোহেল প্যাদাসহ কয়েক ওই দুই ছাত্রকে লাঠি ও বাঁশের কঞ্চি দিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে তাদের চুরির স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করে। এরপর জামাল মোল্লা তাদের অভিভাবকদের কাছে ফোন করে তাদের ছেলে পান চুরি করেছে বলে জানায় এবং ছেলেদের ছাড়িয়ে নেয়ার জন্য সালিশের রায় মোতাবেক প্রত্যেকের জন্য ৩০ হাজার টাকা দাবি করে।
স্থানীয় ইউপি মেম্বার জাকির খান এ সময়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে জামাল মোল্লার রায়ের প্রতি সমর্থন জানান বলে কয়েক প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করেন। সালিশকারীরা ওই দুই স্কুলছাত্রের কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষরও আদায় করে। মারধরের শিকার এক শিক্ষার্থীর বাবা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি কাজে ছিলাম। এমন সময় জামাল মোল্লা ফোন দিয়ে বলে তোমার ছেলেকে চুরির পানসহ ধরেছি। আমি অপেক্ষা করতে বললে, তারা অপেক্ষা না করেই ছেলেকে মারধর করেছে। আমার ছেলে কোন চুরি করেনি। তাকে মিথ্যা অপবাদে মারধর করেছে।
পানচাষি ননীবালা জানান, তার কোনো পান চুরি হয়নি। তিনি কারও কাছে কোনো অভিযোগও করেননি। স্থানীয় ইউপি মেম্বার জাকির খান বলেন, সালিশে আমি উপস্থিত ছিলাম না। শেষে আমি গিয়ে তাদের উদ্ধার করে পরিবারের কাছে তুলে দিয়েছি। কোন ধরনের সাদা কাগজে মুচলেকা রাখিনি।
অভিযোগের বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা জামাল মোল্লা বলেন, এক চাষির পান চুরির অভিযোগে স্থানীয় লোকজনের উপস্থিতিতে সালিশ হয়েছে। তাদের কোনো মারধর ও নির্যাতন করা হয়নি। এ বিষয়ে গলাচিপা থানার অফিসার ইনচার্জ শোনিত কুমার গায়েন বলেন, এ সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply