অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : বিশ্ব পরিবেশ দিবসের আলোচনা সভায় বক্তারা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা ও পরিবেশ সুরক্ষায় ‘জাতীয় পরিবেশ কমিশন’ গঠনের প্রস্তাব করেছেন।
‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২৩’ উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তেন আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা আজ এ প্রস্তাব করেন।
“প্লাস্টিক দূষণ সমাধানে সামিল হই সকলে”-প্রতিপাদ্য নিয়ে বিশ্বব্যাপি আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে এসোসিয়েশন অব ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি ইন বাংলাদেশ (এডাব) এ অনুষ্ঠান আয়োজন করে। কঝজগ
বক্তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকারের কর্মপরিকল্পনা ও সময়োপযোগী আইন রয়েছে। এর যথাযথ বাস্তবায়ন, প্রয়োগ ও সমন্বয়ের মাধ্যমে সামগ্রিক পরিবেশ দূষণ রোধ করতে হবে। এজন্য চাই সম্মিলিত উদ্যোগ।
তারা বলেন, প্লাষ্টিকের সর্বগ্রাসী ব্যবহার, ক্রমাগত জনসংখ্যা বৃদ্ধি, ্অপরিকল্পিত নগরায়ন, ইটভাটার নির্গত ধোঁয়া, সুউচ্চ বহুতলভবন নির্মাণ, খালবিল ভরাট, নদী ভরাট ও দখলের কারণে প্রতিনিয়ত আমাদের পরিবেশ বিপর্যস্ত হচ্ছে। এ বিষয়ে সরকার, সাংবাদিক, সুশীল সমাজ ও এনজিও কর্মীদের একত্রে কাজ করতে হবে।
এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর পরিচালক অতিরিক্ত সচিব তপন কুমার বিশ্বাস বলেন, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ ও বৈশ্বিক উন্নয়নের সাথে তাল মেলাতে উন্নয়ন ও শিল্পায়নের কোনো বিকল্প নেই। তাই উন্নয়ন ও শিল্পায়নকে অব্যাহত রেখেই পরিবেশ সংরক্ষণ করতে হবে।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপি প্লাস্টিকের ব্যবহার এখন মানব জীবনের অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। তাই অপচনশীল এই প্লাস্টিক পণ্য পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করে সুষম ব্যাবহারের মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ রোধ করতে হবে। পাশাপাশি পরিবেশ সুরক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় ‘জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট আইন’-এর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক হাসান হাফিজ প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশ সুরক্ষায় দেশে একটি ‘জাতীয় পরিবেশ কমিশন’ গঠনের প্রস্তাব করেন। তিনি বলেন, সরকার, গণমাধ্যম, পরিবেশ বিশেষজ্ঞ, পরিবেশ কর্মী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি জাতীয় পরিবেশ কমিশন গঠন করে পরিবেশ বিপর্যয় মোকাবেলায় সম্মীলিতভাবে কাজ করতে হবে। তিনি পরিবেশ সুরক্ষায় রাজনৈতিক দলগুলোকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
গণমাধ্যম গবেষক ও লেখক শামীমা চৌধুরী বলেন, সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের এই ভয়াবহ আগ্রাসন থেকে মুক্তির কোনো পথ নেই। আর এর প্রথম কাজটি হচ্ছে জনসচেতনতা। তাই পরিবেশ দূষণ রোধে জনসচেতনতা তৈরিতে গণমাধ্যমসহ সকল অংশীগণকে একযোগে কাজ করতে হবে।
আলোচনা সভায় উপস্থাপিত ধারনাপত্রে বলা হয়, বিশ্বজুড়ে প্রতি মিনিটে প্রায় এক মিলিয়ন প্লাস্টিকের বোতল ক্রয়-বিক্রয় হয়। যদিও এখন পর্যন্ত প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী প্রায় পাঁচ ট্রিলিয়ন প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহৃত হয়। মোট উৎপাদিত পণ্যের প্রায় অর্ধেকেরই ডিজাইন করা হয়েছে কেবলমাত্র একবার ব্যবহার করার জন্য। প্রথমবার ব্যবহার করার পরই তা ফেলে দেওয়া হয়। এই ফেলে দেওয়া বা প্রথমবার ব্যবহার করা প্লাস্টিক সামগ্রির প্রায় ৮৫ শতাংশই অপচনশীল বর্জ্য হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। আজ পর্যন্ত সারাবিশ্বে উৎপাদিত সাত বিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্যরে ১০ শতাংশেরও কম বর্জ্য পূনর্ব্যাবহৃত হয়েছে।
জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি ( ইউএনইপি)’র বরাত দিয়ে এই ধারনাপত্রে আরো বলা হয়, অধিকাংশ প্লাস্টিক পণ্যই অপচনশীল হওয়ায় তা মাটির সাথে মিশে যায় না। প্লাস্টিকের মাইক্রো অংশসমূহ শ্বাস-প্রশ্বাস ও ত্বকের মাধ্যমে প্রাণীদের দেহে প্রবেশ করে এবং তা জমাকৃত অবস্থায় থাকে। মানবদেহের ফুসফুস, যকৃত, প্লীহা এবং কিডনিতে প্লাস্টিকের মাইক্রো অংশ পাওয়া গেছে । এমনকি নবজাতকের প্লাসেন্টায় মাইক্রোপ্লাস্টিক বা প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র অংশ পাওয়া গেছে। এতে বলা হয়, প্লাস্টিক সংশ্লিষ্ট রাসায়নিক পদার্থ, যেমন; মিথাইল পারদ, প্লাস্টিকাইজার মানব স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
সরকারি নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে অপ্রয়োজনীয় প্লাস্টিক পণ্য বর্জন, প্লাস্টিক বর্জ্য পূনর্ব্যাবহার, অতিরিক্ত গাছ কাটা বন্ধ, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি, পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে নীতিমালা প্রণয়নসহ ধারনাপত্রে ১৬টি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। এডাবের কর্মসূচি পরিচালক কাউসার আলম কনক এ ধারনাপত্র উপস্থাপন করেন।
এডাব-এর চেয়ারপারসন আব্দুল মতিনের সভাপতিত্বে সূচনা বক্তব্য প্রদান করেন এডাব এর পরিচালক একেএম জসীম উদ্দিন। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন এডাব এর ভাইস চেয়ারপারসন বীর মুক্তিযোদ্ধা মাজেদা শওকত আলী এবং কোস্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী।
Leave a Reply