অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ‘আমরা বাবা-মা ও পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলাম, সমাজের কাছে ছিলাম অবহেলিত। আগে আমাদের কোনো পরিচয় ছিল না। সরকার এখন আমাদের ডিজিটাল আইডি কার্ড দিয়েছে। আমরা জমিসহ ঘর পেয়েছি। এখন আমাদের মর্যাদা ফিরছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমরা ধন্যবাদ জানাই।’
এভাবেই অভিব্যক্তি প্রকাশ করছিলেন রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের গফুর মন্ডল পাড়া এলাকার আশ্রয় প্রকল্পের ঘরের তৃতীয় লিঙ্গের বাসিন্দারা।
জানা গেছে, গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নে গফুর মন্ডল পাড়া এলাকায় ১নং খতিয়ানভুক্ত ২২ শতাংশ জমিতে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের জন্য ঘর করে দিয়েছে সরকার। এখানে তৃতীয় লিঙ্গের ৭ জন সদস্যকে ২২ শতাংশ জমির ওপর পুনর্বাসন করা হয়েছে। তারা প্রত্যেকেই জমির মালিকানাসহ পাকা ঘর পেয়েছেন।
শুধু তাই না, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরা যেন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে ওঠে এজন্য গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি, শাক সবজি ও মাছ চাষের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এক সময়ের অনাশ্রিত তৃতীয় লিঙ্গের অসহায় মানুষেরা এখন স্বপ্ন দেখছে প্রশিক্ষণ নিয়ে বিভিন্ন আয়বর্ধক কাজের।
সরেজমিনে দেখা যায়, তৃতীয় লিঙ্গের বাসিন্দারা আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর সাজিয়েছেন নিজেদের মনের মাধুরি মিশিয়ে। ঘর পাওয়ার আনন্দে তারা আত্মহারা। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের আঙিনায় তারা শাকসবজি চাষ করছেন। এছাড়া গরু, ছাগল ও হাঁস-মুরগি পালন করছেন অনেকে। সমাজের অন্যান্য মানুষের সঙ্গে তারা মিলিয়ে থাকছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরও মিলেছে তাদের। সরকারের তরফ থেকে নেওয়া পুনর্বাসনের নানা পদক্ষেপে এখন বদলে গেছে তাদের জীবনযাত্রা। এখন তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যদের একটাই দাবি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের যাতে একটা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।
তৃতীয় লিঙ্গের সদস্য রোকেয়া আক্তার, রনি চৌধুরী ও অন্তরা খাতুন বলেন, সমাজে আমাদের আগে কোনো মর্যাদা ছিল না। থাকার মতন জায়গাও ছিল না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের থাকার জন্য জমিসহ ঘর দিয়েছে। এখন আমরা অনেক সুখে আছি।
গোয়ালন্দ উপজেলা তৃতীয় লিঙ্গের সভানেত্রী মাহিয়া মাহি বলেন, আমরা বাংলাদেশের নাগরিক ছিলাম না। ২০১৩ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের নাগরিকত্ব দিয়েছে। মুজিব বর্ষ উপলক্ষ্যে আমাদের জমিসহ ঘর দিয়েছে। আমাদের পরিবার ও সমাজের লোক যে ভালোবাসা দেয়নি, প্রধানমন্ত্রী তার চেয়ে বেশি ভালোবাসেন। তার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দীর্ঘজীবী হোন। তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যদের কর্মসংস্থানের দরকার। আমাদের প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে কর্মসংস্থানের দিকে এগিয়ে নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাকির হোসেন বলেন, তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যরা আগে মানবেতর জীবনযাপন করতেন। মুজিব বর্ষ উপলক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যদের জন্য জমিসহ সেমি পাকা ঘর নির্মাণ করে দিয়েছি। সেখানে তারা এখন হাসিখুশিভাবে বসবাস করছে। বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য তাদের নানা ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।
Leave a Reply