অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : রাশিয়ার ভয়াবহ আক্রমণ থেকে নিজেদের আত্মরক্ষার ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য একটি বড় চুক্তির আওতায় ফ্রান্সের তৈরি ১০০টি রাফাল এফ-৪ যুদ্ধবিমান এবং উন্নত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পাচ্ছে ইউক্রেন।
বিবিসি এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
প্যারিসের কাছে একটি বিমান ঘাঁটিতে ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রঁর সাথে একটি সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর করার পর, এই পদক্ষেপকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে স্বাগত জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
২০৩৫ সালের মধ্যে রাফাল এফ-৪ বিমানগুলো সরবরাহের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরিকল্পনা করা হয়েছে এবং চলতি বছরেই শুরু হচ্ছে ইন্টারসেপ্টর ড্রোনের যৌথ উৎপাদন।
যদিও আর্থিক বিষয়গুলো এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের মাধ্যমে অর্থায়নের চেষ্টা করবে ফ্রান্স। এছাড়া জব্দ করা রাশিয়ান সম্পদও ব্যবহারের পরিকল্পনা করা হচ্ছে; এটি এমন একটি বিতর্কিত পদক্ষেপ যা ২৭ সদস্যের ব্লককে বিভক্ত করছে।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) ম্যাক্রোঁর সাথে এক যৌথ ব্রিফিংয়ে জেলেনস্কি বলেন, এটি একটি কৌশলগত চুক্তি যা আগামী বছর থেকে শুরু করে ১০ বছর ধরে চলবে।
এমন এক সময়ে ফ্রান্স এবং ইউক্রেনের মধ্যে এই চুক্তি হলো যখন ইউক্রেনের ঝাপোরিজ্জিয়া প্রদেশে রুশ এবং ইউক্রেনীয় বাহিনীর মধ্যে তুমুল লড়াই চলছে। ইউক্রেনীয় সামরিক বিশ্লেষক সেরহি কুজহান জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রাশিয়া প্রতি মাসে ইউক্রেনে গড়ে ৬০০ বা তারও বেশি গ্লাইড বোমা নিক্ষেপ করছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের যুদ্ধবিমান এবং এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম খুব প্রয়োজন ছিল। ফ্রান্সের কাছ থেকে যে এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম পাওয়া যাবে, সেটির রেঞ্জ ২০০ কিলোমিটার। অর্থাৎ রকেট, বোমা কিংবা ক্ষেপণাস্ত্র ২০০ কিলোমিটারের মধ্যে এলে এটি সেগুলো ধ্বংস করতে পারবে। রাশিয়া বর্তমানে যে এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ব্যবহার করছে, সেটির রেঞ্জ ২৩০ কিলোমিটার।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন ও দপ্তর এলিসি প্রাসাদ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই চুক্তি কেবল একটি ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত সমঝোতা নয়, বরং একটি রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির অংশ। এই প্রতিশ্রুতির অপর অংশ হলো রাশিয়ার ফ্রিজ করা অর্থ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন কর্মসূচিতে পরিকল্পিতভাবে ব্যবহার করা।
ভিল্লাকুব্লে শহরে চুক্তি স্বাক্ষরের পর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ সাংবাদিকদের বলেছেন, আমরা ইউক্রেনকে ১০০ রাফায়েল প্রদানের পরিকল্পনা নিয়েছি। এটা একটা বিশাল ব্যাপার। আমরা মনে করি, আমাদের রাফায়েল, ড্রোন, গোলাবারুদ এবং এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ইউক্রেনীয় সেনাবাহনীকে আরও সংগঠিত করে তুলবে।
প্রসঙ্গত, ফ্রান্সের তৈরি রাফায়েল বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক ও শক্তিশালী যুদ্ধবিমানগুলোর মধ্যে একটি। পঞ্চম প্রজন্মের এই যুদ্ধবিমানের সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ৩ হাজার ৭০০ কিলোমিটার এবং এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার ফুট ওপরে উঠতে সক্ষম। এই যুদ্ধবিমান একই সঙ্গে বেশ কয়েকটি বিভিন্ন পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে পারে ও একাধিক ভারী মেশিনগান সজ্জিত।