23 Nov 2024, 10:31 pm

বান্দরবানে কলাগাছের সুতা দিয়ে তৈরী হলো ‘কলাবতী’ শাড়ি

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

গতকাল রবিবার বিকাল ৩টায় বান্দরবান জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসক আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জেলা প্রশাসক ইয়াসমিন পারভীন তিবরিজী জানান, ফল দেওয়ার পর পরিত্যক্ত কলাগাছের আঁশ থেকে সুতা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। স্থানীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে কলাগাছের সুতায় ব্যাগ, ঝুঁড়ি, ফুলদানি, কলমদানি, ফাইল ফোল্ডার, শোবিজ ও বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র তৈরি করা হয়। এসব জিনিসপত্র তৈরিতে পাহাড়ের ৪০০ নারীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তৈরি করা জিনিষগুলো ব্র্যান্ডিং বান্দরবানের মাধ্যমে স্থানীয় হাটবাজার ও পর্যটকদের মধ্যে বিক্রি করা হয়। এ প্রকল্পের বড় সফলতা কলাগাছের সুতায় শাড়ি তৈরি। এটি বাংলাদেশের তৈরি প্রথম শাড়ি। শাড়িটির নাম দেওয়া হয়েছে কলাবতী শাড়ি। এটি একটি চ্যালেঞ্জ ছিল এবং সফল হয়েছি। পাহাড়ের নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং ব্র্যান্ডিং বান্দরবানের জন্য এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। জেলা প্রশাসকের নেওয়া একটি পাইলট প্রকল্প এটি। বান্দরবান শহরের কালাঘাটা মণিপুরী পল্লিতে প্রথম এই শাড়িটি তৈরি করেছেন রাধাবতী দেবী।

বান্দরবান জেলা প্রশাসক বলেন, কলাগাছের সুতা থেকে শাড়ি তৈরি হওয়ায় তাঁত শিল্পে নতুন দিগন্তের উন্মোচন হয়েছে। এখন এটিকে বাণিজ্যিক করতে গবেষণা ও পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন। তিনি আরো বলেন, প্রথম তৈরি হওয়া শাড়িটি প্রধানমন্ত্রীকে উপহার হিসেবে প্রদান করা হবে।

রাধাবতী দেবী বলেন, বান্দরবান জেলা প্রশাসক তাকে শাড়ি বানানোর জন্য নিয়ে যান। আগে কখনোই  বাংলাদেশে কলাগাছের সুতা থেকে শাড়ি তৈরি হয়েছে এমনটি শোনা যায়নি। তবে ভারতে কলাগাছের সুতা থেকে শাড়ি তৈরি হয়। প্রথমে ভয় পেয়েছিলাম। এখন ভালো লাগছে। আমিই প্রথম কলাগাছের সুতা দিয়ে শাড়ি তৈরি করেছি। প্রথম দিকে আঁশ থেকে সুতা তৈরি করা, সুতাগুলো প্রক্রিয়াকরণ করতে সময় লেগেছে আট দিন। শাড়ির কাপড় বুনতে লেগেছে সাত দিন। তবে আগামীতে সব জিনিসপত্র ঠিকঠাক থাকলে এক দিনেই একসঙ্গে মেশিনে তিনটি শাড়ি তৈরি করা যাবে। সাধারণ একটি শাড়ি বুনতে ৫০০ গ্রাম সুতা লাগলেও কলাগাছের আঁশের সুতায় প্রথম শাড়িটি বুনতে এক কেজির মতো সুতা লেগেছে। একটি শাড়ি তৈরিতে খরচ পড়েছে সাড়ে তিন হাজার টাকার মতো। যখন আরো কম সময়ে এই শাড়ি বানানো যাবে তখন উৎপাদন খরচ আরো অনেক কমে আসবে।

বান্দরবান জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক আতিয়া চৌধুরী বলেন, আমাদের একটি দীর্ঘ যাত্রা সফল হলো। তিনি বলেন, একটি কলাগাছ দিয়ে ২০০ গ্রাম সুতা হয়। সেই হিসেবে পাঁচটি কলাগাছ থেকে এক কেজি সুতা হয়। কলাগাছের সুতা দিয়ে শাড়ি বানানোর ফলে আমরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হব। প্রকল্প বাস্তবায়নে সহযোগী বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইং সাইং উ বলেন, পাহাড়ের নারীদের কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্য নিরসনে কলাগাছের সুতায় শাড়ি তৈরি ছিল এ প্রকল্পের বড় সফলতা। গুণমান ঠিক রেখে শিল্পটি সম্প্রসারণ করা গেলে পার্বত্য অঞ্চলে প্রচুর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছলতা ফিরবে তিন পার্বত্য জেলায়।

সংবাদ সম্মেলনে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক লুত্ফর রহমান, কলাবতী শাড়ি তৈরির প্রশিক্ষক রাধাবতী দেবী, শিক্ষক সাইং সাইং উ ও মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা আতিয়া চৌধুরী।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 10641
  • Total Visits: 1282377
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1668

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ শনিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)
  • ২১শে জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, রাত ১০:৩১

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
    123
252627282930 
       
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018