December 13, 2025, 8:25 am
শিরোনামঃ
ত্রি-মাত্রিক বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় পর্যাপ্ত অর্থায়নের আহ্বান বাংলাদেশের গণভোটে যে চারটি প্রশ্ন থাকবে কোমায় আছেন গুলিবিদ্ধ ওসমান হাদি : চিকিৎসক ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ রংপুরে মুক্তিযোদ্ধা ও তার স্ত্রী খুনের ঘটনায় একজন গ্রেপ্তার সিরাজগঞ্জে পরিত্যক্ত অবস্থায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ২১৩ কেজি চাল উদ্ধার কুমিল্লায় ভুট্টা ক্ষেত থেকে অটোরিকশা চালকের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার স্কুলে কিশোরীদের হিজাব পরা নিষিদ্ধ করলো অস্ট্রিয়া পার্লামেন্ট ভেঙে দিলেন থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ট্রাম্পের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির আলোচনা
এইমাত্রপাওয়াঃ

ব্যাপক পরিবর্তন আসছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্যবইয়ে

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক :  প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্যবইয়ে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। বাংলা ও ইংরেজি বই থেকে সাতটি গদ্য ও পদ্য বাদ দেওয়া হচ্ছে। আর নতুন করে ৮টি গদ্য ও পদ্য যুক্ত হচ্ছে। শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে তিনটি গদ্য, একটি পদ্য ও একটি জীবনী বাদ দেওয়া হচ্ছে। তৃতীয় শ্রেণির একটি বই থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী বাদ দিয়ে সেখানে জাতীয় চার নেতার জীবনী যোগ করা হচ্ছে। শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ ছেলে শেখ রাসেলকে নিয়ে লেখা ইংরেজি গদ্যও বাদ দেওয়া হচ্ছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এনসিটিবি জানিয়েছে, বিনামূল্যে বিতরণের জন্য এবার মোট পাঠ্যবইয়ের সংখ্যা ৪০ কোটির বেশি। পুরোনো শিক্ষাক্রমে বই বেশি হওয়ায় এবার মোট বইয়ের সংখ্যা বেড়েছে। আগামী জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া নতুন শিক্ষাবর্ষে বিনামূল্যের এসব পাঠ্যবই হাতে পাবে শিক্ষার্থীরা। তবে বছরের শুরুতেই সব শিক্ষার্থীর হাতে সব নতুন পাঠ্যবই দেওয়া এখনো নিশ্চিত নয়।

জানা গেছে, গত বছর থেকে দেশে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হয়। চলতি বছর পর্যন্ত প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। আগামী বছর অবশিষ্ট শ্রেণিগুলোতে নতুন শিক্ষাক্রমের বই যাওয়ার কথা ছিল। তবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলে নতুন শিক্ষাক্রম কার্যত বাতিল হয়ে যায়। এরপর ২০১২ সালে প্রণয়ন করা পুরোনো শিক্ষাক্রমের আলোকে পাঠ্যবই পরিমার্জনের সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী কিছু সংযোজন-বিয়োজন করে বই ছাপানোর উপযোগী করা হয়েছে।

যেসব বিষয় বাদ যুক্ত হচ্ছে : এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, প্রথম শ্রেণির বাংলা বইয়ে নতুন করে যুক্ত হচ্ছে পিঁপড়া ও পায়রার গল্প। ৩১ নম্বর ও ৩৫ নম্বর পৃষ্ঠায় দুটি ছবি বাদ দেওয়া হয়েছে। ৪১ নম্বর পৃষ্ঠায় এ-কার এর উদাহরণে রোদের তেজের পরিবর্তে মেঘের ছবি দেওয়া হয়েছে। ‘মুক্তিযুদ্ধ ও বিজয়’ অধ্যায়ের নাম পরিবর্তন করে ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধ’ করা হয়েছে। সেখানে শুরুতেই ছিল শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি। সেটি বাদ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন একটি দৃশ্যের ছবি দেওয়া হয়েছে। অধ্যায়ের শুরু হয়েছিল শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ দিয়ে। তাকে জাতির পিতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। নতুন বইয়ে এসব বাদ পড়েছে। এই অধ্যায় শুরু করা হয়েছে ২৫ মার্চের ঘটনা দিয়ে। এই অধ্যায়ের শব্দার্থে বঙ্গবন্ধু বাদ দেওয়া হয়েছে। প্রশ্নোত্তর অংশে শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে দুটি প্রশ্ন ছিল। সেগুলো বাদ দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া অনেক অধ্যায়ে উদাহরণের পরেও সেই জিনিসের পরিচয় আলাদা করে তুলে ধরা হয়েছে। যেমন— অ-তে অশোক ফুল ফুটেছে ভাই। এরপর লেখা হয়েছে অশোক একটি ফুলের নাম। উদাহরণের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। বিভিন্ন লেখায়ও পরিবর্তন এসেছে। যেমন আগে ছিল শৈবাল ভাসে। সেটিকে এখন লেখা হয়েছে নদীতে শৈবাল ভাসে। বিভিন্ন অধ্যায়ে সংক্ষিপ্ত লেখাকে বোঝার সুবিধার্থে বড় করা হয়েছে।

দ্বিতীয় শ্রেণির বাংলা বইয়ে সিংহ আর ইঁদুরের গল্প নতুন করে যোগ হয়েছে। এ ছাড়া শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর লেখা ‘সোনার ছেলে’ বাদ দেওয়া হয়েছে। সেখানে কাজী নজরুল ইসলামের ওপর লেখা ‘দুখু মিয়ার জীবন’ যোগ করা হয়েছে। ‘পহেলা বৈশাখ’ শীর্ষক গদ্যের নাম পরিবর্তন করে ‘নববর্ষ’ রাখা হয়েছে। বইয়ের ২৪ নম্বর পৃষ্ঠায় পদ্মা সেতুর একটি ছবি পরিবর্তন করা হয়েছে। নববর্ষ অধ্যায়ে মঙ্গল শোভাযাত্রার ছবি বাদ দিয়ে সেখানে নববর্ষের অন্য  ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। এ ছাড়া এই গল্পের লেখায়ও পরিবর্তন এসেছে। তবে দুটি শ্রেণির ইংরেজি ও গণিত বইয়ে তেমন পরিবর্তন দেখা যায়নি।

তৃতীয় শ্রেণির বইয়ে নতুন করে সংযোজন করা হচ্ছে ‘ঘাসফড়িং ও পিঁপড়ার গল্প’ এবং ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছেলেবেলা’। বাদ যাচ্ছে শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে লেখা গদ্য ‘সেই সাহসী ছেলে’। বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের তৃতীয় অধ্যায়ে ‘আমাদের জাতির পিতা’ বাদ দেওয়া হচ্ছে। সেখানে যাচ্ছে জাতীয় চার নেতাকে নিয়ে লেখা ‘আমাদের চার নেতা’। ইংরেজি বইয়ের শেষ অধ্যায়ে লেখা গদ্য ‘অ্যা ওয়ান্ডারফুল বয়’ বাদ যাচ্ছে। এতে শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ ছেলে শেখ রাসেলের জীবনী স্থাপন পেয়েছিল।

চতুর্থ শ্রেণির বাংলা বই থেকে বাদ যাচ্ছে শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে মমতাজউদ্দিনের লেখা ‘বাংলার খোকা’ এবং নির্মলেন্দু গুণের লেখা কবিতা ‘মুজিব মানে মুক্তি’। যোগ হচ্ছে ‘টুনুর কথা’ ও রজনীকান্ত সেনের কবিতা ‘স্বাধীনতার সুখ’। এ ছাড়া ‘মোবাইল ফোন’  নামক গদ্য বাদ যাচ্ছে। সেখানে যুক্ত হচ্ছে ‘বই পড়তে অনেক মজা’।

বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের প্রসঙ্গ কথা বাদ যাচ্ছে। সূচিপত্র ও অধ্যায়ের ১ ও ১০ নম্বর পৃষ্ঠায় আছে বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী। এটিকে পরিবর্তন করে লেখা হচ্ছে বিভিন্ন নৃ-গোষ্ঠী। এই বইয়ের এক নম্বরে অধ্যায়ের প্রাকৃতিক পরিবেশের বৈচিত্র্য ও সামাজিক পরিবেশের ওপর প্রকৃতির প্রভাব, দুই নম্বর অধ্যায়ে সামাজিক বিভিন্নতা ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু, চার নম্বর অধ্যায়ে সামাজিক অধিকার ও অর্থনৈতিক অধিকার, সাত নম্বর অধ্যায়ে শ্রমজীবী ও চাকরিজীবী অনুচ্ছেদের আগের অংশের সঙ্গে কয়েকটি লাইন সংযোজন করা হবে।

এছাড়া পনেরো নম্বর অধ্যায়ে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ অংশে কয়েকটি লাইন সংযোজন ও বিয়োজন করা হবে। বইয়ের দুই নম্বর অধ্যায়ে নারী ও পুরুষ, ছয় নম্বর অধ্যায়ে অধিকাংশের মত গ্রহণ, বারো নম্বর অধ্যায়ে ঘূর্ণিঝড় এবং পনেরো নম্বর অধ্যায়ে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ অনুচ্ছেদে একটি করে লাইন যুক্ত হবে। আর তিন নম্বর তথা মানচিত্র অধ্যায়ে একটি মানচিত্র সংযোজন করা হবে। আট নম্বর অধ্যায়ে ‘সামাজিক সম্পদ’ অনুচ্ছেদের নাম হবে ‘সামাজিক প্রতিষ্ঠান’, ‘আরও কিছু রাষ্ট্রীয় সম্পদ’ অনুচ্ছেদের নাম হবে ‘রাষ্ট্রীয় সম্পদ: প্রাকৃতিক’ এবং ৫২ নম্বর পৃষ্ঠায় ‘এই বনভূমি বাংলাদেশের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে’ —এই অংশকে লেখা হবে ‘এই বনভূমি বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ’। এগারো নম্বর অধ্যায়ে ‘বঙ্গোপসাগর’কে লেখা হবে ‘বঙ্গোপসাগর একটি উপসাগর যা…’।

চৌদ্দ নম্বর অধ্যায়ে ৭২ ও ৮৯ নম্বর পৃষ্ঠায় ‘মধ্যযুগ’কে লেখা হবে ‘মুসলিম শাসনামল’। পনেরো নম্বর অধ্যায়ে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান অংশে ‘বঙ্গবন্ধু’র পরিবর্তে ‘মওলানা ভাসানী’র নাম যাবে। ৭৯ নম্বর পৃষ্ঠায় কে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন? অংশটুকু সংযোজন হবে।

চতুর্থ শ্রেণির ইসলাম শিক্ষা বইয়ের দ্বিতীয় অধ্যায়ে ইবাদত অংশে ‘ঈদুল ফিতরের’ জায়গায় ‘ঈদুল ফিতর’, চতুর্থ অধ্যায়ের আরবি বর্ণমালা অংশের আটটি বর্ণের উচ্চারণে পরিবর্তন এবং পঞ্চম অধ্যায়ে নবী ও রাসুলদের পরিচয় অংশে সুরা আলাকের অর্থে ‘পড়ো, আর তোমার রব মহিমান্বিত’—করা হয়েছে।

পঞ্চম শ্রেণির বই এখনও পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়নি। সেখানে নতুন করে স্থান পাচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বিষয়বস্তু। এর বাইরে সূচিতে তেমন কোনো সংযোজন-বিয়োজন নেই।

এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, আগামী বছরের বইতে অতিবন্দনা, অতিকথন বাদ দেওয়া হয়েছে। সে কারণে বইতে কিছু পরিবর্তন এসেছে। এ ছাড়া আগে যাদের অবদান বই থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল, এমন অনেকের তথ্য যুক্ত হচ্ছে। বয়স উপযোগী করে অনেক লেখা সহজবোধ্য করা হয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে নতুন পরিস্থিতিতে এগুলো যোগ করা হয়েছে। বইয়ের পেছনের পৃষ্ঠায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গ্রাফিতি যুক্ত করা হচ্ছে।

আজকের বাংলা তারিখ

December ২০২৫
Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
« Nov    
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০৩১  


Our Like Page