অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ভারতে বিজেপিশাসিত উত্তর প্রদেশে গ্যাংস্টার থেকে নেতা হওয়া আতিক আহমদ এবং তার ভাই আশরাফ পুলিশের সামনেই আততায়ীদের হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন।
গতকাল (শনিবার) দিবাগত রাতে ওই হত্যাকাণ্ডের জেরে রাজ্যের সমস্ত জেলায় সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। উত্তর প্রদেশের যোগী আদিত্যনাথ সরকার ওই ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। লবলেশ তেওয়ারি, সানি এবং অরুণ মৌর্য নামে তিন আততায়ীকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করেছে পুলিস। সাংবাদিকের ছদ্মবেশে তারা এসেছিল বলে খবর।
সূত্রের প্রকাশ, ঘটনাটি ঘটেছে প্রয়াগরাজ মেডিক্যাল কলেজের কাছে। পুলিশের পক্ষ থেকে বন্দি আতিক আহমদ ও তার ভাই আশরাফকে মেডিক্যাল চেকআপের জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। এ সময়ে ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। নিহত গ্যাংস্টারের আইনজীবী বিজয় মিশ্র গণমাধ্যমকে বলেন, সাংবাদিকদের ভিড় থেকে কেউ আতিক আহমেদ এবং তার ভাইকে খুব কাছ থেকে গুলি করে।
গণমাধ্যমে ওই ঘটনার কিছু ভিডিও প্রকাশ্যে সামনে এসেছে। জানা গেছে, সাবেক এমপি আতিক আহমদ এবং তার ভাইকে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে দেখা যায়, তখন কেউ আতিকের মাথায় গুলি করে। পরের মুহূর্তে তার ভাইকেও গুলি করা হয়। পুলিশের গাড়ি থেকে নেমে হাতকড়া পরা অবস্থায় তারা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। ঠিক সেই সময় আতিকের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি চালায় দুর্বৃত্তরা। পরবর্তী টার্গেট হন আশরাফ। দু’জনে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এরপরেও মৃত্যু নিশ্চিত করতে আততায়ীরা কমপক্ষে ১৩ রাউন্ড গুলি চালায়। তারা ‘জয় শ্রীরাম’ বলে ধ্বনি দিয়েছে বলেও খবর।
নিহত আতিক আহমদ উত্তর প্রদেশের ‘সমাজবাদী পার্টি’র সাবেক এমপি ছিলেন। ২০০৫ সালে ‘বিএসপি’ বিধায়ক রাজু পালের হত্যায় তার নাম জড়িয়েছিল। ওই মামলার সাক্ষী উমেশ পাল হত্যায় তিনি মূল অভিযুক্ত ছিলেন। গত (বৃহস্পতিবার) আতিক আহমদের ছেলে আসাদ এবং তার সঙ্গী গুলাম উত্তরপ্রদেশ পুলিশের এনকাউন্টারে নিহত হয়েছে। উমেশ পাল হত্যা মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত ছিল আসাদ।
এদিকে, আতিক আহমদের মতো এরকম ‘হাই প্রোফাইল’ বন্দিকে হাসপাতালে মেডিক্যাল চেকআপ করাতে নিয়ে যাওয়ার পথে ওই ঘটনা নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন উত্তর প্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি এক বার্তায় বলেছেন, ‘উত্তরপ্রদেশ অপরাধের পরাকাষ্ঠা হয়ে উঠেছে। অপরাধীদের মনোবল আরও মজবুত হচ্ছে। যখন পুলিশের ঘেরাটোপে থাকা একজনকে এভাবে খুন করা যেতে পারে তাহলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়? মানুষের মধ্যে ভয়ের বাতাবরণ তৈরি করা হচ্ছে। মনে হচ্ছে, কিছু মানুষ সব জেনে বুঝে এমন বাতাবরণ তৈরি করছেন।’
মজলিশ-ই-ইত্তেহাদুল মুসলেমিন (মিম) প্রধান ব্যারিস্টার আসাদউদ্দিন ওয়াইসি এমপি বলেছেন, যে সমাজে খুনিরা হিরো হয়, সে সমাজে আদালত ও বিচার ব্যবস্থার কাজ কী? ওয়াইসি বলেন, ‘আতিক ও তার ভাই পুলিশ হেফাজতে ছিলেন। তারা হাতকড়া পরানো অবস্থায় ছিল। ‘জেএসআর’ শ্লোগানও ওঠে। উভয়েরই হত্যা যোগীর আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার ব্যর্থতা। যারা এনকাউন্টার রাজ উদযাপন করছে তারাও এই হত্যার জন্য দায়ী।’

আসাদউদ্দিন ওয়াইসি এমপি
তিনি বলেন, এই ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ে বড় প্রশ্ন উঠেছে। এর পর কী দেশের সংবিধান ও আইনশৃঙ্খলার প্রতি জনগণের আস্থা থাকবে? তার অভিযোগ, এতে উত্তর প্রদেশের বিজেপি সরকারের ভূমিকা রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে তদন্ত হওয়া উচিত এবং একটি কমিটি গঠন করা উচিত। কমিটিতে উত্তর প্রদেশের কোনও কর্মকর্তাকে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত নয়।
ওয়াইসি বলেন, আমি শুরু থেকেই বলে আসছিলাম উত্তর প্রদেশে বিজেপি সরকার আইন অনুযায়ী নয়, বন্দুকের জোরে চলছে। আমরা এ কথার পুনরাবৃত্তি করছিলাম, কিন্তু সবাই মনে করেছিল যে আমরা ফালতু কথা বলছি। এতে সংবিধানের প্রতি মানুষের আস্থা কমে যাবে। এই ঘটনার নিন্দা জানানোর ভাষা নেই বলেও মন্তব্য করেন আসাদউদ্দিন ওয়াইসি।
ওয়াইসি আরও বলেন, গুলি করে ‘ধর্মীয় স্লোগান’ দেওয়া হল কেন? তাদেরকে সন্ত্রাসী না বললে কী দেশপ্রেমিক বলা হবে? জানা গেছে, হামলাকারীরা আতিক আহমদ ও আশরাফকে একের পর এক গুলি করে ‘জয় শ্রীরাম’ শ্লোগান দিয়ে আত্মসমর্পণ করে।
আতিক আহমদ ও তার ভাই আশরাফ হত্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা রশিদ আলভি। তিনি বলেন, ‘এ থেকে বোঝা যায় উত্তরপ্রদেশে আইনশৃঙ্খলা কেমন। উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী বারবার বলছেন যে উত্তর প্রদেশে আইনশৃঙ্খলা খুব ভালো। এটা একটা বড় ষড়যন্ত্র, তদন্ত হওয়া উচিত। উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত বলেও মন্তব্য করেছেন কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা রশিদ আলভি।