অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : দ্রব্যমূল্যের লাগাম টানতে অতি প্রয়োজনীয় কিছু পণ্যের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য বেঁধে দিয়েছে সরকার। যদিও ক্রেতারা বলছেন- বাজারে এর কোনো প্রভাবই পড়েনি। অন্যদিকে, বাজারে স্বস্তি ফেরাতে দফায় দফায় অভিযান পরিচালনা করছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এসব অভিযানে দোকানিদের সতর্ক করার পাশাপাশি কোনো কোনো ক্ষেত্রে জরিমানাও করতে দেখা গেছে।
শনিবার ঢাকা মহানগরীসহ সারাদেশে আলু, পেঁয়াজ ও ডিমসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য এবং স্যালাইনের মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বাজার অভিযান পরিচালনা করে। এর মধ্যে রামপুরা, বাড্ডা ও মহাখালী কাঁচাবাজার এলাকা, স্টাফ কোয়ার্টার, কোনাপাড়া ও ডেমরা এলাকা, নিউ মার্কেট, টাউনহল ও সাদেক খান কাঁচাবাজার এলাকায় একযোগে অভিযান পরিচালিত হয়।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানকালে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে বেশি মূল্যে বিক্রি করতে দেখা যায় অনেক দোকানিকে। অভিযানে দোকানিরা চালান রসিদ দেখান। যেখানে আড়ত থেকে বেশি দামে পণ্য ক্রয় করা হয়েছে বলে প্রমাণ মিলেছে। যে কারণে এসব দোকানিদের জরিমানার আওতায় আনতে পারেনি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন- আমরা কম দামে মাল কিনতে পারলেই ক্রেতার কাছে কমে বিক্রি করতে পারব। তাদের দাবি- খুচরা দোকানে অভিযান না চালিয়ে বরং আড়তগুলোকে তদারকির আওতায় আনা গেলে বাজারে মিলবে সুফল।
শনিবার রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকায় অভিযান চালাতে যায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। খবরটি মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে মার্কেটজুড়ে। অভিযান শুরুর আগেই মার্কেট কর্তৃপক্ষ কয়েক দফা মাইকেও অভিযানের তথ্য ফাঁস করে দেয়। যেখানে অল্প সময়ের মধ্যেই ব্যবসায়ীরা প্রতিটি দোকানে মূল্য তালিকা ঝুলিয়ে দেন। যদিও সকাল থেকে তালিকা প্রদর্শনে ছিল না তেমন তোড়জোড়।
এ সময় দেখা যায়- অভিযানের সংবাদে প্রায় প্রতিটি দোকানে ঝুলছে মূল্য তালিকা। তালিকায় পেঁয়াজ, আলুর দাম উল্লেখ থাকলেও কোনো কোনো দোকানে এসব পণ্য দেখাই যায়নি। মূলত অভিযানকালে জরিমানা থেকে বাঁচতেই তারা এমন কৌশল নেন। অন্যদিকে মাছের বাজার ঘুরে দেখা যায়- অভিযান শেষ হওয়ামাত্রই মূল্য তালিকা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
নিউ মার্কেটের দোকানি আরিফ জানান, আমার দোকানে এসে বাজার মূল্য দেখতে চেয়েছে। আলুর দাম-বেশি রাখার কারণ জানতে চেয়েছিল। আমি জানিয়েছি আড়ত থেকে বেশি দামে কিনেছি। পরে চালান রসিদ দেখার পরে কিছু বলেনি।
এ দোকানি আরও বলেন, আমরা এক-দুই বস্তা মাল নিয়ে আসি। বলতে গেলে দিনের মাল দিনে কিনি। যে দামে নেই, সামান্যই লাভ করি। কিন্তু দাম বাড়ানোর যত অভিযোগ, দোষ যেন আমাদেরই। আড়তদার কত টাকায় কিনেছে আর কত টাকায় বিক্রি করবেÑ তা দেখার যেন কেউই নেই।
রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় অভিযানে মূল্যতালিকা না থাকায় দুই প্রতিষ্ঠানকে চার হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। শনিবার উত্তর বাড্ডা এলাকায় অভিযান চালাতে যায় ভোক্তা অধিদপ্তর। অভিযানকালে উত্তর বাড্ডা কাঁচাবাজারে মূল্যতালিকা না পাওয়ায় দুই প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়।
অভিযান শেষে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘এখানে আমরা বেশ কয়েকটি দোকানে অভিযান পরিচালনা করেছি। এর মধ্যে দুটি প্রতিষ্ঠানে মূল্যতালিকা না থাকায় চার হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।’
সরেজমিনে বাজারটি ঘুরে কোনো দোকানে সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে পণ্য বিক্রি করতে দেখা যায়নি। আলু ৪৫ টাকা ও দেশি পেঁয়াজ ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। আগে বেশি দামে কেনায় এই দামে এসব পণ্য বিক্রি করছেন বলে ব্যবসায়ীরা জানান। এ সময় ভোক্তা অধিকার তাদের সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রির নির্দেশনা দেন। তা না হলে কঠোর হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
ভোক্তা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘এখানকার ব্যবসায়ীরা মূলত খুচরা ব্যবসায়ী। তারা বলছেন, আগের দামে কেনা, তাই আলু ৪৫ টাকা, দেশী পেঁয়াজ ৭০ টাকায় বিক্রি করছেন। আমরা আজকে সতর্ক করে যাচ্ছি। পরবর্তীতে এসে যদি আবার সরকার নির্ধারিত দামের বাইরে বিক্রি করতে দেখি তাহলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে শনিবার রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকায় অভিযান চালাতে যায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। খবরটি শোনার পর এসব পণ্যের দাম কমিয়ে দেয় ব্যবসায়ীরা। অভিযান চালাকালে দাম কমিয়ে পণ্য বিক্রি করতে দেখা যায়।
সরেজমিনে নিউ মার্কেট কাঁচাবাজার এলাকায় দেখা গেছে, ভোক্তা অধিকারের অভিযানের খবর শোনার পর ব্যবসায়ীরা প্রতিটি দোকানে মূল্যতালিকা ঝুলিয়ে দেন। যদিও সকাল থেকে তালিকা প্রদর্শনে ছিল না তেমন তোড়জোড়।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের আসার খবরে কিছু দোকানে আলু, পেঁয়াজ, ডিম আগের চেয়ে কম দামে বিক্রি করতে দেখা যায়। তবে অধিকাংশ দোকানে সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে পণ্য বিক্রি করতে দেখা যায়নি। কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলেন, বেশি দামে আগে এসব পণ্য কিনে রাখায় তারা সরকারের নির্ধারিত দামে বিক্রি করতে পারছেন না। এ জন্য অনেকে চালান রসিদ দেখান। তবে অভিযানকালে তাদের কিছুটা দাম কমিয়ে পণ্য বিক্রি করতে দেখা গেছে।
নিউ মার্কেট বনলতা মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির আহ্বায়ক বাদল মিয়া জানান, সব ব্যবসায়ীকে মূল্যতালিকা প্রদর্শনসহ চালান রসিদ রাখার নির্দেশনা দেওয়া আছে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই খুচরা ব্যবসায়ীরা যেখান থেকে পণ্য ক্রয় করেন, তারাই মালের রসিদ দেন না বলেও দাবি তার।
গত বৃহস্পতিবার দেশী পেঁয়াজ, ডিম ও আলুর সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য বেঁধে দেয় সরকার। সেদিন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছিলেন, এখন থেকে খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ডিমের দাম হবে সর্বোচ্চ ১২ টাকা, প্রতি কেজি আলু ৩৬ এবং দেশী পেঁয়াজ ৬৫ টাকা, যা সেদিন থেকেই কার্যকর হওয়ার কথা।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মাগফুর রহমান নিউ মার্কেটে অভিযানে অংশ নিয়ে জানান, আমরা দোকানগুলো ঘুরে দেখেছি। অনেককেই সতর্ক করেছি। চালান রসিদ দেখেছি। তাদের দাবি, আড়ত থেকেই তারা বেশি দামে পণ্য ক্রয় করছেন। বিষয়টি আমলে নিয়ে আমরা আড়তগুলো নজরদারিতে আনব।
নিউ মার্কেট বনলতা মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির আহ্বায়ক মো. বাদল মিয়া জানান, সব ব্যবসায়ীকে মূল্যতালিকা প্রদর্শনসহ চালান রসিদ রাখার নির্দেশনা দেওয়া আছে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই খুচরা ব্যবসায়ীরা যেখান থেকে পণ্য ক্রয় করেন, তারাই মালের রসিদ দেয় না বলেও দাবি তার।
শুক্রবারও সারাদেশে ৪১টি টিমের মাধ্যমে ৫৩টি বাজারে অভিযান চালিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এ সময় ৯০টি প্রতিষ্ঠানকে সর্বমোট দুই লাখ ৩৭ হাজার টাকা জরিমানা করেছে সংস্থাটি।
ঢাকা মহানগর এলাকায় তিনটি টিম রাজধানীর মিরপুর শাহ আলী মার্কেট, মিরপুর-১ বাজার, কাওরান বাজার, শান্তিনগর বাজার, মালিবাগ কাঁচাবাজার, যাত্রাবাড়ী ও কুতুবখালী বাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। এ ছাড়াও অন্যান্য বিভাগীয় শহরসহ দেশের সর্বমোট ৩৯টি জেলায় একযোগে অভিযান পরিচালিত হয়।
Leave a Reply