অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : রাশিয়ার হামলা থামাতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ও যুদ্ধাবসানের একটি হালনাগাদ পরিকল্পনা পাঠিয়েছে ইউক্রেন। বুধবার ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা এএফপিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
প্রাথমিক যে মার্কিন প্রস্তাবটি দেওয়া হয়েছিল, তাতে রাশিয়ার দখলে নেই এমন কিছু অঞ্চল ইউক্রেনকে ছাড় দিতে বলা হয়। কিয়েভ ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা একে রাশিয়ার কঠোর দাবিগুলোর প্রতি অতিরিক্ত নতি স্বীকার হিসেবে দেখে। এরপরই প্রস্তাবটি সংশোধন করা হয়।
সর্বশেষ পরিকল্পনা সম্পর্কে অবহিত এক ইউক্রেনীয় কর্মকর্তা বলেন, ‘এটি ইউক্রেনের দৃষ্টিভঙ্গিকে বিবেচনায় নিয়েছে—সমস্যাগুলোর উপযুক্ত সমাধানের একটি নতুন প্রস্তাব।’
তিনি আরো জানান, ‘আমরা এখনই বিস্তারিত প্রকাশ করছি না। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় আছি।’
কিয়েভের প্রতি, দ্রুতই বিরক্তি প্রকাশ করেন ট্রাম্প। ফ্রান্স, ব্রিটেন ও জার্মানির ইউরোপীয় মিত্রদের প্রতিও বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। কারণ, তিনি তাদেরকে ইউক্রেনকে মার্কিন পরিকল্পনায় রাজি করানোর চাপ দিয়ে আসছেন।
তিনি সম্প্রতি অভিবাসন ও ইউক্রেন ইস্যুতে ইউরোপকে ‘পচনধরা’ ও ‘দুর্বল’ বলে অভিহিত করেছিলেন। নতুন মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলে মহাদেশটির ওপর ‘সভ্যতা বিলুপ্তির ঝুঁকিতে’ রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। কয়েক দিনের মধ্যেই তাঁর এসব মন্তব্য ওয়াশিংটনের সঙ্গে ইউরোপের দূরত্ব আরো বাড়িয়ে দিতে শুরু করে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ এবং জার্মানির চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ মের্ৎসের সঙ্গে ফোনালাপের প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা ইউক্রেন নিয়ে কঠোরভাবে আলোচনা করেছি।’
সোমবার ইউরোপীয় মিত্ররা কিয়েভ সফরে এসে জেলেনস্কির প্রতি সমর্থন দেখান। তারা সর্বশেষ মার্কিন প্রস্তাবের কিছু অংশ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন।
ট্রাম্প জানান, ইউরোপীয়রা এই সপ্তাহের শেষে নতুন বৈঠক করতে চান, তবে তিনি সতর্ক করেন যে, এতে সময় নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ‘কিছু ব্যক্তি ও বিষয় ঘিরে আমাদের সামান্য মতপার্থক্য ছিল। দেখি পরিশেষে কী হয়। আমরা জানিয়েছি, বৈঠকে যাওয়ার আগে কিছু বিষয় পরিষ্কার জানতে চাই।’
ট্রাম্প আরো বলেন, ‘এই সপ্তাহের শেষে তারা ইউরোপে বৈঠকে বসার আমন্ত্রণ জানিয়েছে। তারা কী নিয়ে ফিরে আসে তার ওপর আমাদের সিদ্ধান্ত নির্ভর করবে। আমরা সময় নষ্ট করতে চাই না।’
গত সপ্তাহে ক্রেমলিনে মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের আলোচনাও অচলাবস্থায় শেষ হয়েছে।
জেলেনস্কির জন্য সময়টা অত্যন্ত স্পর্শকাতর। পূর্বাঞ্চলীয় দোনবাসে ইউক্রেনীয় বাহিনী রক্ষনাত্মক অবস্থানে এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের নিয়ে দুর্নীতি কেলেঙ্কারি রাজনৈতিক চাপ বাড়িয়েছে।
ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন, জেলেনস্কি পরিকল্পনাটি সঠিকভাবে পড়েননি। ইউক্রেনীয় নেতা জানান, পরিকল্পনাটি তিনটি নথিতে ভাগ করা হয়েছে—২০ দফার একটি কাঠামোগত চুক্তি, নিরাপত্তা নিশ্চয়তা সম্পর্কিত একটি পৃথক নথি এবং যুদ্ধোত্তর পুনর্গঠন নিয়ে আরেকটি দলিল।
তিনি বুধবার আরো জানান, তিনি ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার, মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বিসেন্ট ও ব্ল্যাকরকের প্রধান নির্বাহী ল্যারি ফিঙ্কের সঙ্গে অনলাইনে পুনর্গঠন ইস্যুতে বৈঠক করেছেন।
জেলেনস্কি লেখেন, ‘এটিকে পুনর্গঠন ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার পরিকল্পনার খসড়া তৈরির প্রথম বৈঠক হিসেবে ধরা যায়।’
তিনি আরো বলেন, ‘যুদ্ধশেষের ২০ দফা কাঠামোগত নথি নিয়ে আমাদের ধারণাগুলোও হালনাগাদ করেছি। সামগ্রিক নিরাপত্তাই অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও নিরাপদ ব্যবসায়িক পরিবেশ নিশ্চিত করবে।’
তবে ট্রাম্প এই সংঘাত থেকে সরে দাঁড়ানারও ইঙ্গিত দিয়েছেন। এই যুদ্ধের জন্য তিনি পূর্বসূরি জো বাইডেনকে দায়ী করেন। ক্ষমতায় ফিরলেই ২৪ ঘণ্টায় শেষ করতে পারবেন বলে দাবি করেছিলেন তিনি।
ট্রাম্প বুধবার বলেন, কখনও কখনও মানুষকে লড়াই করতে দিতে হয়, আবার কখনও হয় না। সমস্যা হলো, লড়াই চলতে দিলে প্রতি সপ্তাহে হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে।