অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : লেবাননের হিজবুল্লাহ সম্প্রতি ইসরাইলের অত্যাধুনিক নজরদারি প্রযুক্তিকে টেক্কা দিয়ে এ ক্ষেত্রে নিজেদের কর্তৃত্বের প্রমাণ দিয়েছে। রয়টার্সের বরাত দিয়ে পার্সটুডে জানিয়েছে, হিজবুল্লাহ তার ড্রোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইসরাইলের গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের সক্ষমতাকে দুর্বল করে দিচ্ছে। তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি গোয়েন্দা ঘাঁটিগুলোকে টার্গেট করতেও ড্রোন ব্যবহার করছে হিজবুল্লাহ। এর আগে হিজবুল্লাহর মহাসচিব হাসান নাসরুল্লাহ ইসরাইলকে ‘অন্ধ ও বধির’ করার যে কৌশলের কথা বলেছিলেন এটি তারই অংশ।
৭ অক্টোবর থেকেই গাজায় নির্বিচার হামলা শুরু করে দখলদার ইসরাইল। এর পরের দিন ৮ অক্টোবর বিশ্ব প্রতিরোধ ফ্রন্টের প্রতিনিধি হিসেবে ইসরাইলের নির্দিষ্ট কিছু এলাকার সব গুপ্তচরবৃত্তি কেন্দ্র ও পর্যবেক্ষণ টাওয়ার এবং রাডার জ্যামিং ব্যবস্থা লক্ষ্য করে হামলা চালায় হিজবুল্লাহ। সেদিন তারা ইসরাইলের মিরুন গোয়েন্দা ঘাঁটিতে অন্তত সাত বার আঘাত হানে। এছাড়া, তাবরিয়া ও বালাদা রামিশ এলাকার আকাশে দু’টি ইসরাইলি গুপ্তচর বেলুন অকেজো করে দেয়। এর ফলে লেবানন সীমান্তের কোনো তথ্যই সংগ্রহ করতে পারছিল না ইসরাইল। লেবাননের আকাশসীমাতেও তাদের নজরদারি তৎপরতা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছিল। এই কৌশলে সেদিন দারুণ সাফল্য পায় হিজবুল্লাহ। খুব সহজেই ইসরাইলের ভেতরে গোয়েন্দা বিমান ও আত্মঘাতী ড্রোন পাঠিয়ে অভিযান পরিচালনা করতে সক্ষম হয়।
আগাম পদক্ষেপের কারণে ইসরাইলের উত্তর ফ্রন্টে হিজবুল্লাহর বিমান ও ড্রোন প্রবেশ করার পরও তাদের সতর্কতামূলক ব্যবস্থাগুলো সক্রিয় হয়নি এবং কোনো সাইরেন বেজে ওঠেনি। কারণ হিজবুল্লাহ এর আগেই এসব ব্যবস্থাকে অকেজো করে দিয়েছিল। দখলদার ইসরাইলের গুপ্তচরবৃত্তির কেন্দ্রগুলোকে অকেজো করে দেওয়ার কারণে এখনও হিজবুল্লাহর ড্রোনগুলো খুব সহজেই পর্যবেক্ষণ কাজ চালিয়ে যেতে পারছে।
হিজবুল্লাহ ইসরাইলের মোকাবেলায় নিজের শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখতে মোবাইল ফোন ব্যবহার করা থেকে বিরত রয়েছে যাতে শত্রুরা এই বাহিনীর সদস্যদের অবস্থান ট্র্যাক করতে না পারে। হিজবুল্লাহর সেনারা যোগাযোগের জন্য পুরনো প্রযুক্তি যেমন পেজার ও বার্তাবাহক ব্যবহার করছে। ব্যক্তির মাধ্যমে বার্তা আদানপ্রদান করছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনটি এমন সময় প্রকাশিত হলো যখন লেবাননের হিজবুল্লাহর ‘হুদহুদ’ ড্রোনের মাধ্যমে রেকর্ডকৃত ভিডিও সবার মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
লেবাননের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহ সম্প্রতি একটি ভিডিও প্রচার করে। ওই ভিডিওতে দেখানো হয়েছে ইসরাইলের আকাশে হিজবুল্লাহর হুদহুদ নামক একটি ড্রোন নির্বিঘ্নে উড়ছে। এই দৃশ্য দেখে ইহুদিবাদীরা ব্যাপকভাবে হতবাক এবং আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।
ইসরাইলের সামরিক হুমকির জবাবে লেবাননের হিজবুল্লাহ উত্তর ইসরাইলে ওই হুদহুদ ড্রোন পাঠিয়ে হাইফা বন্দরের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক অবস্থানের ছবি তুলেছে। পার্সটুডে আরও জানিয়েছে, ইহুদিবাদী মিডিয়াগুলো হুদহুদ ড্রোন সম্পর্কে প্রচারিত ভিডিওকে অত্যন্ত বিপজ্জনক বলে মন্তব্য করেছে।
ইসরায়েলি বিশ্লেষক ইয়োসি মেলম্যান বলেছেন, হিজবুল্লাহর কৌশলগত পরিকল্পনাকারীরা ১৮ বছরে অর্থাৎ ২০০৬ সালের যুদ্ধের পর থেকে আমাদের ভূখণ্ডের তথ্য সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছে যা তাদের একটি বিস্ময়কর অর্জন।
ইসরাইলি গণমাধ্যম জানিয়েছে, হিজবুল্লাহর আরও ক্ষমতা রয়েছে এবং তারা ড্রোনের বেশ কয়েকটি স্কোয়াড্রন উড়াতে সক্ষম। যুদ্ধ বাধলে তারা তাই করবে।