অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ইরানের ক্ষমতাসীন শাসকগোষ্ঠীকে চাপে রাখতে বিশ্ববাসীকে তেহরানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির শীর্ষ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির ভাগ্নি ফরিদেহ মোরাদখানি। সম্প্রতি ইউটিউবে শেয়ার করা একটি ভিডিওতে তিনি এ আহ্বান জানান।
ভিডিওতে ফরিদেহ মোরাদখানি বলেন, হে মুক্ত পৃথিবীর মানুষজন, আমাদের পক্ষে থাকুন ও আপনাদের দেশের সরকারকে এই খুনী ও শিশু হত্যাকারী শাসকদের সমর্থন দেওয়া বন্ধ করতে বলুন। ধর্মীয় নীতি-নৈতিকতার প্রতি খামেনি সরকারের কোনো আনুগত্য নেই। ক্ষমতা ধরে রাখা ও বলপ্রয়োগ ছাড়া তারা আর কিছুই জানে না।
ইরানের মানবাধিকারকর্মীদের সংবাদসংস্থা হারানা জানায়, ইরানে চলমান বিক্ষোভে উসকানি ও সহায়তা দেওয়ার অভিযোগে গত ২৩ নভেম্বর ফরিদেহকে গ্রেফতার করা হয়। বর্তমানে তিনি তেহরানের এভিন কারাগারে রয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, জেলে যাওয়ার আগেই এ ভিডিওটি শ্যুট করেছিলেন তিনি।
ফরিদেহকে ২০২২ সালের শুরুর দিকেও আরেকবার গ্রেফতার করা হয়েছিল। তবে অল্প কিছুদিনের কারাদণ্ড শেষে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল তাকে।
জামিনের শর্ত অনুযায়ী, ২৩ নভেম্বর আদালতে হাজিরা দিতে যাচ্ছিলেন ফরিদেহ। কিন্তু আদালতে পৌঁছানোর আগেই তাকে গ্রেফতার করা হয় বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন ফরিদেহর ভাই মাহমুদ মোরাদখানি।
এদিকে, ফরিদেহর ভিডিও সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানতে আয়াতুল্লাহ খামেনির দপ্তরে যোগাযোগ করা হলেও কারও সাড়া পাওয়া যায়নি।
জানা যায়, ফরিদেহর বাবা আলি মোরাদখানি আরাঙ্গেহ ছিলেন একজন শিয়াপন্থী মুসলিম নেতা ও আয়াতুল্লাহ খামেনির বোনের স্বামী। অর্থাৎ আলি মোরাদখানি ছিলেন খামেনির ভগ্নিপতি।
আয়াতুল্লাহ খামেনির খুব কাছের আত্মীয় হলেও, ইরানে ক্ষমতাসীন ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে রাজনৈতিক ও আদর্শগত বিরোধ ছিল আলি মোরাদখানির। এ কারণে তাকে দেশের ভেতরেই একপ্রকার নির্বাসিত জীবনযাপন করতে হয়েছে। কয়েক বছর আগে তেহরানে মৃত্যু হয় আলি মোরাদখানির।
ফরিদেহ মোরাদখানি পেশায় একজন প্রকৌশলী ও সক্রিয় মানবাধিকারকর্মী। ইউটিউবে তার ওই ভিডিওটি শেয়ার করেছিলেন তার ভাই মাহমুদ মোরাদখানি। মাহমুদ মোরাদখানি ফ্রান্সে থাকেন। ভাই-বোন দুজনই ইরানের ক্ষমতাসীন সরকারের বিরোধী।
১৬ সেপ্টেম্বরে হিজাব ও বোরখা না পরার কারণে ইরানের নৈতিক পুলিশের হাতে গ্রেফতার ও নির্যাতনের শিকার হন তরুণী মাশা আমিনি (২২)। পরে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
মাশা আমিনির মৃত্যুর পরদিন থেকেই এক অভূতপূর্ব বিক্ষোভ শুরু হয় ইরানে। প্রথম পর্যায়ে আন্দোলনকারীরা মাশাকে গ্রেফতারকারী পুলিশ সদস্যদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানালেও, খুব দ্রুত সেই বিক্ষোভ রূপ নেয় সরকারবিরোধী আন্দোলনে, যা এখনো চলমান। সূত্র: রয়টার্স
Leave a Reply