ফারুক আহমেদ, মাগুরা জেলা প্রতিনিধি : “হাতে দেখলে সাদাছড়ি, এগিয়ে এসে সহায়তা করি” এই প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে নিয়ে মাগুরায় বিশ্ব সাদাছড়ি নিরাপত্তা দিবসে র্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। মঙ্গলবার ১৫ অক্টোবর সকাল ৯.৩০ টার সময় জেলা প্রশাসক মাগুরা’র সম্মেলন কক্ষ “চাঁদের হাট” মাগুরা জেলা প্রশাসনের আয়োজনে ও
জেলা সমাজসেবা কার্যালয়, মাগুরা ও প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র, মাগুরা এর সহযোগিতায় দিবস পালন করা হয়।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, মাগুরা জেলা প্রশাসক মোঃ অহিদুল ইসলাম।
সভাপতিত্ব করেন, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়, মাগুরা উপপরিচালক মোঃ জাকির হোসেন।
এছাড়াও বক্তব্য রাখেন, মাগুরা প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা মোঃ বাবলুর রহমান, মাগুরা সিভিল সার্জন মোঃ শামীম কবির, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর উপপরিচালক মোঃ আব্দুল আওয়াল সহ প্রমুখ
সাদাছড়ি দিবসে প্রধান অতিথি মাগুরা জেলা প্রশাসক মোঃ অহিদুল ইসলাম বলেন, মাগুরায় প্রায় ২১ হাজার জন মানুষ প্রতিবন্ধী রয়েছে এবং তাদের পাশে থাকার জন্য সমাজসেবা ও প্রতিবন্ধী দপ্তরগুলোকে সবসময় সহযোগিতা ও খোঁজ খবর নেওয়ার আহবান জানান।
বক্তারা আরও বলেন, বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব সাদাছড়ি নিরাপত্তা দিবস ২০২৪। এ বছর দিবসটির মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে হাতে দেখলে সাদাছড়ি, এগিয়ে এসে সহায়তা করি”। ১৯৬৪ সাল থেকে প্রতিবছর ১৫ অক্টোবর বিশা সাদাছড়ি নিরাপত্তা দিবস পালিত হয়ে আসছে।
বাংলাদেশের সংবিধানে সন্নিবেশিত নির্দেশনা এবং জাতিসংঘ ঘোষিত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সনদে (UNCRPD) অনুস্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে সরকারের পক্ষে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কাজ করে বিশ্বসম্প্রদায়ের সঙ্গে একাত্ম হয়ে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে সমাজের মূলধারায় সম্পৃক্তকরণ, জনসচেতনতা সৃষ্টি ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতি দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের লক্ষ্যে সরকার প্রতিবছর বিশ্ব সাদাছড়ি নিরাপত্তা দিবস যথাযথ মর্যাদায় পালন করে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় মাগুরা জেলায় শোভাযাত্রা, আলোচনাসভা,
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যাক্তির মাঝে স্মার্ট সাদাছড়ি বিতরণ। লায়নস ইন্টারন্যাশনালের হিসাব মতে, বিশ্বে দুই কোটি ৫০ লাখ মানুষ পুরোপুরি ও আংশিকভাবে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস-২০২২) হিসাবে দেশের মোট জনসংখ্যার ২.৪ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে প্রতিবন্ধিতার শিকার। এ হিসাবে দেশে বর্তমানে প্রতিবন্ধী মানুষের সংখ্যা ৪৭.৪২ লাখ। এর মধ্যে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানুষের সংখ্যা ০.৩৯ শতাংশ বা ১৬ লাখ ২৫ হাজার। এসব দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানুষের নিরাপদে সড়ক ও অন্যান্য স্থানে চলাচলের সুযোগ করে দেওয়ার প্রতীক হিসেবে সাদাছড়ি ব্যবহার করা হয়। এতে যারা চোখে দেখে তারা তাদের চলাচলে সহযোগিতা করে। তাই বিশ্ব সাদাছড়ি নিরাপত্তা দিবস দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানুষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাদের স্বাভাবিক জীবনব্যবস্থা নিশ্চিতকরণে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বিশেষত শিশু শিক্ষা এবং পরবর্তী জীবনধারায় অর্থনৈতিক ও
সামাজিক জীবনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে দিবসটি খুবই তাৎপর্য বহন করে। শিক্ষা হলো শিশুর উন্নয়নমূলক পরিবর্তন প্রক্রিয়া, যার দ্বারা শিশু তার পরবর্তী জীবনধারায় পরিবেশের সঙ্গে সুষ্ঠুভাবে সংগতি বিধান রেখে সমাজজীবনে চলতে সক্ষম হয়। এ জন্যই বলা হয়ে থাকে ‘শিক্ষা মানেই জীবন আর জীবন মানেই শিক্ষা’।
বর্তমানে প্রতিবন্ধী শিশুদের বিশেষত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশুদের চাহিদা, দক্ষতা, ক্ষমতা ও অনুরাগ অনুযায়ী যে শিখন- শেখানোর কথা বলা হয়ে থাকে, যে শিক্ষাব্যবস্থার কথা বলা হয়ে থাকে তার পেছনে রয়েছে শিশু মনস্তত্ব সম্পর্কে নিত্যনতুন গবেষণায় প্রাপ্ত সিদ্ধান্ত। দেশে বর্তমানে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য তিন ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে। যথা-একীভূত শিক্ষাব্যবস্থা, বিশেষায়িত শিক্ষাব্যবস্থা এবং সমন্বিত শিক্ষাব্যবস্থা।
দেশে প্রথম ১৯৭৪ সালে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য সমন্বিত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হয়। প্রতিটি কার্যক্রমে একজন করে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ‘রিসোর্স শিক্ষক’-এর তত্ত্বাবধানে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশুদের ব্রেইল পদ্ধতিতে পড়ানো হয়ে থাকে। প্রতি জেলায় প্রতিটি কেন্দ্রে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য নির্ধারিত আসনসংখ্যা রয়েছে ১০টি। এ হিসাবে দেশে ৬৪টি জেলায় মোট ৬৪০ জন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশু সম্পূর্ণ সরকারি খরচে সমন্বিত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় পড়াশোনা করছে।
এ ছাড়া সরকারিভাবে ঢাকার মিরপুর, খুলনার গোয়ালখালী, চট্টগ্রামের মুরাদপুর, রাজশাহী সদর এবং বরিশালের সাগরদীতে অবস্থিত। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য এসব বিশেষায়িত বিদ্যালয়ে প্রায় ২৫০ জন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছে। তবে তা চাহিদার তুলনায় খুবই অপ্রতুল। কারণ দেশে ২০২২ আদমশুমারি তথ্য মতে, প্রায় চার লাখের বেশি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশু (সম্পূর্ণ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, আংশিক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী এবং ক্ষীণ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী) রয়েছে।
এর মঞ্চে যারা সম্পূর্ণ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী তাদের জন্য বিদ্যমান সরকারি পাঁচটি বিশেষায়িত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সমন্বিত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয় ছাড়া সরকারিভাবে সুবিধাপ্রাপ্ত তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো স্কুল নেই, যেখানে অন্ধ যা সম্পূর্ণ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশুরা পড়াশোনা করতে পারে। এ ক্ষেত্রে সব ধরনের প্রতিবন্ধী শিশুর জন্য এক যুগের বেশি সময় ধরে সারা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যক্তি, বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত বিশেষায়িত বিশ্বালয়গুলোর সরকারি স্বীকৃতি ও এমপিওভুক্তি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষার হার বৃদ্ধিতে যুগান্তকারী ফলাফল এনে দিতে পারে।
Leave a Reply