23 Jan 2025, 12:05 am

ঋণ পরিশোধের মেয়াদ বাড়িয়ে ৩০ বছর করতে রাজী হয়েছে চীন

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : চীনের দেওয়া ঋণ পরিশোধের মেয়াদ ১০ বছর বাড়িয়ে ৩০ করতে ঢাকার অনুরোধে সাড়া দিয়েছে বেইজিং; সুদহার কমানোর বিষয়ে বিবেচনারও আশ্বাস এসেছে।

মঙ্গলবার বেইজিংয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এ বিষয়ে ‘নীতিগতভাবে একমত’ পোষণ করেছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে বৈঠকে আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে বলা হয়, “প্রেফারেনশিয়াল বায়ার্স ক্রেডিট (পিবিসি) এবং গভর্নমেন্ট কনসেশন লোন (জিসিএল) উভয়ক্ষেত্রে ঋণের সুদ ২-৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করা, প্রতিশ্রুতি ফি বাদ দেওয়া এবং ঋণ পরিশোধের সময় ২০ বছর থেকে বাড়িয়ে ৩০ বছর করার অনুরোধ জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।

“বাংলাদেশের ভালো রেকর্ডের প্রশংসা করে ঋণ পরিশোধের সময় বাড়ানোর বিষয়ে ‘নীতিগতভাবে একমত’ পোষণ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এবং সুদ হার কমানোর বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন।”

বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে পিবিসি ও জিসিএল চুক্তির আওতায় চীন থেকে ঋণ নিয়ে থাকে বাংলাদেশ। উভয় চুক্তিতে পাঁচ বছরের গ্রেস পিরিয়ড দিয়ে ঋণ পরিশোধের মেয়াদ ২০ বছর। জিসিএলে ঋণে সুদহার ২ শতাংশ হলেও পিবিসিতে এ হার ৩ শতাংশ।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত হিসাবে অনুযায়ী চীনের কাছে বাংলাদেশের ঋণের দায় ছিল ৫৫৭ কোটি ৭৫ লাখ যুক্তরাষ্ট্র ডলার, যা বাংলাদেশের মোট ঋণের ৯ শতাংশ। ঋণদাতা হিসেবে চীন ছিল চতুর্থ অবস্থানে।

ইআরডির আরেকটি হিসাব অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের পাঁচ মাসে চীন থেকে কোনো ঋণের প্রতিশ্রুতি পায়নি বাংলাদেশ। তবে এ সময়ে দেশটি থেকে ঋণ ছাড় হয়েছে ১৩ কোটি ৫২ লাখ ডলার।

ঋণ পরিশোধের সময় বাড়াতে ইতিবাচক সাড়ার পাশাপাশি স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পরও তিন বছর বাংলাদেশি পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকারের আশ্বাস দিয়েছেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

বাংলাদেশের পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খায় এমন উন্নয়নমূলক পথ অন্বেষণের উপর জোর দিয়ে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে সহায়তা অব্যাহত রাখতে চায় বেইজিং।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও মর্যাদা রক্ষার ক্ষেত্রে এবং জাতীয় পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খায় ও জনগণের পছন্দের প্রতিফলন ঘটে এমন উন্নয়নের পথ অন্বেষণকে তার দেশে সমর্থন করে।

“এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে সহায়তা অব্যাহত রাখতে ইচ্ছুক (চীন)।”

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর নিজের প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে সোমবার বেইজিংয়ে গেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াংয়ের পাশাপাশি মঙ্গলবার চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক বিভাগের মন্ত্রী লিউ জিয়ানশাও এবং চীনের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতা সংস্থার (সিডকা) চেয়ারম্যান লাও ঝাওহুইয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।

বেইজিংয়ে বিভিন্ন বৈঠক শেষে সাংহাই যাবেন তৌহিদ হোসেন। সেখানে তিনি সাংহাই ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজে (এসআইআইএস) একটি আলোচনায় অংশ নেবেন।

সাংহাই চেম্বারের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়ের পাশাপাশি বৈদ্যুতিক গাড়ি, রোবোটিক্স ও কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণের তিনটি কারখানা পরিদর্শনের সূচি রয়েছে তার।

ওয়াং ই বলেন, চীন প্রতিবেশীর কূটনীতিতে বাংলাদেশকে সবসময় গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রেখেছে এবং বাংলাদেশের সব জনগণের জন্য ভালো প্রতিবেশীসুলভ এবং বন্ধুত্বপূর্ণ নীতি নিয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ঐতিহ্যগত বন্ধুত্ব বজায় রাখা, কৌশলগত যোগাযোগ শক্তিশালী করা, বাস্তবসম্মত সহযোগিতা গভীর, যৌথভাবে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ বাস্তবায়নে কাজ করতে চীন।

চীনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলের ঐক্য থাকার কথা বলেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।

দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে তিনি বলেন, চীনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক ঐক্যের বিষয় এবং এটা সব সরকার ও জনগণ সমর্থন করেছে।

তিনি বলেন, রাজনীতি, অর্থনীতি, বাণিজ্য, অবকাঠামো, চিকিৎসা, পানি সংরক্ষণ, মানবসম্পদ উন্নয়নের মত খাতে চীনের সঙ্গে সহযোগিতা গভীর করতে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। দুদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিতে চায় বাংলাদেশ।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘এক চীন নীতি’ এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতিকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে বাংলাদেশ।

জুলাই-অগাস্টের আন্দোলন বাংলাদেশকে সমতা, বৈষম্যহীনতা, দুর্নীতিহীন এবং সম্পদে সবার সমান প্রবেশাধিকারের ভিত্তিতে জাতি পুনর্গঠনের সুযোগ করে দিয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকার অনুরোধে কুনমিংয়ের ৩-৪টি হাসপাতালকে বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত করার সিদ্ধান্তের কথা জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, এ বছর দুদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ঢাকায় একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণ করে দিতে চীনকে প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। এ প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে চীন।

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 8646
  • Total Visits: 1509853
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1698

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ বৃহস্পতিবার, ২৩শে জানুয়ারি, ২০২৫ ইং
  • ৯ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (শীতকাল)
  • ২২শে রজব, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, রাত ১২:০৫

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
  12345
20212223242526
2728293031  
       
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018