এম এ কবীর, ঝিনাইদহ : সংসারের স্বচ্ছলতা ফেরাতে ধার-কর্জ করে, ভিটে মাটি বিক্রি করে সৌদী আরবে গিয়েছিলেন ঝিনাইদিহের মহেশপুর উপজেলার শংকরহুদা গ্রামের মজিবর বিশ্বাসের ছেলে নাজমুল হোসেন, সলিমুদ্দিনের ছেলে আজাদ এবং শৈলকুপা উপজেলার লক্ষণদিয়া গ্রামের ওহিদুল মাস্টারের ছেলে আরিফুল ইসলাম টোকন। তবে প্রতারক আদম ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর তাদের কোন কাজ না দিয়ে আটকে রাখেন অন্ধকার গুদাম ঘরে। দিনের পর দিন না খেয়ে,বিনা চিকিৎসায় ক্ষুধার জ¦ালা সইতে না পেরে নিজেরাই বের হয়ে আসেন সৌদীর রাস্তায়, কাজের সন্ধানে। রাস্তায় বের হয়েই পড়েন আরেক বিপদে। ধরা পড়েন সৌদী পুলিশের হাতে। বেধড়ক মারপিট করার পর নেয়া হয় জেল হাজতে। আইনী সহায়তা পেতে বাড়ি থেকে আবারও টাকা পাঠাতে হয় হতদরিদ্র পিতা-মাতার। অবশেষে সব হারিয়ে ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে শূণ্য হাতে ফিরতে হয় দেশে। বাড়ি ফেরার পর বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তান, দুধের বাচ্চা আত্মীয় স্বজন কান্নায় ভেঙে পড়েন। সৃষ্টি হয় এক করুণ দৃশ্যের। এই গল্প সাংবাদিকদের বলছিলেন সৌদী ফেরত প্রতারণার শিকার আরিফুল ইসলাম টোকন। গতকাল বিকালে ঝিনাইদহ শহরের একটি পত্রিকা অফিস মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনের এই করুন কাহিনী তুলে ধরেন প্রতারণার শিকার আরিফুল এবং ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যবৃন্দ।
প্রতারণার শিকার নাজমুলের পিতা মজিবর বলেন, ভিটে-মাটিসহ সব হারিয়ে আজ আমরা পথের ফকির। ছেলে মেয়ের মুখে দুমুঠো ভাত তুলে দিতে পারিনা। এখন আমরা পরের ক্ষেতে কামলা খাটি। সুখের আশায় ছেলে নাজুমুল,জামাই আরিফুল এবং আমার ভাই এর ছেলে আজাদকে সৌদী আরবে পাঠাতে ব্যাংকের মাধ্যমে ১২ লক্ষ টাকা তুলে দিই মহেশপুর উপজেলার হাবাসপুর গ্রামের শওকত আলীর ছেলে প্রতারক আদম ব্যবসায়ী মুস্তাফিজুর রহমানের হাতে। টাকা হাতে পেয়ে বেশ কিছুদিন ঘুরানোর পর তিন জনকেই সৌদী আরবে পাঠানোর টিকেট-ভিসা দেয়। তবে ভিসার তথ্য গোপন রেখে কাজের ব্যবস্থা না করে এবং ওয়ার্ক পারমিট ভিসা না দিয়ে তাদের দুজন আরিফুল এবং আজাদকে সাপ্লাই ভিসায় এবং নাজমুলকে ওমরা ভিসায় সেখানে পাঠায়।
তিনি জানান, আমার জামাই আরিফুল এবং ভাইয়ের ছেলে আজাদ ২০২৩ সালের মার্চ মাসে জেল খেটে দেশে ফিরলেও আমার ছেলে এখনও সৌদী আরবে ওমরা ভিসা নিয়ে পলাতক জীবন যাপন করছে। যে কোন সময় পুলিশের হাতে ধরা পড়লে নিশ্চিত জেলে যেতে হবে। এখন নতুন করে কাগজ পত্র এবং ভিসা না পাঠালে কাজও করতে পারবে না দেশেও আসতে পারবে না। আমরা অসহায় খেটে খাওয়া মানুষ। একদিকে ছেলের জীবনের চিন্তা, অন্যদিকে পেটের চিন্তা। যে দুজন ফিরতে পেরেছে তারও এখন সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পথে পথে ঘুরছে। মজিবর বিশ^াস বলেন, আমরা নাজমুলের জন্য কাজের ব্যবস্থা সহ নতুন ভাবে ভিসা করে দিতে এবং যারা জেল খেটে দেশে এসেছে তাদের টাকা ফেরৎ দিতে প্রতারক মুস্তাফিজুরের কাছে বার বার অনুরোধ করলেও তিনি কোন কথাই শুনছেন না। বরং বিভিন্ন মাধ্যমে আমাদের হুমকী দিয়ে যাাচ্ছন। তিনি বলেন আমরা প্রাণ ভয়ে এবং কোন উপায় না পেয়ে সংবাদ সম্মেলন করছি। তিনি বলেন আপনাদের মাধ্যমে আমরা জেলা প্রশাসক,পুলিশ সুপার এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ এবং মন্ত্রনালয়ের কাছে আমাদের পাশে দাড়ানোর আবেদন জানাই। এবং প্রতারক আদম ব্যবসায়ী মুস্তাফিজুরের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানাই। তা না হলে পরিবার পরিজন নিয়ে মৃত্যু ছাড়া কোন উপায় থাকবে না।
Leave a Reply