অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : পড়ালেখার খরচ চালাতে অনেকটা হিমশিম খেতে হয়েছে গাজীপুরের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র খসরু আহমেদকে। নিম্ন আয়ের পরিবারের সন্তান হওয়ায় পরিবার থেকে তেমন সহযোগিতা পায়নি। এর ফলে পড়া লেখার পাশাপাশি চাকরির জন্য অনেক ছোটাছুটিও করেছেন। তবে দীর্ঘ চেষ্টা করেও কোনো কূলকিনারা করতে পারেননি। তাই নিজেই কিছু একটা করার সিদ্ধান্ত নেন।
এরপর শুরু করেন ভিনদেশি স্ট্রবেরি চাষ, আর তাতেই মেলে সাফল্যের দেখা। অল্পদিনের মধ্যেই বেকারত্বের অবসান ঘটিয়ে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন খসরু আহমেদ। যে ছেলেটা অর্থের অভাবে ঠিকমতো লেখাপড়ার খরচ মেটাতে হিমশিম খেতো, আজ সে এখন প্রতিদিন স্ট্রবেরি বিক্রি করে আয় করছেন ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা।
জেলার শ্রীপুর উপজেলার বরমী বরামা এলাকায় তিন বিঘা জমিতে তিনি ১৮ হাজার স্ট্রবেরির চারা রোপণ করেন দেড় বছর আগে। বছর ঘুরতেই গাছগুলো পরিপক্ক হওয়ায় থোঁকায় থোঁকায় ধরেছে স্ট্রবেরি। ব্যাপক ফলন হয়েছে। প্রতিটি গাছে ধরে আছে সবুজ ও লাল স্ট্রবেরি। শীতপ্রধান দেশের ফল হিসেবে স্ট্রবেরির প্রচলন থাকলেও এখন খসরুদের মতো প্রান্তিক কৃষকের কল্যাণে স্ট্রবেরি বাংলাদেশেও সবার মধ্যে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। বাজার চাহিদা, ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় প্রতিনিয়ত জনপ্রিয় হচ্ছে স্ট্রবেরি চাষ।
স্ট্রবেরি চাষি খসরু আহমেদ বলেন, বাড়ির পাশে তার আপন চাচা প্রথমে স্ট্রবেরি চাষ শুরু করে। ভালো ফলন ও স্ট্রবেরির বাজারে ভালো দাম থাকায় আমিও উদ্যোগী হই এই ফল চাষে। প্রথমে চারা কিনে এবং পরে নিজের জমিতে চারা তৈরি করি এবং ৩ বিঘা জমিতে স্ট্রবেরি রোপণ করি। দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করে পরিচর্যা করতে থাকি। প্রয়োজনীয় সার ও কীটনাকশক ব্যবহার করি। এতে প্রায় দেড় লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। গাছগুলো সুস্থ রাখতে সব সময় যত্ন নিয়েছি। যার ফল হিসেবে এখন প্রতিটি গাছে ধরে আছে ভিনদেশি স্ট্রবেরি।
তিনি জানান, তার বাগান থেকে এখন প্রতিদিন ৬০ কেজির মতো ফল উঠছে। সেই ফল স্থানীয় বাজারে ও বিভিন্ন আড়তে বিক্রি করে দেন। সব মিলিয়ে তিনি এখন প্রতিদিন স্ট্রবেরি বিক্রি করে আয় করছেন ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। নিজের পড়াশোনার খরচ মিটিয়ে এখন পরিবারের হাল ধরেছেন। বাবা মায়ের বড় ছেলে হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন সফলতার সঙ্গে।
শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমাইয়া বৃষ্টি বাসসকে জানান, শীতপ্রধান দেশের ফল স্ট্রবেরি এখন দেশে বিভিন্ন জায়গায় চাষ হচ্ছে। তবে খসরুর মতো এতো সুন্দর ফলন খুব কম লোকের বাগান পাওয়া যায়। তার বাগান দেখে এলাকার অনেকেই এই স্ট্রবেরি চাষে মনোযোগী হচ্ছেন। ফলন ও লাভ বেশি হওয়ায় অল্পদিনে বিদেশি এই ফল চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা।