অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : মাচা পদ্ধতিতে গ্রীষ্মকালীন উচ্চ ফলনশীল টমেটো চাষ করে ব্যাপক সাফল্য লাভ করেছে জেলার জীবননগর উপজেলার টমেটো চাষিরা। অল্প সময়ে বেশি লাভজনক হওয়ায় গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষে তাদের আগ্রহ বাড়ছে। এদিকে বাজারে থাইল্যান্ডের উচ্চ ফলনশীল বর্ষা, কুইন ও বারি-৮ জাতের টমেটোর চাহিদা থাকায় চাষিরা লাভবান হচ্ছেন। ৪ মাসের এ আবাদে খরচ বাদ দিয়ে কৃষকের বিঘা প্রতি লাভ হয় এক থেকে দেড় লাখ টাকা। প্রতি বিঘায় উৎপাদন ১০০ থেকে ১১০ মণ টমেটো।
জীবননগর কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, জীবননগর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কৃষকরা স্বল্পমেয়াদে উচ্চ ফলনশীল টমেটো চাষ করছেন। বর্ষা কুইন জাতের অধিক ফলনশীল এ টমেটো গাছ রোপণের ৫০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে বিক্রির উপযোগী হয়। এই জাতের টমেটোর সাইজ বেশ বড় হয়। এ কারণে অন্য জাতের টমেটোর চেয়ে বেশি দরে বিক্রি হয়। শীত এগিয়ে আসায় বর্তমান বাজারে টমেটোর চাহিদা বেড়ে গেছে। জুন-জুলাই মাসে গ্রীস্মকালীন হাইব্রিড জাতের টমেটোর চারা রোপণ করা হয়। রোপণের ২ মাস পর অক্টোবর মাস থেকে এটা বাজারজাত করা হয়। বর্তমানে বাজারে এ টমেটোর পাশাপাশি শীতকালীন টমেটো উঠতে শুরু করেছে।
উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের পশ্চিম বাড়ান্দী গ্রামের কৃষক আব্দুল মজিদ বলেন, ‘আমি প্রতিবছর হাইব্রিড টমেটো চাষ করি। এবার একবিঘা জমিতে টমেটো চাষ করেছি। মাচা পদ্ধতিতে টমেটো চাষে করলে একদিকে যেমন : ফলন বেশি পাওয়া যায়, অন্যদিকে টমেটো নষ্ট হয় না বললেই চলে। এ পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করলে কীটনাশক, সার ও সেচ দেওয়া সহজ হয়। টমেটো উত্তোলন, বাগানের মধ্যে চলাফেরা এবং পরিচর্যা করতেও সুবিধা হয়।
তিনি বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করতে এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে দেড় লাখ টাকা। এখন পর্যন্ত বিক্রি করে টাকা ঘরে তুলেছি প্রায় ২ লাখ টাকা। বর্তমানে জমিতে যে পরিমাণ টমেটো আছে সেটা বিক্রি করে আরো লাখ টাকা পাবো বলে আশা করছি।’
টমেটো চাষি তরিকুল ইসলাম বাসসকে বলেন, মাচা পদ্ধতিতে ৩ বিঘা জমিতে থাইল্যান্ড হাইব্রিড, বর্ষা কুইন টমেটো চাষ করেছি। বাজারে বর্ষা কুইন টমেটো প্রতিকেজি ১০০-১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তিন বিঘা জমি চাষে খরচ হয়েছে ৪ লাখ টাকা। এ পর্যন্ত ৫ লাখ টাকার টমেটো বিক্রি করেছি। মাঠে যে পরিমাণে টমেটো আছে সেটা বিক্রি করলে ৪ লাখ টাকা পাবো বলে আশা করছি।
তিনি বলেন, ‘জুন মাসে হাইব্রিড বর্ষা কুইন টমেটোর বীজ সংগ্রহ করি। এরপর পাতু দিই। পাতু দেওয়ার ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে বেডে চারা লাগানোর উপযোগী হয়। এবার আমি টমেটোর চারা বিক্রি করেও ৮০ হাজার টাকা লাভ করেছি। ’
চাষি আশরাফুল বলেন, ‘আমি বর্ষা কুইন টমেটো চাষ করেছি, দেড় বিঘা জমিতে দেড় বিঘা টমেটো আবাদে চারা লেগেছে সাড়ে ৪ হাজার পিস। এখন পর্যন্ত মোট ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ফলন ভালো হয়েছে। ১ বিঘায় ১২০ মণ টমেটো পাওয়া যাবে।’
জীবননগর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা পাভেল রানা বলেন, ‘উপজেলায় গ্রীষ্মকালীন বর্ষা কুইন টমেটো চাষ হয়েছে। এ জাতের টমেটো অধিক ফলনশীল হওয়ায় কৃষকেরা বেশি দরে বিক্রি করতে পারছে। এতে বেশি লাভ হচ্ছে। আগামীতে তারা যাতে আরো বেশি জমিতে বর্ষা কুইন জাতের টমেটো চাষ করতে পারে তার জন্য ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে।’
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপর-পরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার বলেন, জেলার ৪ উপজেলার মধ্যে জীবননগরে টমেটোসহ বিভিন্ন ফসল আবাদ বেশি হয়। এবার ৩২ বিঘা জমিতে উচ্চ ফলনশীল বর্ষা, কুইন ও বারি-৮ জাতের টমেটোর চাষ হয়েছে। জুন-জুলাই মাস এ জাতের টমেটো রোপণের উপযুক্ত সময়। এ আবাদে যেমন : খরচ বেশি হয়, লাভের পরিমাণটাও অনেক বেশি থাকে। বিঘাপ্রতি ফলন হয় ১১০ থেকে ১১৫ মণ।
তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে ১ হাজার ১০০ বিঘা জমিতে শীতকালীন টমেটো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।