অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) একজন প্রাক্তন কমিশনারসহ পাঁচজন পশ্চিমা ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত মঙ্গলবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এই সিদ্ধানের কথা জানানোর পর ফরাসি নেতা ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁসহ ইউরোপীয় নেতারা ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে তীব্র ভাষায় বিবৃতি দিয়েছেন এবং ‘জবরদস্তি ও ভয় দেখানোর’ অভিযোগ করেছেন।
দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন অনুসারে, ইইউ’র প্রাক্তন কমিশনার ও জোটের ডিজিটাল সার্ভিসেস অ্যাক্ট (ডিএসএ) আইনের অন্যতম স্থপতি থিয়েরি ব্রেটন। বাকিদের মধ্যে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সেন্টার ফর কাউন্টারিং ডিজিটাল হেটের ব্রিটিশ প্রধান নির্বাহী ইমরান আহমেদ; জার্মান অলাভজনক হেটএইডের আনা-লেনা ভন হোডেনবার্গ এবং জোসেফাইন ব্যালন এবং গ্লোবাল ডিসইনফরমেশন ইনডেক্সের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ক্লেয়ার মেলফোর্ড।
ভিসা নিষেধাজ্ঞার সময় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, ওই ব্যক্তিরা মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে (যেমন: এক্স, মেটা) চাপ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের দৃষ্টিভঙ্গি দমনে কাজ করছেন।
রুবিও বলেছেন, এই ব্যক্তি ও সংগঠনগুলো বিশ্বজুড়ে একটি শক্তিশালী চক্র গড়ে তুলেছে, যাদের কাজই হলো মানুষের কথা বলায় বাধা দেওয়া। তারা বিভিন্ন অজুহাতে ইন্টারনেটে মানুষের স্বাধীন মতামত প্রকাশ বন্ধ করতে চায়।
প্রতিক্রিয়ায় জার্মানি, যুক্তরাজ্য, স্পেন এবং ইইউ কর্মকর্তাদের একটি দল এই পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছেন। ম্যাক্রোঁ তীব্র ভাষায় বলেছেন, ‘এই পদক্ষেপগুলো ইউরোপীয় ডিজিটাল সার্বভৌমত্বকে ক্ষুণ্ণ করার লক্ষ্যে ভীতি প্রদর্শন এবং বলপ্রয়োগের শামিল।’
তিনি আরও বলেন, তিনি ব্রেটনের সঙ্গে এটি নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা হাল ছাড়ব না এবং আমরা ইউরোপের স্বাধীনতা এবং ইউরোপীয়দের স্বাধীনতা রক্ষা করব।’
ইইউ কমিশনের সভাপতি উরসুলা ভন ডের লেইন বলেছেন, ‘বাকস্বাধীনতা আমাদের শক্তিশালী এবং প্রাণবন্ত ইউরোপীয় গণতন্ত্রের ভিত্তি। আমরা এতে গর্বিত। আমরা এটি রক্ষা করব।’
কমিশনের একজন মুখপাত্র আরও বলেন, ‘প্রয়োজনে, অন্যায্য পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আমাদের নিয়ন্ত্রক স্বায়ত্তশাসন রক্ষার জন্য আমরা দ্রুত এবং সিদ্ধান্তমূলকভাবে প্রতিক্রিয়া জানাব।’
যুক্তরাজ্যে সরকার বলেছে, তারা বাকস্বাধীনতা সমুন্নত রাখার জন্য ‘সম্পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’।
জার্মানির বিচার মন্ত্রণালয় বলেছে, ভিসা নিষেধাজ্ঞা অগ্রহণযোগ্য।
জার্মান ক্ষমতাসীন সিডিইউ-এর সদস্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য ডেনিস র্যাডটকে বলেন, ইউরোপে ট্রাম্পের সমর্থকরা এটিকে বাকস্বাধীনতার লড়াই হিসেবে সমর্থন করেন। ঠিক কোথায় মতামত দমন করা হয়েছে? চীন এবং রাশিয়ার ক্ষেত্রে বাকস্বাধীনতার লড়াই কোথায়?’
প্রাক্তন সিনিয়র ফরাসি কূটনীতিক এবং ইনস্টিটিউট মন্টেইনের থিঙ্কট্যাঙ্কের ভূ-রাজনীতি ও কূটনীতির আবাসিক সিনিয়র ফেলো মিশেল ডুক্লোস বলেছে, ‘ইউরোপ ওয়াশিংটনের জন্য নতুন রাশিয়া হয়ে উঠছে। এটি ১৯২০-এর দশকের কথা মনে করিয়ে দেয় – আমেরিকা তার প্রাক্তন মিত্রদের বিরুদ্ধে প্রাক্তন শত্রু জার্মানিকে সমর্থন করেছিল।’