অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ভারতে দেশজুড়ে বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের মধ্য দিয়ে মুসলিম সম্প্রদায়কে নিশানা বানানোর ঘটনা ৩ রাজ্যের সরকারের কাছে জবাব তলব করেছে সুপ্রিম কোর্ট। এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি কেএম জোসেফ ও হৃষীকেশ রায়ের সমন্বিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
গতকাল (শুক্রবার) সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতির সমন্বিত বেঞ্চের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিদ্বেষ বক্তব্যের ঘটনাগুলোতে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, তা জানাতে হবে ওই রিপোর্টে। বিচারপতিরা সাফ জানিয়ে দেন, এসব ক্ষেত্রে সরকারকে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এফআইআর দায়ের করতে হবে। কারও অভিযোগ দায়েরের অপেক্ষায় বসে থাকা চলবে না। সরকার ও পুলিশ পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে আদালত অবমাননার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।
আদালতে করা আবেদনে বলা হয়, দেশজুড়ে মুসলিম সম্প্রদায়কে নিশানা বানানোর ঘটনা বাড়ছে। এর নেপথ্য কারিগর ক্ষমতাসীন দলের (বিজেপি) সদস্যরা।
আবেদনকারী শাহীন আবদুল্লাহর দাবি- শুধু মুসলিম নয়, অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধেও বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক বক্তব্যের মাধ্যমে উত্তেজনা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এর প্রভাবে বিদ্বেষমূলক অপরাধ ও শারীরিক নিগ্রহের ঘটনা বাড়ছে। এর বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারগুলোকে বিশ্বাসযোগ্য, নিরপেক্ষ তদন্তের নির্দেশ দিক সুপ্রিম কোর্ট। এ ধরনের ঘটনা বন্ধ করতে প্রয়োজনে ‘ইউএপিএ’সহ বিভিন্ন কঠোর আইন প্রয়োগ করা হোক।
আবেদনকারীর হয়ে সুপ্রিম কোর্টে সাফাই দেন সিনিয়র আইনজীবী কপিল সিবল। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, দিল্লিতে সাম্প্রতিক একটি সভার প্রসঙ্গও। তিনি বলেন, ওই সভা থেকে মুসলিম সম্প্রদায়কে সম্পূর্ণ বয়কটের ডাক দিয়েছিলেন পশ্চিম দিল্লির বিজেপি এমপি প্রবেশ বর্মা। জগৎগুরু যোগেশ্বর আচার্যের করা ‘গলা কেটে নেওয়া হোক’ মন্তব্যের প্রসঙ্গও ওঠে শুনানিতে।
আইনজীবী কপিল সিবলের ওই সাফাইয়ের পর বিচারপতিদের মন্তব্য, ‘ধর্মনিরপেক্ষ দেশে ঘৃণা-ভাষণের মতো ঘটনা অবিশ্বাস্য! তা আটকানোর দায়িত্ব আমাদেরই। আমরা যদি সেই দায়িত্ব পালন না করি, তা হলে কর্তব্যে গাফিলতি হবে।’
বিচারপতিদ্বয় বলেন, ‘আমরা এখন একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে রয়েছি। ধর্মের নামে কোথায় পৌঁছে গিয়েছি আমরা?’
আদালতের পক্ষ থেকে ওই ইস্যুতে উত্তর প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড ও দিল্লি সরকারকে এ ব্যাপারে নোটিস পাঠানো হয়েছে। ঘটনাচক্রে, প্রথম দু’টি রাজ্যে বিজেপিই ক্ষমতায়। অন্যদিকে, দিল্লি পুলিস কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে। ফলে, স্বাভাবিকভাবেই কেন্দ্রীয় সরকার ও গেরুয়া শিবির কিছুটা অস্বস্তিতে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
Leave a Reply