অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : মা, বাবা, আত্মীয় স্বজন বলতে এই দুনিয়ায় তাদের কেউই নেই। প্রথমে পালিত হয়েছেন সিলেট বেবি হোমে পরে সিলেট শিশু পরিবারে, সেখান থেকে মৌলভীবাজার এতিম ও প্রতিবন্ধি প্রশিক্ষন কেন্দ্রে। জন্মের পর তারা মা বাবার দেখা না পেলেও এখন তাদের পিতার দায়িত্ব নিয়েছেন মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক। আর নিজের মেয়ে হিসেবে জাকজমকপূর্ণ আয়োজনে তাদের বিয়েও দিয়েছেন।
জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান জানান, শিশু বয়সেই পৃথক পৃথক স্থান থেকে শাকিলা ও নয়ন তাঁরাকে উদ্ধার করে সিলেট বেবি হোমে নিয়ে আসা হয়। সেখানেই তারা ৭ বছর পর্যন্ত থাকে। এর পর তাদের ঠাই হয় সিলেট শিশু পরিবারে। সেখানেই বড় হয়ে উঠা। কিন্তু তাদের বয়স ১৭ হয়ে যাওয়ার পর তাদেরকে ছাড়তে হবে শিশু পরিবার। সেখান থেকে দুই বছরের জন্য কারিগরি প্রশিক্ষন নিতে তারা আসে সমাজসেবা অধিদপ্তর পরিচালিত মৌলভীবাজার এতিম ও প্রতিবন্ধি প্রশিক্ষন কেন্দ্রে।
এদিকে প্রশিক্ষন কেন্দ্রেও তাদের মেয়াদ শেষ হয়ে আসছিল। এর পর তারা কোথায় যাবে এ নিয়ে প্রশিক্ষন কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষও ছিলেন দুশ্চিন্তাগস্থ। খবর যায় মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের কাছে। এর পর জেলা প্রশাসক তাদের এই দুশ্চিন্তার অবসান করেন। তিনি নিজেই দুই মেয়ের পিতার দ্বায়িত্ব নেন। দুই মেয়ের জন্যই পাত্র খুঁজে নিজে সব কিছুতে উপস্থিত থেকে বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) তাদের আনন্দঘন পরিবেশে বিয়ে দেন। নিকাহ নামায় পিতার কলামে তিনিই স্বাক্ষর করেন।
মৌলভীবাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাসেবী সাইফুল ইসলাম বাবুল বলেন, “তাদের বিয়েতে দাওয়াত দেয়া হয় মৌলভীবাজারের প্রায় ৩ শতাধিক বিশিষ্টজনদের। আয়োজন করা হয় ভুড়িভোজের। তাদের গায়ে হলুদে উপস্থিত হন মৌলভীবাজার-৩ আসনের এমপি নেছার আহমদ। আর বিয়েতে তিনশতাধিক অতিথির সাথে উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের সংরক্ষিত নারী আসনের এমপিও। ছিলেন জেলার পুলিশ সুপার মো. জাকারিয়া, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবরিনা রহমান বাঁধনসহ প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকতারা।”
অতিথিরা প্রত্যেকেই তাদের আর্শিবাদ ও দোয়া করেন। দেন উপহারও। একই সাথে এই দুই এতিম শিশুর জন্য প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকেও এক লক্ষ করে দুই লক্ষ টাকা উপহার দেয়া হয় বলে জানান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক তানিয়া রহমান।
এই দুই দুই কন্যার মধ্যে শাকিলা বিয়ে হয় টিউবওয়েল মিস্ত্রী আল আমিনের সঙ্গে এবং নয়নতারার বিয়ে হয় সিএনজি অটো চালক মো. সাব্বিরের সঙ্গে। নয়নতারা ট্রেইলারিং বাটিকের ও শাকিলা ট্রেইলারিং এবং ড্রাইভিং শিখেছে।
জেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তরের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার একেএম মিজানুর রহমান বলেন, “তাদের বিয়েতে যাতে কোনো ধরনের কমতি না হয়, এজন্য সব আয়োজন করা হয়। দুই মেয়ের অনুষ্ঠানে তিন শতাধিক অতিথির জন্য খাবারের আয়োজন করা হয়। জেলা সর্বস্তরের মানুষ এ বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে দুই কন্যার জন্য দোয়া করেছেন।”
জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের দুই কন্যার প্রশিক্ষক মো. শামীমুর রহমান বলেন, “তারা সিলেট সমাজসেবা পরিচালিত শিশু পরিবার থেকে দুইবছর হল এখানে এসেছে। নয়নতারা ট্রেইলারিং এবং বাটিকও শাকিলা টেইলারিং ও ড্রাইভিং শিখেছে।”
জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান আরো বলেন, “একজন পিতা তার কন্যাদের যেভাবে বিয়ে দেন, তেমনি এ কন্যাদের পিতা হিসেবে একজন কন্যাদায়গ্রস্ত পিতার মতো আমি তাদের বিয়ে দেই। সকল নিয়ম, সকল আনুষ্ঠানিকতা এ বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হল।এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে দুই মেয়েকে এক লক্ষ করে মোট দুই লক্ষ টাকা উপহার দেওয়া হয়েছে।”
অভিভাকহীন এই দুই কন্যার পিতার দায়িত্ব নিয়ে তাদের জাকজমকপূর্ণ বিয়ে দেয়ায় জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন জেলাবাসী।
Leave a Reply