অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লীতে ‘শান্তি ও উন্নয়নে ধর্মের সহাবস্থানের অবদান’ শীর্ষক ইসলাম ও হিন্দুধর্মের মধ্যে তৃতীয় দফা সংলাপ শুরু হয়েছে। সম্মেলনে ইরান ও ভারতের আলেম, পন্ডিত এবং বিভিন্ন শ্রেণীর বুদ্ধিজীবিরা অংশ নিয়েছেন।
ইসলামি প্রজতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ীর কার্যালয়ের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-পরিচালকের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে এই আন্তর্জাতিক বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা শান্তি ও সমাজ উন্নয়নের লক্ষ্যে আন্তঃধর্মীয় অভিন্নতার ওপর জোর দেয়ার পাশাপাশি ইসলাম ও মুসলিম ধর্মের শীর্ষস্থানীয় পন্ডিতদের মধ্যে কার্যকর সংলাপ অনুষ্ঠানের ওপর জোর দিয়েছেন।
ভারতের মতো দেশে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বৃত্তের দৃষ্টিকোণ থেকে যেখানে জাতি ও ধর্মের মধ্যে বহুত্ববাদ রয়েছে সেখানে বিভিন্ন ধর্ম বিশ্বাসের মধ্যে সংলাপ অনুষ্ঠানের মাধ্যম মানুষের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত ফলপ্রসূ এবং কার্যকর হতে পারে। এছাড়া ভারতের বিশ কোটিরও বেশি মানুষ মুসলমান হওয়ায় এই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ভারতের বিশেষজ্ঞ ও পণ্ডিত সরোশ আমিরি এ সম্পর্কে বলেছেন: “ভারতের বহু-জাতিগত এবং ধর্মীয় সমাজে মধ্যে এ দেশের মানুষ বিশেষ করে মুসলমান এবং হিন্দুরা সবসময় শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন করে আসছে। এছাড়া, ভারতের বিভিন্ন শিল্প ও প্রযুক্তিগত কর্মসূচির অগ্রগতিতে সাহায্য করার ক্ষেত্রে মুসলমানরা মোটেও পিছিয়ে নেই। তবে কিছু চরমপন্থী গোষ্ঠী মুসলমান ও হিন্দুদের মধ্যে ধারাবাহিক শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানকে বিনষ্ট করার চেষ্টা চালিয়ে আসছে।
নিঃসন্দেহে মুসলিম এবং হিন্দুসহ বিভিন্ন ধর্ম ও জাতিগোষ্ঠীর পণ্ডিত ব্যক্তি এবং ধর্মীয় বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতিতে বৈজ্ঞানিক সভা করা হলে তা ইসলাম ও হিন্দু ধর্মের অনুসারীদের কাছাকাছি আনতে সাহায্য করতে পারে। কারণ যারা ধর্মের মধ্যে সংহতিতে বিশ্বাস করে না তারা তাদের অশুভ লক্ষ্যকে এগিয়ে নিতে মানুষের অজ্ঞতাকে ব্যবহার করছে এবং এটাও উল্লেখ করার বিষয় যে সব ধর্মের মধ্যে এই ধরনের উগ্র এবং মুনাফালোভী লোক রয়েছে।
তাই নয়াদিল্লিতে বক্তারা ইসলাম-হিন্দু ধর্মের মধ্যে সংলাপ অনুষ্ঠানের ওপর জোর দিয়ে বলেছেন, এ ধরনের সংলাপ ইরান ও ভারতকে বিশ্বে কাঙ্খিত অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি এই দুই দেশকে উগ্রবাদী এবং আধিপত্যকামী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যে ইতিবাচক শক্তি যোগাবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
ভারতীয় বিষয়ক বিশেষজ্ঞ “আলি আলয়ি” এ সম্পর্কে বলেছেন, পৃথিবীর সর্বত্র এবং সব ধর্মের মধ্যে চরমপন্থা রয়েছে। কিন্তু ভারতে শিবসেনা এবং আরএসএস-এর মতো সংগঠিত উগ্র হিন্দুগোষ্ঠীর উপস্থিতির কারণে মুসলমানরা সেখানে ধারাবাহিকভাবে হামলার শিকার হচ্ছে।
তাই যদি ভারতে ধর্মীয় পণ্ডিত এবং প্রভাবশালীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে এবং সহযোগিতা জোরদার করার জন্য যদি এ ধরনের সভা অনুষ্ঠিত হয় তা মানুষের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানকে শক্তিশালী করার করার পাশাপাশি আভ্যন্তরীণ, আঞ্চলিক এবং এমনকি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা জোরদার করতে সহায়তা করবে।
যাই হোক নয়াদিল্লির বৈঠকে অংশগ্রহণকারী বুদ্ধিজীবী এবং বিভিন্ন শ্রেণীর ব্যক্তিরা আন্তঃধর্মীয় আলোচনার ইতিবাচক ফলাফলের প্রতি ইঙ্গিত করে মুসলিম ও হিন্দুদের মধ্যে আরো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার জন্য এসব বৈঠক অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। এই বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ভারতের জনগণ ইসলাম ও মুসলমানদের সর্বস্তরে সম্মান করে করে আসছে এবং পবিত্র আশুরাসহ মুসলমানদের অনেক ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে তারা অংশগ্রহণ করে আসছে।
এই পরিস্থিতি কিছু উগ্র গোষ্ঠীর পাশাপাশি প্রভাবশালী কিছু বিদেশী উস্কানিদাতা যেমন ইহুদিবাদীদের উদ্বিগ্ন করে তুলছে ।এই কারণে বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির জন্য এসব দুষ্ট হাত সবসময় কাজ করে আসলেও সমস্ত ধর্মের লক্ষ্য হচ্ছে শান্তি ও সুখ প্রতিষ্ঠা করা এবং শান্তিপূর্ণ জীবনের ভিত্তি ও ক্ষেত্রগুলিকে শক্তিশালী করা।
Leave a Reply