অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : কাতার বিশ্বকাপে অভিজ্ঞতার কাছে হেরে গেল মরক্কো। আফ্রিকা বা আরবের কোনো দেশ হয়ে প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালে উন্নীত হলেও এর চেয়ে বেশি সাফল্য একবারেই আশা করা যে বৃথা ছিল তা মরক্কোর সমর্থকরা হাড়ে হাড়ে টের পেল শনিবার রাতে।
তৃতীয় স্থান নির্ধারণী এই ম্যাচে মরক্কোকে ২-১ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে তৃতীয় হয়ে বিশ্বকাপ শেষ করে ক্রোয়েশিয়া। ম্যাচের ৭ মিনিটে ক্রোয়েশিয়াকা লিড এনে দেন জোস্কো গাভারদিওল। তবে ম্যাচের ৯ মিনিটে গোল শোধ করে মরক্কোকে সমতায় ফেরায় আশরাফ দারি। এরপর ম্যাচের ৪২ মিনিটে মিসলাভ ওরাসিচের গোলে লিড পায় ক্রোয়েশিয়া। শেষ পর্যন্ত ২-১ গোলে ম্যাচ জিতে নেয় ক্রোয়াটরা।
ম্যাচের শুরু থেকেই মরক্কোর ওপর চড়াও হয়ে খেলতে থাকে ক্রোয়েশিয়া। দ্বিতীয় মিনিটে দারুণ এক আক্রমোণ থেকে কর্নার পায়। তবে কর্নার থেকে তেমন কোনো বিপদ তৈরি করতে পারেনি ক্রোয়াটরা। ম্যাচের ৭ মিনিটের মাথায় এসে ফ্রিকিক থেকে ইভান পেরিসিচের বাড়ানো বলে লাফিয়ে উঠে হেড করেন জোস্কো গাভারদিওল। আর তাতেই লক্ষ্যভেদ ক্রোয়াটদের। ম্যাচে এগিয়ে যায় ১-০ গোলের ব্যবধানে।
ক্রোয়াটদের স্বস্তিতে থাকতে দেয়নি মরক্কো। গোটা টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত পারফর্ম করা মরক্কো গোল হজমের দুই মিনিট পরেই সমতায় ফেরে। ডান দিক থেকে বাড়ানো বলে হেড করে বল জালে জড়ান আশরাফ দারি। তার গোলে ম্যাচে সমতায় ফেরে মরক্কো। এরপর আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে খেলতে থাকে দু’দল। ম্যাচের ১৪ মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে শট করেন ইভান পেরিসিচ। তবে তা চলে যায় ক্রসবারের ওপর দিয়ে।
এরপর একের পর এক আক্রমণ করতে থাকে ক্রোয়েশিয়া। ১৮তম মিনিটে ডান দিক থেকে ভেসে আসা দারুণ এক ক্রসে হেড করেন ক্রামারিচ কিন্তু তার হেড রুখে দেন মরক্কোর গোলরক্ষক ইয়াসিন বনু। ২৪তম মিনিটে এসে দারুণ এক লং শট নেন লুকা মদ্রিচ। তবে তার শটে ছিল না তেমন শক্তি তাই সহজে রুখে দেন মরক্কান গোলরক্ষক। মিনিট তিনেক পর প্রতি আক্রমণে ওঠে মরক্কো। তবে ডান দিক থেকে আশরাফ হাকিমির ক্রস থেকে মাথা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হন ইউসুফ নাসেরি।
প্রথমার্ধের খেলা যতই গড়াচ্ছিল মরক্কোর আক্রমণের ধার ততই বাড়ছিল। একের পর এক আক্রমণে ক্রোয়াটদের রক্ষণে আঘাত হানছিল তারা। ৩২তম মিনিটে মরক্কোর স্ট্রাইকার সোফিয়ান বাউফলের দারুণ এক শট আটকে দেন ক্রোয়াট ডিফেন্ডার। ৩৬তম মিনিটে কর্নার থেকে ভেসে আসা বল নাসেরি হেড করলেও তা চলে যায় গোলপোস্টের বাইরে দিয়ে।
৪২তম মিনিটে এসে দারুণ এক আক্রমণ সাজায় ক্রোয়াটরা। বাঁ দিক থেকে বল পেয়ে নজরকাড়া শটে বল জালে জড়িয়ে ক্রোয়াটদের এগিয়ে নেন মিসলাভ ওরাসিচ। আর প্রথমার্ধে ২-১ গোলে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় ক্রোয়েশিয়া।
দ্বিতীয়ার্ধে ফিরে সমতায় ফেরার লড়াই শুরু করে মরক্কো। অন্যদিকে ক্রোয়েশিয়াও লিড বাড়ানোর চেষ্টায় মাঠে নামে। শুরুতেই দুটি দারুণ সুযোগ হাতছাড়া করে ক্রোয়াটরা। এরপর নিজেদের খুঁজে পায় মরক্কো। সমতায় ফিরতে একের পর এক আক্রমণ চালাতে শুরু করে তারা। ৬৫তম মিনিটে এসে দারুণ এক আক্রমণ থেকে ক্রস করেন আশরাফ হাকিমি। তবে বিপদ বুঝতে পেরে আগে থেকেই ক্লিয়ার করেন ক্রোয়াট রক্ষণভাগ।
এরপর আবারও আক্রমণে ওঠে ক্রোয়েশিয়া। ৭১তম মিনিটে দূরপাল্লার দারুণ এক শট নেন নিকোলা ভ্লাসিভ। তবে তা গোলপোস্টের ওপর দিয়ে বেরিয়ে যায়। ম্যাচের ৭৩ মিনিটে ডি বক্সের ভেতর থেকে শট করেন নাসেরি। কিন্তু তা অসাধারণ সেভে দলকে রক্ষা করেন ডমিনিক লিভাকোভিচ। এরপর ম্যাচের ৭৫ মিনিটে ডি বক্সের ভেতর হাকিমিকে ফেলে দিলে পেনাল্টির আবেদন জানায় মরক্কো। তবে তা নাকচ করে দেন রেফারি।
শেষ পর্যন্ত আর কোনো গোল না হওয়ায় ক্রোয়েশিয়া ২-১ ব্যবধানের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে। আর এতেই তৃতীয় হয়ে বিশ্বকাপ মিশন শেষ করে ক্রোয়াটরা। আর মরক্কোর ঐতিহাসিক বিশ্বকাপ যাত্রা শেষ হয় চতুর্থ হয়ে।
Leave a Reply