23 Nov 2024, 10:53 pm

যখন-তখন পেইনকিলার সেবনে হতে পারে মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : শরীরে সমস্যা হলেই মুড়ি মুড়কির মতো ওষুধ খাওয়ার প্রবণতা অনেকের মধ্যেই রয়েছে। অথচ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নিয়মিত এমন ওষুধ খেলে মৃত্যুর আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বিশেষ করে পেইনকিলার সত্যি কিলার হয়ে উঠতে পারে।

নিকোলাস হেনিঙার আইস হকি খেলতে খুব ভালোবাসেন। কম বয়সে সেই শখের কারণে তিনি বেশ কয়েকবার চোট পেয়েছিলেন। শরীরে মোট আটটি অপারেশন করতে হয়েছিল। ব্যথা দূর করতে তাঁকে মূলত মেটামাইজোল ওষুধ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই ওষুধের কারণে কঠিন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিলো।

স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে নিকোলাস বলেন, ‘এমন পরিস্থিতিতে পড়লে এবং প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করলে ওরা যা দেয়, কোনো প্রশ্ন না করে সেটা খেয়ে নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। তাতে কাজও হয়।’

তীব্র ও লাগাতার ব্যথা কমাতে মেটামাইজোল দেওয়া হয়। অন্ত্রে কলিক ব্যথা, পেটে খিঁচুনি অথবা ভীষণ জ্বরের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হলেও প্রদাহ কমাতে সেটা ব্যবহার করা হয় না। কিন্তু সম্ভাব্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কারণে এই ওষুধের প্রয়োগ নিয়ে প্রায়ই প্রবল বিতর্ক দেখা যায়।

নিকোলাস প্রথমদিকে কোনো সমস্যা ছাড়াই মেটামাইজোল খেয়েছেন। কিন্তু বছর দুয়েক আগে আচমকা তিনি ভীষণ জ্বরে কাবু হয়ে পড়েন।

সেই অবস্থার বর্ণনা করে তিনি বলেন, ‘একটা সময়ে জ্বর আরও খারাপ দিকে এগোতে লাগলো। তখন আমাকে কোনো একটা ওষুধ দেওয়া হলো। ফলে প্রবল গলা ব্যথা হলো। গিলতে কষ্ট হচ্ছিল, মাথা ব্যথায় কাহিল ছিলাম। খারাপ ফ্লুয়ের মতো অনুভূতি হচ্ছিল।’

ডাক্তাররা তার রক্ত পরীক্ষা করে অত্যন্ত কম গ্র্যানুলোক্টাইট পেলেন, যা সাদা রক্ত কোষের একটা সাব গ্রুপ। অর্থাৎ তার সংক্রমণ মোকাবিলার ক্ষমতা কমে প্রায় শূন্যে দাঁড়িয়েছিল। মেটামাইজোলের সাইড এফেক্ট হিসেবে অ্যাগ্রানুলোসিটোসিস হবার সম্ভাবনা রয়েছে।

ব্যথা চিকিৎসক হিসেবে প্রো. ভল্ফগাং কপার্ট জানান, অ্যাগ্রানুলোসিটোসিস অত্যন্ত বিপজ্জনক ও অত্যন্ত বিরল রোগ হওয়া সত্ত্বেও আসলে কিন্তু সহজেই এর চিকিৎসা করা যায়। সাধারণত তিনটি উপসর্গ দেখে এই রোগ শনাক্ত করা যায়। গলা ব্যথা ও জ্বর হয় এবং মুখ অথবা গলায় সাদা পদার্থ জমা হয়।’

সংক্রমণ থেকে নিকোলাসকে রক্ষা করতে তাকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছিল এবং রক্তে গ্র্যানুলোসাইট বাড়াতে তাকে ইনফিউশন দেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘একটা সময়ে প্রতি মিনিটে উন্নতি টের পেতে লাগলাম। তরল পান, খাওয়া, মাথাব্যথা, কাশি সবকিছু ভালো হতে লাগলো।’

কয়েকদিন পর রোগ নিরাময় হলো। নিকোলাস আবার বাসায় ফিরতে পারলেন। তার ক্ষেত্রে যে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছিল, তা নাকি অন্যান্য পেনকিলার ওষুধের তুলনায় অনেক বিরল।

ডাক্তারদের মতে, ইবুপ্রোফেন বা ডাইক্লোফেনাকের মতো আরো বেশি প্রচলিত ওষুধ আসলে অনেক বেশি বিপজ্জনক। প্রো. কপার্ট বলেন, ‘বছরে আমরা মোটে ৫০ থেকে একশোটি অ্যাগ্রানুলোসিটোসিসের কেস দেখি, যার মধ্যে সামান্য ভগ্নাংশের মৃত্যু হয়। অন্যদিকে ওষুধের দোকানে সহজেই কেনা যায়, এমন ব্যথার ওষুধের কারণে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ব্লিডিং, কার্ডিওভাসকুলার ফেলিয়ার বা কিডনি বিকল হয়ে যায়।’

কখনো করোনারি ধমনী সরু হয়ে যায়, যা হৃদযন্ত্রে রক্তপ্রবাহ সীমিত করে তোলে। তখন হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। ডাক্তাররা ইবুপ্রোফেন ও ডিক্লোফেনাকের সঙ্গে এমন অবস্থার সংযোগ দেখতে পান। যে সব মানুষ অনেক বছর ধরে বিশাল পরিমাণে এমন পেনকিলার খেয়ে চলেছেন, তাদের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।

ডাক্তার হিসেবে ইয়ান স্টর্ক মনে করেন, ‘এর মধ্যে সম্পর্কের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে, কারণ আমরা জানি যে কার্ডিওভাস্কুলার সিস্টেমের উপর এই সব ওষুধ, বিশেষ করে ডাইক্লোফেনাকের অত্যন্ত কড়া পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। হার্ট অ্যাটাকও হতে পারে।’

সে কারণে ডাক্তাররা পেনকিলার ওষুধ সম্পর্কে বার বার সতর্ক করে দেন। নিয়মিত এমন ওষুধ খেলে মৃত্যুও হতে পারে। ফলে লাগাতার ব্যথা থেকে রেহাই পেতে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়াই সেরা পথ।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 10680
  • Total Visits: 1282615
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1668

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ শনিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)
  • ২১শে জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, রাত ১০:৫৩

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
    123
252627282930 
       
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018