অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ২০২১ সালের আগস্ট মাসে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের একটি গাড়িতে মার্কিন ড্রোন হামলায় অন্তত ১২ জন বেসামরিক নাগরিকের নিহত হওয়ার ঘটনাকে কীভাবে ধামাচাপা দেয়া হয়েছিল তা একটি মার্কিন দৈনিকের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
২০২১ সালের ১৫ আগস্ট তালেবানের হাতে রাজধানী কাবুলের পতন ঘটার পর সেখানে আটকে পড়া হাজার হাজার মার্কিন সেনাকে দেশে ফিরিয়ে নেয়া হয়। এ সময় বিগত ২০ বছরে মার্কিন বাহিনীর পক্ষে কাজ করা হাজার হাজার আফগান নাগরিকও কাবুল বিমানবন্দর দিয়ে দেশ ছেড়ে পালাতে থাকেন।
ওই হুলস্থুল পরিস্থিতির মধ্যে ২৯ আগস্ট কাবুল বিমানবন্দরের কাছে একটি টয়োটা করোলা গাড়িতে মার্কিন ড্রোন থেকে নিক্ষিপ্ত ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সাত শিশুসহ ১২ বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হন।
মার্কিন বাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে দাবি করে, তারা উগ্র জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসের (দায়েশের) একটি হামলা ব্যর্থ করে দিয়েছে এবং তাদের গাড়িতে হামলা চালিয়ে একদল জঙ্গিকে হত্যা করেছে। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্য মার্কিন বাহিনী তাদের ভুল বুঝতে পারলেও সে ভুলের কথা স্বীকার না করে মিথ্যা ও বানোয়াট কাহিনী প্রচার করতে থাকে।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের অনুসন্ধানে যা উঠে এসেছে : ওই ড্রোন হামলার তিন দিন আগে কাবুল বিমানবন্দরের একটি প্রবেশপথে শক্তিশালী বোমা হামলায় অন্তত ১২জন মার্কিন সেনাসহ প্রায় ১০০ মানুষ নিহত হয়।এরপর মার্কিন বাহিনী গোয়েন্দা সূত্রে এই তথ্য পায় যে, কাবুল বিমানবন্দরে একই ধরনের আরেকটি হামলা চালাবে আইএস এবং ওই হামলায় সাদা রঙের একটি করোলা গাড়ি ব্যবহার করা হবে।
২১ আগস্ট সকালে কাবুল বিমানবন্দরের কাছে সত্যি সত্যিই সাদা রঙের একটি টয়োটা করোলা গাড়ি দেখতে পায় মার্কিন বাহিনী। সম্ভাব্য আরেকটি বোমা হামলা এড়াতে মার্কিন কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে গাড়িটির উপর ড্রোন হামলার নির্দেশ দেয়।
হামলায় ১২ জন নিরপরাধ বনি আদমের মৃত্যুর পর মার্কিন বাহিনী ‘সাফল্যের সঙ্গে’ একটি সন্ত্রাসী হামলা প্রতিহত করার কৃতিত্ব দাবি করতে থাকে। কিন্তু গাড়িটিতে বেসামরিক নাগরিকদের মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হতে থাকলে মার্কিন বাহিনী প্রাথমিকভাবে ‘এটা হতেই পারে না’ বলে দাবি করে এবং বিষয়টি তদন্ত করে দেখার প্রতিশ্রুতি দেয়।
আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের এ সংক্রান্ত তদন্তের আংশিক বৃত্তান্ত নিউ ইয়র্ক টাইমস জানতে পারে। তাতে বলা হয়েছে, কাবুলে ২১ আগস্টের ড্রোন হামলার কয়েক মিনিটের মধ্যে মার্কিন সামরিক তথ্য বিশ্লেষণকারীরা বলেন, হামলাটি বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হয়ে থাকতে পারে এবং তারা তিন ঘণ্টা পর বলেন, ওই ড্রোন হামলায় অন্তত তিন শিশু নিহত হয়েছে।
কিন্তু প্রকাশে মার্কিন সেনা কর্মকর্তারা তদন্তের এই তথ্য প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকেন। ওই ঘটনার তিন দিন পর মার্কিন সেনাপ্রধান জেনারেল মার্ক মিলি বলেন, ড্রোন হামলাটি ‘যথার্থ’ ছিল এবং হামলায় আইএসের এক জঙ্গি এবং অজ্ঞাত আরো কিছু লোক নিহত হয়েছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা প্রায়ই নানা অজুহাতে এ ধরনের হামলা চালিয়ে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করে। এরপর তারা তাদের গণমাধ্যম ব্যবহার করে সেসব হত্যাকাণ্ডকে বৈধতা দেয়। কিন্তু প্রকারান্তরে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড চালিয়ে মার্কিন বাহিনী চরমভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে যাচ্ছে। আর সেই আমেরিকা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কথিত মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে ধুয়া তুলে সেসব স্বাধীনেচতা দেশের ওপর চাপ সৃষ্টি করে।
Leave a Reply