অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ভারতের ১০৩ জন সাবেক আমলাদের একটি গোষ্ঠী লোকসভার স্পিকার এবং এথিক্স কমিটির কাছে চিঠি লিখে মধ্যপ্রদেশের বিজেপি এমপি প্রজ্ঞা সিং ঠাকুরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানিয়েছেন।
এতে বলা হয়েছে, প্রজ্ঞা সিং ঠাকুর কর্ণাটকের শিবমোগায় একটি বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দেওয়ার সময় হিন্দুদের অস্ত্র রাখার আহ্বান জানিয়েছিলেন। সাবেক কর্মকর্তাদের চিঠিতে বলা হয়েছে, মনে হচ্ছে তিনি তার বিরুদ্ধে আনা ফৌজদারি অভিযোগ এড়াতে চতুরতার সাথে তার শব্দ চয়ন করেছিলেন, কারণ তার বক্তব্যকে যাতে কেবল ‘আত্মরক্ষার’ আহ্বান হিসেবে দেখা যায়। চিঠিতে অভিযোগ করা হয়েছে- তিনি স্পষ্টভাবে হিন্দুদের বলছিলেন যে তাদের অহিন্দুদের আক্রমণের ভয় থাকতে হবে। যদিও ‘মুসলিম’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়নি।
চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন কেন্দ্রীয় সরকারের সামাজিক বিচার বিভাগের সাবেক সচিব অনিতা অগ্নিহোত্রী, রাজস্থানের সাবেক মুখ্য সচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ, কেন্দ্রীয় পরিবহন মন্ত্রকের সাবেক অতিরিক্ত সচিব এসপি অ্যামব্রোস ও অন্যরা। চিঠিতে বলা হয়েছে যে তার উসকানিমূলক বক্তব্যের মাধ্যমে, প্রজ্ঞা ঠাকুর কেবল ভারতীয় দণ্ডবিধির অধীনে বেশ কয়েকটি অপরাধই করেননি, বরং তিনি ভারতের সংবিধানকে সমুন্নত রাখার জন্য সংসদ সদস্য হিসেবে নেওয়া শপথও লঙ্ঘন করেছেন, যা জীবন ও স্বাধীনতার অধিকারের উপর ভিত্তিতে তৈরি।
সামাজিক সংগঠনগুলোর আবেদনের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে : চিঠিতে প্রজ্ঞা ঠাকুরকে এমপি হিসেবে অযোগ্য ঘোষণা করার জন্য লোকসভার স্পিকারের কাছে কিছু সামাজিক সংগঠনের আবেদনের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। যাতে বলা হয়েছে, সাংবিধানিক অনুশীলন গোষ্ঠীতে আমরাও দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে লোকসভার নিয়ম অনুসারে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। চিঠিতে অভিযোগ করা হয়েছে ‘সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক বক্তব্য’ দেওয়া সমাজ অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। শিবমোগা পুলিশ তার বিরুদ্ধে এফআইআর নথিভুক্ত করেছে। আমরা আশা করি তারা দ্রুত আদালতে চার্জশিট দাখিল করবে বলেও সাবেক আমালারা মন্তব্য করেছেন।
হিন্দুত্ববাদী বিজেপি এমপি প্রজ্ঞা সিং ঠাকুর সম্প্রতি কর্ণাটকে ‘হিন্দু জাগরণ বেদিক’ নামে আরএসএসের সঙ্গে যুক্ত একটি সংগঠনের বার্ষিক সভায় দেওয়া বক্তব্যে হিন্দুদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘লাভ জিহাদকারীদের লাভ জিহাদের মতো জবাব দিন। নিজেদের মেয়েদের সুরক্ষিত রাখুন। আপনাদের ঘরে অস্ত্র রাখুন। যদি কিছু না থাকে, তা হলে অন্তত সবজি কাটার ছুরিতে শান দিন। স্পষ্ট বলছি। আমাদের ঘরেও সবজি কাটার চাকু ধারালো হওয়া প্রয়োজন। প্রত্যেকেরই আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। যদি কেউ আমাদের ঘরে ঢুকে আক্রমণ করে, তাদের যোগ্য জবাব দেওয়ার অধিকার রয়েছে আমাদের।’ তার এ ধরণের মন্তব্য প্রকাশ্যে আসার পরেই বিরোধীদল কংগ্রেস ও অন্যরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে।
উগ্রহিন্দুত্ববাদী বিভিন্ন সংগঠন ‘লাভ জিহাদ’ শব্দবন্ধটি ব্যবহার করে। তাদের দাবি, মুসলিম তরুণরা হিন্দু মেয়েদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করে কৌশলে ধর্মান্তর করায়। কিন্তু এর আগে সংসদে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, কোনও কেন্দ্রীয় সংস্থাই ‘লাভ জিহাদ’-এর বিরুদ্ধে কোনও মামলা দায়ের করেনি। আইনেও ‘লাভ জিহাদ’ -এর অস্তিত্ব নেই। বিশ্লেষকদের মতে, কথিত ‘লাভ জিহাদ’ হ’ল- একটি ‘কল্পিত শব্দ’ যা উগ্রহিন্দুত্ববাদী শক্তি দ্বারা হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মেরুকরণের জন্য উদ্ভাবন করা হয়েছে।
Leave a Reply