27 Nov 2024, 02:25 am

বন বিভাগের প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় কক্সবাজারের ইটভাটা গুলোতে দেদারচ্ছে পোড়ানো হচ্ছে বনের কাঠ

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

বশির আলমামুন: কক্সবাজারের আট উপজেলায় চলতি ইটভাটা মৌসুমকে টার্গেট করে বন বিভাগের প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় ইটভাটা গুলোতে প্রতিনিয়ত বনের কাঠ ও লাকড়ী পাচারের মহোৎসব চলছে। বনকর্মকর্তা কর্মচারীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন চোরা কাঠ পাচারকারীদের দেয়া অবৈধ মাশোহারা আদায়ে। এ কারণে কক্সবাজারের উত্তর ও দক্ষিণ বন বিভাগের বিশাল বনভুমি এ খন বৃক্ষ শুন্য হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ২০১১-১২ সালে থেকে পরবর্তী সময়ে সৃজিত বন বাগান এখন ন্যাড়া ভুমি। এ অবস্থায় জড়িতদের বিরদ্ধে তড়িৎ ব্যবস্থা না নিলে জেলার ও পার্শ্ববর্তী এলাকার অবশিষ্ট বনজ সম্পদ নিমিষেই উজাড় হয়ে যাবে বলে বিজ্ঞ মহলের আশংকা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ককসবাজার উত্তর ও দক্ষিন বন বিভাগের সদর এরিয়া সহ সিংহভাগ বনজ সম্পদ সমৃদ্ধ এলাকা হচ্ছে উখিয়া, তুলাতলী, মরিচ্যা, ইনাণী, হোয়াইক্ষ্যং, রাজারকুল, টেকনাফ, নীলা, মছুনী, ইনাণী, ঈদগাঁও রেঞ্জ, মেহেরঘোনা রেঞ্জ, ফুলছড়ি রেঞ্জ, জোয়ারিয়া নালা, বাকখালী, পিএমখালী, মাছুয়াখালী বনবিট, ধলিরছড়া বনবিট, পুর্ণগ্রাম, ঈদগড় ও বাইশারীর ৪ বনবিট। সরকার এসব বনবিটে লোকবল নিয়োগ দিলেও অসাধু কর্মকর্তাদের রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার স্বপ্নই বনজ দ্রব্যের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব কর্মকর্তারা সরকারী বেতন ভাতা ভোগের পরও যথাযথ দায়িত্ব পালনের পরিবর্তে বনখেকো চিহ্নিত ভুমি দস্যূদের সাথে আঁতাত করে বনবিট এলাকার নির্দিষ্ট কিছু পয়েন্ট দিয়ে অদ্যাবধি হরদম মাসিক মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে লাখ লাখ টাকার কাঠ ও লাকড়ী তাদের নাকের ডগার উপর দিয়ে পাচারের সুযোগ করে দিচ্ছে। বিশেষ করে রামু উপজেলার প্রায় ৪০ টি, কক্সবাজার সদরের বাংলাবাজারও খরুরিয়ায় ১০ টি , উখিয়ায় প্রায় ৩০ টি , টেকনাফে ৮টি, ঈদগাওতে ১৫ টি ইট ভাটায় যোগান দেয়া হচ্ছে এসব এলাকার বণের কাঠ।
স্থানীয়দের মতে, পাচারের পয়েন্ট গুলো হচ্ছে ভোমরিয়াঘোনা বনবিটের অধীন ঈদগাঁও- ঈদগড় সড়ক, ঈদগাঁও খাল, ভাদিতলা সড়ক, গজালিয়া সড়ক, মেহেরঘোনা রেঞ্জের কলেজ গেইট সড়ক, কালিরছড়া, মাছুয়াখালী, ধলিরছড়া বনবিটের থলীয়ঘোনা, ঈদগড় বনবিটের অধীন বেন্ডেভাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকা। এসব পয়েন্টে দায়িত্বরত বন কর্মকর্তারা সড়কে গাছের কল বসিয়ে বনজ সম্পদ রক্ষার নামে উল্টো পাচারের জন্য আনা কাঠ ও লাকড়ী ভর্তি গাড়ি প্রতি নির্দিষ্ট হারে উৎকোচ আদায়ের জন্য এলাকার কিছু দালাল প্রকৃতির লোককে নিয়মিত বেতনে নিয়োজিত রেখেছে। এদের খুশি করতে পারলে অবৈধ সব কাঠের পাচার বৈধতা পেয়ে যায়।
মুলত এসব দালালরাই স্ব- স্ব এলাকার বনবিট গুলোকে নিয়ন্ত্রন করে। বিশেষ করে চলতি মৌসুমে উখিয়া, রামু ও বৃহত্তর ঈদগাঁও বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠা ইটভাটা গুলোকে টার্গেট করে সন্ধ্যা নামলেই উক্ত পয়েন্টগুলো দিয়ে বন বিভাগের যোগসাজসে অবৈধ কাঠ ও লাকড়ী ভর্তি চাঁন্দের গাড়ি, ডাম্পার ও ট্রাক গুলো প্রতিযোগিতামূলক ভাবে সরকারী বনজ সম্পদ পাচারের উৎসবে মেতে উঠে।
এসব যানের বেপরোয়া চলাচলে অনেক সময় সড়কের চলাচলকারী পথচারীরা দূর্ঘটনার সম্মুখীন হন। কাঠ পাচারকারীরা মোটা অংকের টাকায় সংশ্লিষ্ট বিভাগকে ম্যানেজ করার পাশাপাশি স্থানীয় শক্তিশালী একটি মহলকে হাতে নিয়ে এ পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে চলতি ইটভাটা মৌসুমের জন্য সংশ্লিষ্ট বন কর্মকর্তাদের সাথে কাঠ পাচারকারীদের গোপনে মোটা অংকের লেনদেন হয়েছেছে বলে জানা গেছে।
সরকারী বন কর্মকর্তারা রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার জন্য পাচারকারীদের বিরদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো এসবের প্রতিবাদকারী স্থানীয় সচেতন জনসাধারণকে রহস্যজনক ভাবে বিভিন্ন সাজানো বন মামলায় হয়রানী করছে বলে ভুক্তভোগী সূত্রে প্রকাশ।
এদিকে এলাকার সচেতন মহল বনজ সম্পদ রক্ষার স্বার্থে এসব দূর্ণীতিবাজ কর্মকর্তাদের বদলী পূর্বক শাস্তির আওতায় আনতে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এছাড়া উল্লেখিত পয়েন্টগুলোতে বিশেষ ঝটিকা অভিযান পরিচালনার জন্য বিজ্ঞ মহল বনবিভাগের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ আনোয়ার হোসেনের মুঠোফোনে একাধিক বার যোগাযোগ করা হলেও তিনি মুঠোফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 11889
  • Total Visits: 1324352
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1668

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ বুধবার, ২৭শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ১২ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)
  • ২৪শে জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, রাত ২:২৫

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
    123
252627282930 
       
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018