22 Nov 2024, 10:49 am

গোপালগঞ্জে সমলয় পদ্ধতিতে  চাষাবাদে ধানের উৎপাদন খরচ বিঘায় ১২ হাজার টাকা সাশ্রয় 

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : গোপালগঞ্জে সমলয় পদ্ধতিতে  যান্ত্রিকীকরণ ও অধুনিক চাষাবাদের  বোরোধানের  উৎপাদন খরচ বিঘায় ১২ হাজার টাকা সাশ্রয় করেছেন কৃষক। এ পদ্ধতির চাষাবাদে তারা ধানের বাম্পার ফলন  পেয়েছেন।
এ পদ্ধতির চাষাবাদে বীজতলা থেকে শুরু করে ধান কাটা,মাড়াই, বস্তাজাত যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়েছে। এ চাষাবাদে কম খরচে কৃষক অধিক ধান উৎপাদন করেছেন। ধানের অধিক ফলন পেয়ে কৃষক লাভবান হয়েছেন । এ চাষাবাদ ছড়িয়ে দিতে পারলে দেশ খাদ্য উৎপাদনে আরো সমৃদ্ধ হবে বলে কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার রাধাগঞ্জ ইউনিয়নের আটাশীবাড়ী গ্রামে সমালয় পদ্ধতিতে উৎপাদিত বোরোধান কম্বাইন হারভেস্টার  দিয়ে কেটে মাড়াই ও বস্তাজাত করে দেওয়া হয়। এ উপলক্ষে আজ বুধবার সকাল ৯টায় আয়োজিত আনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ খামারবাড়ির উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আঃ কাদের সরদার।
কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস ওয়াহিদের সভাপতিত্বে  অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আয়নাল হোসেন শেখ, কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিটুল রায়, রাধাগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান ভীম চন্দ্র বাগ্চী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নিটুল রায় বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৭ জানুয়ারি টুঙ্গিপাড়া সফরে এসে কোটালীপাড়া উপজেলার সমলয় চাষাবাদের উদ্বোধন করেন।  এ চাষাবাদে আমরা রাধাগঞ্জ ইউনিয়নের আটাশীবাড়ী গ্রামের ৮০ জন কৃষককে সম্পৃক্ত করি। এছাড়া কান্দি ইউনিয়নের তালপুকুরিয়া ও ধারাবাশাইল গ্রামের ৬০ জন কৃষক সংগঠিত করি। ওই ৩ গ্রামের মোট ১৪০ জন কৃষকের  ১০০ একর জমিতে এ পদ্ধতির চাষাবাদ হয়। চাষাবাদের শুরুতে আমরা ট্রেতে বীজতলা করেছি। প্রতি বিঘায় প্রচলিত চাষাবাদে হাইব্রিড ধানবীজ ৪ কেজি ও উফশী ধানবীজ ৮ কেজি দিয়ে বীজতলা তৈরি করতে হয়। সেখানে সমলয়ে চাষাবাদে বিঘা প্রতি বীজ খরচ অর্ধেক হয়েছে। বীজে কৃষকের খরচ বেঁচেছে। এ চাষাবাদে রাইস ট্রান্স প্লান্টারদিয়ে ধানের চারা রোপণ করা হয়েছে। এতে বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে মাত্র ১ হাজার ২০০ টাকা। শ্রমিক দিয়ে ধান রোপণ করতে গেলে অন্তত ৬ হাজার টাকা খরচ হত। এছাড়া উইডার মেসিন দিয়ে নিড়ানী দেওয়া হয়েছে। এতে মাত্র ২ জন শ্রমিক লেগেছে। এক্ষেত্রে অন্তত ১০ জন শ্রমিকের মজুরী সাশ্রয় হয়েছে। আটাশীবাড়ীর ধান পাকার পর কম্বাইন হারভেস্টার দিয়ে কেটে মাড়াই করে বস্তাবন্দী করে দেওয়া হয়েছে। এ মেশিন দিয়ে ১ বিঘা জমির ধান কাটতে মাত্র ১ হাজার ৫০০টাকা ব্যয়  হয়েছে। এতে সাশ্রয় হয়েছে অন্তত সাড়ে ৭ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে এ পদ্ধতির চাষাবাদে ধান উৎপাদনে কৃষকের বিঘা প্রতি অন্তত ১২ হাজার টাকা সাশ্রয় হয়েছে। এছাড়া এ পদ্ধতির চাষাবাদে বিঘা প্রতি হাইব্রিড এসএল ৮ এইচ, হীরা-২, ব্রি হাইব্রিড-৩ ও ব্রি হাইব্রিড-৫ জাতে ৩০ মণের স্থলে ৩৫ মণ ধান উৎপাদিত হয়। এ পদ্ধতির চাষাবাদে জমিতে কোন আইল থাকে না। তাই ধানের উৎপাদন বেড়ে যায়।
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, কোটালীপাড়া উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে ২৬ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে জমির আইল রয়েছে প্রায় ১ হাজার ৫০০ হেক্টর। জমির আইল প্রতিবছরই আনাবদি থাকে। সব জমিতে সমলয় পদ্ধতিতে চাষাবাদ হলে ওই ১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি চাষাবাদের আওতায় আসত। এতে এ উপজেলায় আরো ১০ হাজার মেট্রিক টন ধান বেশি উৎপাদন হত।
যান্ত্রিকীকরণ ও অধুনিক চাষাবাদের এ পদ্ধতি সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে পারলে দেশ খাদ্য উৎপাদনে আরো সমৃদ্ধ হবে বলে ওই কৃষি কর্মকর্তা মন্তব্য করেন।
কোটালীপাড়া উপজেলার আটাশীবাড়ী গ্রামের কৃষক মহিউদ্দিন বলেন, এ পদ্ধতিতে চাষাবাদে বীজতলা তৈরিতে অর্ধেক বীজ লেগেছে। এতে বীজ খরচ সাশ্রয় হয়েছে।  রাইস ট্রান্সপ্লান্টার দিয়ে ১ বিঘা জমির ধান আবাদ করেছি। এতে মাত্র ১ হাজার ২০০ টাকা খরচ হয়েছে। নিড়ানী ও ধান কাটা, মাড়াই ও বস্তাজাত করতে নামমাত্র খরচ লেগেছে। প্রতি বিঘা জমিতে ধান উৎপাদনে ১২ হাজার টাকা সাশ্রয় হয়েছে। পাশাপাশি ধানের ফলন বিঘা প্রতি ৫ মণ বেশি পেয়েছি। সুন্দরভাবে ধান ঘরে তুলেছি। তাই ধান চাষ করে লাভবান হয়েছি।
একই গ্রামের কৃষক লায়েক খন্দকার বলেন, নতুন পদ্ধতির চাষাবাদে বীজতলা থেকে শুরু করে ধান বস্তাবন্দী করা হয়েছে যন্ত্রের সাহায্যে। এখানে শ্রমিকের ব্যাহার তেমন নেই বললেই চলে। ধান কাটার মৌসুমে শ্রমিক সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। ধান কাটা শ্রমিককে ১ হাজার টাকা মজুরী দিতে হয়। ধান নিয়ে আমাদের দুশ্চিন্তার শেষ থাকে না। এ চাষাবাদে অধিক ফলন পেয়ে দ্রুত ধান ঘরে তুলতে পেরেছি। আমি এতে খুবই খুশি।
গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণের উপ-পরিচালক আঃ কাদের সরদার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষিকে অধুনিক ও যান্ত্রিকীকরণের উদ্যোগ নিয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রীর নিজ নির্বাচনী এলাকার উন্নয়ন প্রতিনিধি ও অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব মোঃ শহীদ উল্লা খন্দকারের দিক নির্দেশনায় এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহা-পরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ^াসের তত্ত্ববধানে  গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া  সমলয় চাষবাদ কার্যক্রমের আওতায় মোট ১০০ একর জমিতে চাষাবাদ করা হয়। এই পদ্ধতির চাষাবাদে  সব জমিতে ফার্মের আদলে এই জাতের ধান রোপন করা হয়। এ-চাষাবাদে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ হয় না। কীট নাশক খরচ সাশ্রয় হয়। একই সাথে সব জমির ধান  সাথে পাকে। একই সাথে ধান কাটা হয়।  কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস ওয়াহিদের আন্তরিকতায় ও কৃষি কর্মকর্তা নিটুল রায়ের প্রচেষ্টায় কোটালীপাড়ায় এ পদ্ধতির চাষাবাদ সফল হয়েছে। এ পদ্ধতির চাষাবাদে ধানের উৎপাদন খরচ সাশ্রয় হয়েছে। ধানের অধিক ফলন পেয়ে কৃষক লাভবান হয়েছে।তাই আগামীতে এ পদ্ধতিতে চাষাবাদে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, সমলয় চাষ পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে আমরা কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণ করতে একধাপ এগিয়ে গেলাম। সেই লক্ষ্যে আমরা ভর্তুকি মূল্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজ নির্বাচনী এলাকা কোটালীপাড়া উপজেলার কৃষককে কৃষি যন্ত্রপাতি দিচ্ছি। এতে আমরা কৃষকের পক্ষ থেকে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। কৃষি যান্ত্রিকীকরণ হলে ফসলের উৎপাদন খরচ সাশ্রয় হবে। শ্রমিক নির্ভরতা কমবে। কৃষি কাজ করে কৃষক লাভবান হবেন। ২০৪১ সালের মধ্যেই  কৃষকের আয় আমরা দ্বিগুন করে দিতে চাই। সেই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 9600
  • Total Visits: 1267454
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1668

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ শুক্রবার, ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)
  • ১৯শে জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, সকাল ১০:৪৯

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
    123
18192021222324
252627282930 
       
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018