অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের মাধ্যমে নির্ধারিত মূল্যে বাজারে চিনি বিক্রি করা হচ্ছে কি-না তা মনিটরিংয়ে আগামী সপ্তাহ থেকে অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। সেই সঙ্গে পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকলে আমদানি করা হবে বলেও জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার বিকালে মন্ত্রণালয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থনৈতিক ও বৈশ্বিক বিষয়াবলী বিষয়ক ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল হেলেনা কনিগের সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী একথা জানান।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন করে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী খোলা চিনি প্রতি কেজি ১২০ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনি প্রতি কেজি ১২৫ টাকায় ভোক্তাদের নিকট বিক্রি করার জন্য বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনসহ ব্যবসায়ীদের জানানো হয়েছে। তারা এই মূল্যে বাজারে বিক্রি করছে কি-না তা দেখার জন্য জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হবে।
বাজারে পেঁয়াজের দাম অল্পকিছু দিনের ব্যবধানে অনেক বেড়েছে। এ ব্যাপারে সরকারের পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে টিপু মুনশি বলেন, দাম যদি এভাবে বাড়তে থাকে তাহলে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হবে। দেশীয় পেঁয়াজ উৎপাদন পর্যাপ্ত হওয়ায় আমদানি কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাজার পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। যদি পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে তাহলে আমদানি করা হবে।
তেলের মূল্য কমানো হবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, তেলের মূল্য মূলত বৃদ্ধি পেয়েছে ভ্যাট প্রত্যাহারের কারণে। আমরা শুল্কছাড় অব্যাহত রাখার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে এনবিআরকে চিঠি দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা তা করেননি। এ কারণে তেলের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রয়োজনে আমরা আবার চিঠি দেবো। সামনে বাজেট আছে, এটি নিয়ে আমরা কাজ করছি।
এর আগে, ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেলের সঙ্গে বৈঠক সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশের বাজারে ২০৩২ সাল পর্যন্ত এভরিথিং বাট আর্মস-ইবিএ স্কিমের আওতায় বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা অব্যাহত রাখার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
টিপু মুনশি বলেন, বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে প্রায় পাঁচ দশকের অংশীদারিত্ব উন্নয়ন সহযোগিতার মাধ্যমে শুরু হয়েছিল। ইইউর সঙ্গে বর্তমানে একটি শক্তিশালী বাণিজ্য অংশীদারিত্ব তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের মোট বিশ্ব রপ্তানির অর্ধেকের বেশি ইইউভুক্ত দেশগুলোতে যায়।
এলডিসি উত্তোরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছ প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং সহযোগিতা কামনা করেন বাণিজ্যমন্ত্রী। পণ্য বৈচিত্র্য, পণ্যের গুণমান উন্নয়ন, সার্কুলার অর্থনীতি, জ্ঞানভিত্তিক প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, বাণিজ্য আলোচনার জন্য বাণিজ্য কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি, মান ও মান নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠানে প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং বাণিজ্য সম্পর্কিত গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য ইইউ পাশে থাকবে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
টিপু মুনশি জানান, বিশ্বের শীর্ষ ১০ টি সবুজ কারখানার মধ্যে নয়টি এবং শীর্ষ একশোটি সবুজ শিল্প প্রকল্পের মধ্যে ৪৮ টি বাংলাদেশে রয়েছে। আরও ৫৫০টি কারখানা LEED সার্টিফিকেশন পাওয়ার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়া ইউএস গ্রীন বিল্ডিং কাউন্সিল দ্বারা প্রত্যায়িত ১৯২ টি গ্রিন গার্মেন্টস কারখানাও রয়েছে বাংলাদেশে।
এছাড়া বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই শ্রম অধিকার নিশ্চিত করতে টেকসই কমপ্যাক্ট সম্পন্ন করেছে এবং কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ডে কেয়ার ইত্যাদির মতো সামাজিক সম্মতিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে বলেও জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ নেতৃত্বে বাংলাদেশ অর্থ-বাণিজ্য, স্বাস্থ্য-শিক্ষা, অবকাঠামো-যোগাযোগসহ সকল খাতে অভাবনীয় সাফল্য অর্জিত হয়েছে। অনেকগুলো মেগা-প্রজেক্টের কাজ চলমান রয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন বিদেশী বিনিয়োগকারীদের অন্যতম গন্তব্যে পরিণত হয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থনৈতিক ও বৈশ্বিক বিষয়াবলী বিষয়ক ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল মিস হেলেনা কনিগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদূরপ্রসারী নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন তাঁর গৃহীত পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশে অভূতপূর্ব সাফল্য এসেছে। এসময় ডিজিটাল কমার্সসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং বাংলাদেশের পাশে থাকার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন ইইউ ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল ।
সাক্ষাৎকালে ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি এবং মন্ত্রণালয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply